‘বেআইনি আদেশ দিয়ে’ বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করানো হচ্ছে অভিযোগ করে ক্ষমতাসীনদের হুঁশিয়ার করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেন।
Published : 14 Dec 2018, 06:52 PM
নির্বাচনী প্রচার থেকে দূরে রাখতে দেশজুড়ে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার-হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করছেন দলটির নেতারা। কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে জোটগতভাবেই আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তারা।
অন্যান্য জোট শরিকদের মতো কামাল হোসেনের দল গণফোরামের নেতারাও বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ওই নির্বাচনের বাকি আছে আর ১৫ দিন।
সে কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়ে কামাল হোসেন বলেছেন, “সরকার ক্ষমতায় আছে ১৫-১৬ দিন। তাদেরকে বলব, বেআইনি আদেশ দেওয়া বন্ধ করুন, আপনারা আইন মেনে চলুন। সরকার আইনের উর্ধ্বে না। জেনে রাখো এই দেশে কোনো সরকার আইনের উর্ধ্বে না।
“এটা হলো স্বাধীনতার অর্থ। এতো লক্ষ শহীদ হয়েছেন, বুদ্ধিজীবীরা শহীদ হয়েছেন। তারা শহীদ হয়েছিল যাতে আমরা মাথা উঁচু করে অধিকার নিয়ে বাঁচব। এই স্বাধীন দেশে ৪৭ বছর পরে দেখতে হচ্ছে- লজ্জা পাওয়া উচিৎ তাদের যারা দেশ শাসন করছেন।
“লজ্জা পাও, লজ্জা পাও, লজ্জা পাও। লজ্জা পেয়ে মুখটা দেখিও না, মুখটা একটু ঢেকে এদিক ওদিকে থেকে ১০-১৫ দিন কাটিয়ে দাও। তোমাদের মুখ দেখব না, যারা এসব অন্যায় কাজ করছে। অবিলম্বে তা বন্ধ কর। ১৫-১৬ দিন আছ, চেষ্টা করো ভালো থাকতে। তারপরে কিন্তু…।”
শুক্রবার সকালে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়ে ফেরার সময় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা নিয়ে বিকালে সংবাদ সম্মেলনে এসে এসব কথা বলেন কামাল হোসেন।
ওই হামলার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে তিনি বলেন, “শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের দিনে সেখানে এই ধরনের ঘটনা, আমাদের প্রতি কী হয়েছে- সেটা আমরা চিন্তা করি না। শহীদদের প্রতি তারা অবমননা করেছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না, এটা সারা দেশের কোটি কোটি মানুষ মেনে নিতে পারে না।”
নির্বাচনের প্রচার শুরুর পর সারা দেশে বিরোধী দলের যেসব নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সবার বিষয়ে তথ্য দাবি করেন কামাল হোসেন।
তিনি বলেন, “পুলিশ কার আদেশে যারা (প্রার্থীরা) আইনানুগভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে, কাজ করছেন তাদের কেন এসে তারা (পুলিশ) চ্যালেঞ্জ করে, বাধা দেয়, কেন গ্রেপ্তার করে? এই অ্যারেস্ট অ্যারেস্ট অ্যারেস্ট। আমি প্রত্যেকটা অ্যারেস্টের তথ্য চাই।
“দেশে এখনো সংবিধান আছে। যে সংবিধানে বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষর এক নম্বর। উনি লিখে দিয়ে গেছে, এদেশের মানুষ আইনের আশ্রয় পাবে। পুলিশ আজকে যেটা করেছে এটা বঙ্গবন্ধুর কথাকে অমান্য করেছে। বঙ্গবন্ধু যেটাকে বলেছে হবে- তোমরা সেটাকে ডিফাই করেছ। তোমরা বঙ্গবন্ধুর কথাকে অমান্য করবে, এই বিজয়ের মাসে অমান্য করবে।”
‘বেআইনি’ আদেশ পালন থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে কামাল হোসেন বলেন, “আমি পুলিশ একাডেমিতে বহু লেকচার দিয়েছি, বেআইনি আদেশ মানা একদম নিষেধ। বেআইনি আাদেশ মানবে না- এটা পুলিশরা জেনে রাখ।
