চ্যাম্পিয়ন্স লিগ
দুই লেগ মিলিয়ে ছয়বার বল পোস্টে লাগলেও দুর্ভাগ্যকে দায় দিচ্ছেন না কিলিয়ান এমবাপে, বরং নিজেদের ব্যর্থতা মেনে নিয়ে জয়ের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে।
Published : 08 May 2024, 11:07 AM
এমনিতে সাফল্যের আলোয় মাখামাখি হতে অভ্যস্ত কিলিয়ান এমবাপে। তবে ব্যর্থতার কালোটুকু সঙ্গী করে নিতেও তার আপত্তি নেই। পিএসজি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে উঠতে না পারায় নিজেকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন তিনি। দলের সবচেয়ে বড় তারকার অকপট স্বীকারোক্তি, তিনি যথেষ্ট ভালো খেলতে পারেননি।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালে দুই লেগ মিলিয়ে একটি গোলও করতে পারেননি এমবাপে, পারেনি পিএসজি। প্রথম লেগে ঘরের মাঠে ১-০ ব্যবধানে জয়ী বরুশিয়া ডর্টমুন্ড দ্বিতীয় লেগেও মঙ্গলবার পিএসজির মাঠে জয় পায় একই ব্যবধানে।
প্রথম লেগে বরুশিয়ার মাঠ থেকে হেরে আসার পরও আত্মবিশ্বাসী ছিল পিএসজি। কোচ লুইস এনরিকে বলেছিলেন, ফাইনালে তার দল যাবেই। ঘরের মাঠে সেই তাড়নাও তাদের ছিল। বল তাদের পায়ে ছিল ৭০ শতাংশ সময়। গোলে শট নেয় তারা ৩০টি। কিন্তু আসল কাজেই ব্যর্থ। একবারও বল ঢোকেনি জালে। উল্টো দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে গোল করে বসে বরুশিয়া। ম্যাচজুড়ে দুর্দান্তভাবে রক্ষণভাগ সামলে জার্মান দলটি জিতে নেয় লড়াই।
দুই লেগেই এমবাপে ছিলেন একরকম নিজের ছায়া হয়ে। গোলের জন্য দলের আশা-ভরসার কেন্দ্রে থাকেন তিনিই। কিন্তু তার পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। ম্যাচ শেষে এই ফরোয়ার্ড বললেন, সবটুকু ব্যর্থতা মেনে নিতে তার আপত্তি নেই।
“চেষ্টা করেছি নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে দলকে সহায়তা করতে, কিন্তু যথেষ্ট ভালো করতে পারিনি। বক্সের ভেতর কার্যকারিতার কথা বললে তো আমার দিকেই তাকিয়ে থাকে দল। গোল করতে হলে আমারই করা উচিত, কার্যকর হওয়া উচিত। সবকিছু ভালোভাবে হলে তো প্রাদপ্রদীপের আলো আমার ওপরই পড়ে, ভালো করতে না পারলে দায় আমারই নিতে হবে। এতে সমস্যা নেই।”
“আজকে রাতে প্রথম যদি কারও গোল করা উচিত ছিল, সেটা আমিই। জীবন এরকমই এবং সামনে এগিয়ে যেতে হবে, আমাকে ওদলকেও।”
দ্বিতীয় লেগে চার দফায় বরুশিয়ার পোস্ট আর ক্রসবারেবাধাগ্রস্ত হয়েছে পিএসজির প্রচেষ্টা। দুই লেগ মিলিয়ে মোট ছয়বার বল লেগেছে পোস্টে। তবে এটিকে দুর্ভাগ্যের থাবা মানতে নারাজ এমবাপে। বরং এখানেও নিজেদের ব্যর্থতাই দেখছেন ২৫ বছর বয়সী তারকা।
“দুভার্গ্য নিয়ে কথা বলতে ভালো লাগে না আমার। যথেষ্ট ভালো যদি খেলতাম আমরা, তাহলে বল পোস্টে লাগত না, ভেতরেই যেত। আজকে আমরা আক্রমণভাগের ফুটবলাররা যথেষ্ট ভালো ছিলাম না।”
বল পায়ে রাখার লড়াইয়ে এগিয়ে থাকা মানেই যে প্রতিপক্ষের চেয়ে এগিয়ে থাকা নয়, সেটিও মনে করিয়ে দিলেন এমবাপে। তার মতে, বরুশিয়াই তাদের চেয়ে বেশি কার্যকর ফুটবল খেলেছে।
“জানি না, তারা আমাদের চেয়ে ভালো ছিল কি না। তবে ওদেরকে হেয় করার প্রয়োজন তো নেই। আমার বিনীত মতামত হলো, দুই পাশের বক্সেই তারা আমাদের চেয়ে কার্যকর ছিল। ওরা স্রেফ দু-একবার আমাদের বক্সে এসেছে এবং তাতেই স্কোর করেছে। আমরা অনেকবার তাদের বক্সে গিয়েও গোল করতে পারিনি। এটিই সত্য।”
পিএসজির হয়ে ছয়বার ফরাসি লিগজয়ী তারকার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা এতে অধরাই রইল। ২০১৯-২০ মৌসুমে ফাইনালে তারা হেরেছিল বায়ার্ন মিউনিখের কাছে। তবে তার বিশ্বাস, এই ক্লাব একদিন ইউরোপের সেরা হবেই।
"আমরা অবশ্যই হতাশ। তবে সবকিছুই হতাশাজনক নয়। এবার আমরা সেমি পর্যন্ত এসেছি। এখান থেকেই নিজেদের আরও গড়ে তুলতে হবে এবং কাজ করে যেতে হবে। আমি নিশ্চিত, আমরা একদিন লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব।"
তবে পিএসজি কখনও জিততে পারলেও তখন এমবাপে থাকবেন কি না, এই প্রশ্ন জোরালভাবেই করা যায়।চলতি মৌসুম শেষেই তার পিএসজি ছেড়ে যাওয়ার কথা।
সব গুঞ্জন সত্যি হলে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের জন্য সম্ভাব্য সেরা আশ্রয়েই যাচ্ছেন তিনি। পিএসজির চ্যাম্পিয়ন্স লিগ অভিযান শেষ হওয়ার পর তার দলবদল নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দ্রুতই আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ দিন তাকে জিজ্ঞেসও করা হলো এটা নিয়ে। তবে রেয়াল মাদ্রিদে যাওয়া নিয়ে সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি কিছু বললেন না, স্রেফ চোখ নাচিয়ে হাঁটা দিলেন।