২০১২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর। ভিতালি নোভস্কি ও আর্তিয়েম নেভাচিনক। রাশিয়ার দুজন সৌখিন জ্যোতির্বিদ। চোখ লাগিয়ে ছিলেন দুরবিনে। দুরবিনেই আবিষ্কার করে ফেললেন একটি ধূমকেতু।
Published : 15 Nov 2013, 05:35 PM
পরে গবেষণা করে দেখা গেল, হ্যাঁ, তারা সত্যিই নতুন একটা ধূমকেতু আবিষ্কার করে বসেছেন। ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্টিফিক অপটিক্যাল নেটওয়ার্ক (আইসন) এর নাম থেকে ধূমকেতুটির নাম দেওয়া হল ‘আইসন’।
রাশিয়ায় যে ধূমকেতু দেখা গেছে, তা নিয়ে আমাদের মাতামাতির কী আছে? আছে; কারণ, আইসনকে দেখা গেছে বাংলাদেশ থেকেও। আর এর কৃতিত্ব অনুসন্ধিৎসু চক্রের জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের।
বিভাগটির সভাপতি শাহজাহান মৃধা বেনু। তারা প্রায় মাস দেড়েক চেষ্টা চালিয়ে টেলিস্কোপের সাহায্যে নির্ণয় করেছে ধূমকেতুটির অবস্থান। আইসন এখন অবস্থান করছে ভোরের পূর্বাকাশে কন্যারাশি তারাম-লের জপজবা তারার একটু নিচে, ডানদিকে।
সবচেয়ে উজ্জ্বল ধূমকেতু
আইসনকে বলা হচ্ছে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে উজ্জ্বল ধূমকেতু। সাম্প্রতিক কালে যে ধূমকেতুগুলো দেখা গেছে, তার মধ্যে এই আইসনই সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে ধরা দিয়েছে জ্যোতির্বিদদের চোখে। আর ধীরে ধীরে এর উজ্জ্বলতাও বাড়ছে। ধূমকেতুটি যেভাবে দিনদিন উজ্জ্বল হচ্ছে, তাতে বিজ্ঞানীদের ধারণা, নভেম্বরের শেষ নাগাদ এটি খালি চোখেই দেখা যাবে।
আগামীতে যে সব ধূমকেতু দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তার মধ্যেও আইসন সবচেয়ে উজ্জ্বল বলে প্রমাণিত হবে বলেও ধারণা জ্যোতির্বিদদের।
বাংলাদেশে আইসন
আইসন সবচেয়ে উজ্জ্বল ধূমকেতু, তাতে আমাদের তেমন আনন্দ নেই। আমাদের আনন্দের কারণ অন্য-- বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো আলোচিত এই ধূমকেতুটি শনাক্ত করা গেছে। এমনকি ধূমকেতুটির ছবি তোলা গেছে। আর এ সাফল্য অনুসন্ধিৎসু চক্রের জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের।
এ জন্য অনুসন্ধিৎসু চক্রের জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি শাহজাহান মৃধা বেনুর নেতৃত্বে একটি দল কাজ শুরু করে। প্রথম পর্যায়ে তারা আকাশ পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প বসায় ৩ নভেম্বর রবিবার ভোর পাঁচটায়, মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার শিশুলিয়া গ্রামে। গ্রামটির অবস্থান ৯০ ডিগ্রি ১৮ মিনিট পূর্ব অক্ষাংশ ও ২৩ ডিগ্রি ২৮ মিনিট উত্তর দ্রাঘিমাংশ। সেখান থেকেই আইসনকে শনাক্ত করা হয়। ক্যামেরা দিয়ে ছবিও তোলা হয়।
দ্বিতীয় পর্যায়ে অনুসন্ধিৎসু চক্রের কর্মীরা মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার খইরা গ্রামে পরবর্তী ধূমকেতু পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প বসান। সেই ক্যাম্প থেকে অনুসন্ধিৎসু চক্রের ৮ ইঞ্চি মিড ক্যাসিগ্রেইন টেলিস্কোপ ও ক্যানন ফাইভ ডি ক্যামেরা দিয়ে ধূমকেতুটির ছবি তুলতে সক্ষম হন তারা। ছবির এক্সপোজার ছিল-- ৩ মিনিট।
এখন, প্রশ্ন হল, এই ছবির ধূমকেতুটিই আইসন কিনা? সে ব্যাপারে আরও নিশ্চিত হতে ছবিটি পাঠানো হল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সংস্থার কাছে। ১০ নভেম্বর সকালে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, বাংলাদেশ থেকে তোলা ছবির ধূমকেতুটিই আইসন।
আসলেও সবচেয়ে উজ্জ্বল?
আইসনের উজ্জ্বলতা সম্পর্কে বিভিন্ন মহল থেকে যে রকম ভবিষ্যদ্বাণী করা হচ্ছিল, ধূমকেতুটি আদতে তেমন উজ্জ্বল অবশ্য নয়। খালি চোখে তো নয়ই, বাইনোকুলার দিয়েও এখনও আইসন দেখা যাচ্ছে না। তবে ধীরে ধীরে এর উজ্জ্বলতা ঠিকই বাড়ছে।
২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর এই ধূমকেতুটি সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি অনুসর বিন্দুতে থাকবে। সে সময় আইসন সূর্য পৃষ্ঠের মাত্র ১.১ মিলিয়ন বা ১১ লক্ষ কিলোমিটার উপর দিয়ে পার হবে। অনুসর বিন্দু পার হওয়ার পর সন্ধ্যার আকাশে দুই গোলার্ধ থেকে একে দেখা যাবে পশ্চিম আকাশে। আর ২৬ ডিসেম্বর ধূমকেতুটি পৃথিবীর সবচেয়ে কাছ দিয়ে যাবে।
প্রস্তুতি নিচ্ছে অনুসন্ধিৎসু চক্র
এদিকে অনুসন্ধিৎসু চক্রও প্রস্তুত। তারা আইসনকে ভালো মতো দেখে নেওয়ার শেষ সুযোগটাও হাতছাড়া করতে রাজি নন। আইসন পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। চাইলে তোমরা যেতে পার। যোগাযোগ করতে হবে এই নম্বরে-- ০১৬৮০০৮১৯৫৪, ০১৭১২৯৬৫৩৯৯।