বিশ্বে টিকা উৎপাদনকারী সবচেয়ে বড় কোম্পানি সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইনডিয়ার কাছে যেসব দেশ ও সরকার করোনাভাইরাসের টিকা চাইছে, তাদের সবাইকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সিইও আদর পূনাওয়ালা।
Published : 22 Feb 2021, 10:31 AM
রোববার এক টুইটে তিনি বলেছেন, টিকা রপ্তানি করার ক্ষেত্রে ভারতের নিজস্ব চাহিদাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ‘নির্দেশনা’ রয়েছে। ফলে অন্য দেশে রপ্তানি হয়ত বিলম্বিত হতে পারে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, কার তরফ থেকে সেরাম ইনস্টিটিউট ওই নির্দেশনা পেয়েছে, সিইও তা বলেননি। এ প্রশ্নে তার কোম্পানির কোনো মন্তব্যও পাওয়া যায়নি ।
Dear countries & governments, as you await #COVISHIELD supplies, I humbly request you to please be patient, @SerumInstIndia has been directed to prioritise the huge needs of India and along with that balance the needs of the rest of the world. We are trying our best.
— Adar Poonawalla (@adarpoonawalla) February 21, 2021
প্রতিবছর বিশ্বে যে পরিমাণ টিকা উৎপাদন হয়, তার তিন-পঞ্চমাংশ সরবরাহ করে ভারত। আর ১৩০ কোটি মানুষের দেশে ভারতেই এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকাদান কার্যক্রমটি চলছে।
এমনিতে বছরে গড়ে ৩৯ কোটি মানুষকে হাম ও যক্ষ্মার টিকা দেওয়ার অভিজ্ঞতা ভারতের আছে। কিন্তু বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নিতে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।
মধ্য জানুয়ারিতে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম শুরুর পর এখন পর্যন্ত সেখানে মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশকেও টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।
ভারতে ইতোমধ্যে ১ কোটি ৯ লাখের বেশি মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সংক্রমণের দিক দিয়ে বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের পরই ভারতের অবস্থান।
দেশটির ওষুধ খাতের নিয়ন্ত্রণক সংস্থা এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের দুটি টিকার অনুমোদন দিয়েছে।
এর মধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকা ভারতে উৎপাদন এবং কোভিশিল্ড নামে বাজারজাত করছে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইনডিয়া। আর ভারতীয় কোম্পানি ভারত বায়োটেক তাদের টিকা বাজারজাত করছে কোভ্যাক্সিন নামে।
যুক্তরাষ্ট্রের নোভাভ্যাক্সের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকাও উৎপাদন করতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউট। তবে ওই টিকা এখনও অনুমোদনের অপেক্ষায়।
সেরাম ইনস্টিটিউট এখন প্রতিদিন গড়ে ২৪ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা উৎপাদন করছে। ভারত সরকারের পাশাপাশি ব্রাজিল, মরক্কো, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকাতেও টিকা সরবরাহ করছে তারা।
এর মধ্যে জানুয়ারিতে প্রথম চালানের ৫০ লাখ ডোজ হাতে পাওয়ার পর সারা দেশে গণ টিকাদান শুরু করেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় চালানের টিকা সোমবারই দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি কোভ্যাক্সকেও ২০ কোটি ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়ার কথা রয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউটের। ভবিষ্যতে আরও ৯০ কোটি ডোজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়ে রেখেছে আদর পূনাওয়ালার কোম্পানি।
বিশ্বজুড়ে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোও যাতে টিকা পায়, তা নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও গ্যাভির নেতৃত্বে কোভ্যাক্স নামের এই প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হয়েছে। যেসব দেশের টিকা কেনার সামর্থ্য নেই তারা বিশেষ তহবিলের আওতায় কোভ্যাক্স থেকে বিনামূল্যে টিকা পাবে মোট জনসংখ্যার একটি অংশের জন্য। বাকিদের টিকা কিনে নিতে হবে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, সেরাম ইনস্টিটিউটের সিইওর ধৈর্য ধরার আহ্বানের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে তারা কোভ্যাক্সের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল, তবে উত্তর মেলেনি।
আরও কয়েকটি কোম্পানি করোনাভাইরাসের টিকা তৈরি করলেও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েই আগ্রহ বেশি, কারণ এর দাম তুলনামূলক কম এবং সংরক্ষণ পদ্ধতি সহজ।