বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটিতে সাক্ষ্যে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তার বিরুদ্ধে আনা ধর্ম অবমাননার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন নারায়ণগঞ্জের স্কুলশিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত।
Published : 25 Oct 2016, 06:15 PM
মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ জেলা ডাক বাংলোতে এই শিক্ষকের সাক্ষ্য দেওয়ার সময়ও আগের দিনের মতোই তার শাস্তির দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছেন সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমানের সমর্থকরা।
সোমবার বন্দর উপজেলার কল্যাণদীর পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির সাক্ষ্য গ্রহণের সময়ও জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্যের সমর্থকরা বিক্ষোভ দেখিয়েছিল।
এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত ১৩ মে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে লাঞ্ছিত করার ঘটনাটি প্রকাশ পেলে দেশজুড়ে নিন্দা-প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়।
ওই ঘটনার ভিডিওতে ওই শিক্ষককে কান ধরে উঠ বসের নির্দেশ দিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে দেখা গেলে তার শাস্তির দাবিও উঠে।
ওই ঘটনা নিয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আসার পর হাই কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেয়।
আদালতের নির্দেশনায় পুলিশ প্রতিবেদন দিলেও সেলিম ওসমানকে ছাড় দিয়ে দায়সারা ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমকে আগামী ৩ নভেম্বরে মধ্যে হাই কোর্টে প্রতিবেদনও দাখিল করতে বলা হয়।
ওই নির্দেশ পেয়ে সিএমএম শেখ হাফিজুর রহমান সোমবার নারায়ণগঞ্জে তদন্তে আসেন। তার সঙ্গে রয়েছেন ঢাকার সিএমএম আদালতের দুই হাকিম গোলাম নবী ও মাজহারুল ইসলাম। তাদেরকে সহায়তা করছেন নারায়ণগঞ্জের মুখ্য বিচারিক হাকিম শহীদুল ইসলাম।
সোমবার পিয়ার সাত্তার লতিফ বিদ্যালয়ে শিক্ষক শ্যামলের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী দশম শ্রেণির ছাত্র, তার মা এবং শিক্ষকসহ মোট ১৯ জনের সাক্ষ্য নেয় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি।
মঙ্গলবার স্থান পরিবর্তন করে নারায়ণগঞ্জ ডাক বাংলোতে দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণে তদন্ত কমিটিতে উপস্থিত হন শিক্ষক শ্যামল, বন্দরের ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ প্রায় ১৫ জন।
বেলা ১১টার দিকে শ্যামল কান্তির সাক্ষ্য নেওয়ার মধ্য দিয়ে তদন্ত কমিটির কাজ শুরু হয়।
আড়াই ঘণ্টা ধরে সাক্ষ্য দেওয়ার পর বেরিয়ে শিক্ষক শ্যামল সাংবাদিকদের বলেন, “আমাকে যে অপমান করেছেন, সেটি আপনারা গণমাধ্যমে দেখেছেন, সেটির সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছি তদন্ত কমিটির কাছে।”
সেদিনের ঘটনা সবিস্তারে তদন্ত কমিটির কাছে তুলে ধরেছেন বলে জানান তিনি।
ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ নাকচ করে তিনি বলেন, “প্রশ্নই উঠে না, এটা অতিরঞ্জিত কথা, এটা পলিটিক্যাল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”
সাক্ষ্যদানকারী অন্যরা হলেন বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী হাবিব, সহকারী পুলিশ সুপার (ক অঞ্চল) মো. মাসুদ, বন্দর থানার ওসি আবুল কালাম, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম, বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এম এ রশিদ, উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুল, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু জাহের, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মতিউর রহমান মিজু, ওইদিনের প্রত্যক্ষদর্শী শাহীন মিয়া, তাজুল ইসলাম, আসাদ মিয়া, আবুল হাশেম ও আবু বক্কর সিদ্দিক।
ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে সেদিন মাইকে ঘোষণা দিয়ে একদল ব্যক্তি শ্যামল কান্তিকে লাঞ্ছিত করার পর বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি তাকে পদচ্যুত করেছিল।
এরপর দেশজুড়ে নিন্দা-প্রতিবাদের মধ্যে দুই দিনের মাথায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে। নিয়মবহির্ভূত সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিল করা হয়।
দীর্ঘদিন ঢাকায় চিকিৎসা নেওয়ার পর গত ৯ জুন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কড়া পুলিশ পাহারায় শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে নগরীর খানপুর এলাকার ভাড়া বাড়িতে দিয়ে যায় পুলিশ।
শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে কথিত নির্যাতিত ছাত্রের মায়ের একটি এবং ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে করা আরেকটি মামলার আরজি নারায়ণগঞ্জের আদালত খারিজ করে দিলেও ওই অভিযোগে তার শাস্তি চেয়ে আসছে একদল।
সোমবারের পর মঙ্গলবারও ডাক বাংলো প্রাঙ্গণে ‘এলাকাবাসী’র ব্যানারে মানববন্ধন থেকে শিক্ষক শ্যামলের শাস্তি দাবি করা হয়।
আরও খবর