গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে গ্রেপ্তার বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অবসরপ্রাপ্ত মেজর মিজানুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের পুলিশ রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
Published : 27 Jun 2018, 05:42 PM
তার বিরুদ্ধে দায়ের করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলার অপর তিন আসামিকে পাঠানো হয়েছে এক দিন করে রিমান্ডে।
এ মামলায় গ্রেপ্তার আরেক আসামি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে কিশোর আদালত।
পুলিশের রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে ঢাকার মহানগর হাকিম মাজহারুল হক বুধবার এই আদেশ দেন।
মিজানকে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করার পাশাপাশি মো. শফিকুল ইসলাম (৪৩), মো. দিন্নাত (২৬) ও মো. আসাদ আলীকে (২২) এক দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। আর মো. জুনায়েদ হোসেন জয়কে (১৬) পাঠানো হয়েছে টঙ্গীর কিশোর সংশোধনাগারে।
এই পাঁচজনের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানকে সোমবার রাতে তার গুলশানের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন, অর্থাৎ গাজীপুর সিটি করাপোরেশন নির্বাচনের দিন সকালে বাকি চারজনকে আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
তাদের গ্রেপ্তারের পর গোয়ান্দা পুলিশ উত্তর বিভাগের উত্তরা জোনাল টিমের এসআই মো. সাইফুল ইসলাম মঙ্গলবার রাতে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে ধানমণ্ডি থানায় একটি মামলা করেন।
গ্রেপ্তার পাঁচজনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুধবার আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। এ বিষয়ে শুনানি করেন পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই মকবুলুর রহমান।
পুলিশের অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপ কমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,গ্রেপ্তার আসামিদের পক্ষে আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া ও গাজী শাহ আলম শুনানিতে রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করেন।
শুনানি শেষে বিচারক তা খারিজ করে চারজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন বলে জানান তিনি।
সোমবার মধ্যরাতে মিজান গ্রেপ্তার হওয়ার আগে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার কথিত টেলি কথোপকথনের দুটি অডিও ক্লিপ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে।
এর মধ্যে ইউটিউবে আসা একটি অডিওতে দুইজনকে গাজীপুরের ভোট নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়। সেখানে তিনি নির্বাচনের দিন গাজীপুরের কাশিমপুর ইউনিয়নের তিন ভোটকেন্দ্রে ‘আওয়ামী লীগের ব্যাজ ও নৌকার ব্যানার’ নিয়ে ঘুরতে পারবে এরকম তিনজন ছেলে ‘ম্যানেজ’ করতে বলেন।
সেজন্য টাকা পয়সা ও ভোটের দিন ‘যন্ত্রপাতি’ দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয় ওই টেলি আলাপে।
তাকে বলতে শোনা যায়, “যে পোলিং সেন্টারটা, তিনটার ভেতরে যে কোনো একটা, কিন্তু এই পোলিং সেন্টারের পাশে আমাদের কোনো লোকের বাড়ি থাকতে হবে। যে বাড়ির ভেতরে বইসা, জানলার ভেতরে বইসা… দোতলা বাড়ি বাড়ি থাকলে সুবিধা হয়, বুঝাইতে পারছি?”
লোক ভাড়া করা আর বাসা ভাড়া নেওয়ার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করতে শোনা যায় অন্য অডিওতে।
যাকে মিজান বলা হচ্ছে, তাকে বলতে শোনা যায়, “এগুলারে (ভাড়া করা লোক) একটা গাড়ি দিয়া তুমি ঢাকায় চইলা আসবা। আমি ট্রেনিং মেনিং দিয়া ছাইড়া দিব। … বুঝতে পারছো?
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কথোপকথনের অডিও রেকর্ড যাচাই করে তার নিশ্চিত হয়েছেন, সেটা মিজানের কণ্ঠ। এ কারণেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ধানমন্ডি থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, “জনগণের বিভিন্ন শ্রেণিতে দৃশ্যমান শ্রুতিনির্ভর ভুল, ক্ষতিকর উপাত্ত উপস্থাপন করে উস্কানি প্রদান করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও জনগণের মাঝে ভীতি ও সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিয়ে নিজস্ব রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সফল করার জন্য একটি কুচক্রি মহল বিভিন্ন প্রস্ততি গ্রহণ করছে বলে জানতে পারে ডিবিসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা।
“২৬ তারিখে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি ও নাশকতা সৃষ্টির জন্য একটি রাজনৈতিক দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য গ্রেপ্তার প্রধান আসামি মিজানসহ অন্যারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
“সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় যে, ২৫ জুন ধানমণ্ডির কলাবাগান ক্লাবে বসে বিকাল সাড়ে ৪টায় মিজানুর রহমান অন্যদের নিয়ে বৈঠক করে এবং ভোটকেন্দ্রের ব্যালট পেপার দখল করে নৌকায় সিল মেরে সেই দৃশ্য রিস্টওয়াচের ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করে পরে সোশাল মিডিয়ায় প্রচারের দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেয়।”
ওই অডিওর বিষয়ে মিজানের বক্তব্য এখনও জানা যায়নি। তবে তার দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেছেন, মিজানকে ‘গুম করতে না পেরে’ তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের উদ্দেশ্যে ‘কাল্পনিক অডিও ক্লিপ’ ছাড়া হয়েছে।