“যারা বেআইনি আদেশ দিচ্ছে এরা চিরস্থায়ী কেউ নয়। ভুলে যেও না। তোমরা তো ৫০-৫৫ বছর বয়স পর্যন্ত কাজ করবে আশা কর। এটা মনে রেখে আজকে যে বা যাহারা আদেশ দেয় তোমাদের এটা সাংবিধানিক কর্তব্য সেই আদেশ আইনানুগ কি না। যদি কোনো লোক আইন ভঙ্গ করছে না, তাকে অ্যারেস্ট করা এটা সংবিধান ভঙ্গ করা। তোমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে বলছি- তোমরা সংবিধান ভঙ্গ করার অপরাধ করিও না।”
সরকারে থেকে যারা ‘বেআইনি আদেশ দিচ্ছে’ তাদের দেশের মানুষ চিহ্নিত করে আগামীতে বিচার করবে বলে হুঁশিয়ারি দেন কামাল হোসেন।
সংবাদমাধ্যমকে দেশের স্বার্থে জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ রেখে তিনি বলেন, “আমার বিশ্বাস, দেশের মানুয়ের প্রতি একশত ভাগ আস্থা আছে, তারা সঠিক বিচার করবে, তারা সংবিধানকে সম্মুন্নত রাখবে, তারা আইনের শাসনকে দেশে ফিরিয়ে আনবে।
“আর যারা এসব অন্যায়-অনিয়ম-অসাংবিধানিক কাজ করছে, তাদের থেকে আমাদের মুক্ত করবে।”
“আমরা নির্বাচন করতে চাই। সিলেটে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। আমাদের প্রার্থীরা প্রচারণায় নামতে পারছে না। আমাদের কর্মীদের এখনো নির্দেশ দিচ্ছি না, সকলকে শান্ত থাকতে হবে সাহসের সাথে মোকাবিলা করতে হবে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর জনগণকে সাথে নিয়ে ব্যালট বিপ্লব করতে চাই, ব্যালটে যুদ্ধ করতে চাই, স্বৈরশাসনকে বিদায় করতে চাই। ”
প্রটোকল ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যদি ফ্ল্যাগ ব্যবহার করতে পারেন তাহলে ড. কামাল হোসেনকে প্রটোকল দিতে হবে।”
তার মতো প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচার নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নারও।
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী তার নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে যাবেন সমস্ত প্রটোকল নিয়ে, এটা তিনি যেতে পারেন না। প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে আমরা বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল প্রত্যাহার করা হোক, মন্ত্রীদের সব প্রটোকল বন্ধ করা হোক, গ্রেপ্তার করা হোক।
“যদি মনে করেন, এ রকম করে নির্বাচনে পার হয়ে যেতে পারবেন- পারবেন না। আমরা নির্বাচন পর্যন্ত আছি ২৯ তারিখ পর্যন্ত মাটি কামড়ে পড়ে আছি। কিন্তু ৩০ তারিখে এই কামড় অন্যদিকে চলে যাবে। ৩০ তারিখে ব্যালটে বিপ্লব হবে।”
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “তারা ঠুঁটো জগন্নাথের মতো হয়ে আছে। কিছুই করেন না সিইসি। তিনি মিন মিন করে বলেন, আমরা বিব্রত। আরে আপনারা স্বাধীন নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। আপনাদের বিব্রত হওয়ার কথা নয়, ক্ষুব্ধ হওয়ার কথা, ব্যবস্থা নেওয়ার কথা।
“আপনারা কি মসজিদের ইমাম না কি। আমি ইসিকে বলব, আজকের ঘটনাসহ গত কয়েক দিনের ঘটনার বিচারের ব্যবস্থা নিন। না নিতে পারলে ব্যর্থতার দায়িত্ব মাথায় নিয়ে তাদের পদত্যাগ করা উচিৎ।”
পুরানা পল্টনের জামান টাওয়ারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। অন্যদের মধ্যে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির আবদুল আউয়াল মিন্টু, জেএসডির আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, রেজা কিবরিয়া, জগলুল হায়দার আফ্রিক, আওম শফিকউল্লাহ, আবু বক্কর সিদ্দিক সাজু উপস্থিত ছিলেন।
পরে ওই কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী সম্মিলিত সাংস্কৃতিক ফ্রন্টের এক আলোচনায় অংশ নেন কামাল হোসেন।