জেসন রয়ের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি। জস বাটলারের ব্যাটেও ঝড়। প্রথম ৫ জুটিতেই পঞ্চাশের রেকর্ড। যোগফলেও ইংল্যান্ডের রেকর্ড সংগ্রহ। তবে অসাধারণ ব্যাটিংয়ে সেটিকেও চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন শন মার্শ। আশা জাগিয়েছিলেন অভাবনীয় এক জয়ের। শেষ পর্যন্ত পারেননি মার্শ, পারেনি অস্ট্রেলিয়া। সিরিজ জয়ের পথে ইংল্যান্ড এগিয়েছে আরেক ধাপ।
Published : 17 Jun 2018, 01:55 AM
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়াকে ৩৮ রানে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। ৫ ম্যাচ সিরিজে এগিয়ে গেছে ২-০তে।
কার্ডিফে শনিবার ৫০ ওভারে ইংলিশরা করেছিল ৩৪২ রান। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে তাদের রেকর্ড স্কোর। অস্ট্রেলিয়ানরা থমকে গেছে ৩০৪ রানে।
ক্রীড়ায় অস্ট্রেলিয়ানদের জন্য দিনটি ছিল সব মিলিয়ে হতাশার। ক্রিকেট দলের হারের আগে একই দিনে বিশ্বকাপ ফুটবলে হেরেছে তারা ফ্রান্সের কাছে। রাগবিতে হেরেছে আয়ারল্যান্ডের কাছে।
জয়-পরাজয়ের ব্যবধান যতটা বলছে, ম্যাচটি আসলে ছিল তার চেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ। শেষ ৩০ বলে ৫৩ রান দরকার ছিল অস্ট্রেলিয়ার। সেঞ্চুরিয়ান মার্শ তখন খেলছিলেন দুর্দান্ত, টিম পেইনও শুরু করেছিলেন ভালো।
কিন্তু শেষের দিকে আবারও পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন লিয়াম প্লাঙ্কেট। এক ওভারেই ফেরান মার্শ ও পেইনকে। আর খুব বেশি এগোতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া।
পিঠের চোটে এদিন ইংল্যান্ড পায়নি অধিনায়ক ওয়েন মর্গ্যানকে। তাতে ব্যাটিং খুব একটা সমস্যায় পড়েনি।
টস হেরে ব্যাটিং পাওয়া ইংলিশদের ভালো শুরু এনে দেন জনি বোয়ারস্টো ও রয়। ৬৩ রানের উদ্বোধনী জটি গড়েন দুজন। দারুণ ফর্মে থাকা বেয়ারস্টো ৪২ করেছেন ২৪ বলে।
মর্গ্যান না থাকায় ব্যাটিং অর্ডারে নিজেকে পাঁচে তুলে আনেন এই ম্যাচের অধিনায়ক বাটলার। রয়ের সঙ্গে তার জুটিতেও আসে ৬০ রান।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গত জানুয়ারিতে ১৮০ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেছিলেন রয়। এরপর ১০ ইনিংসে ফিফটি নেই। আবার সেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই করলেন সেঞ্চুরি। ৯৭ বলে ছুঁয়েছেন তার পঞ্চম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। ১২ চার ও ২ ছক্কায় ১২০ রানে ফিরেছেন ১০৮ বলে।
রয় ফিরে গেলেও জুটির ধারাবাহিকতা থামেনি। পঞ্চম উইকেটে স্যাম বিলিংসের সঙ্গে বাটলারের জুটি ৫০ রানের।
প্রথম পাঁচ উইকেটেই অর্ধশত রানের জুটি এই প্রথম দেখল ওয়ানডে ক্রিকেট।
ওই সময়টায় মনে হচ্ছিল, সাড়ে তিনশ পেরিয়ে আরও দূর ছুটবে ইংল্যান্ড। কিন্তু ভালো বোলিং-ফিল্ডিংয়ে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায় অস্ট্রেলিয়া।
তবে বাটলার ছিলেন টিকে। ৭০ বলে ৯১ রানের অধিনায়কোচিত ইনিংসে দলের রানকে নিয়ে যান সাড়ে তিনশর কাছে।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের আগের সর্বোচ্চ ছিল ৩৩৩। ২০১১ সালে সেই ম্যাচে শেষ পর্যন্ত হেরেছিল ইংলিশরা। এবারও শঙ্কা জেগেছিল তেমন কিছুর।
ইনিংসের মাঝপথে যদিও অনেকটাই দিশাহারা ছিল অস্ট্রেলিয়া। ২১তম ওভারে ১১০ রানের মধ্যে পড়েছিল ৪ উইকেট।
তিন নামা মার্শ চেষ্টা করেছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর। কিন্তু ৩১ রানে ম্যাক্সওয়েলের বিদায়ে ভাঙে ৫৪ রানে জুটি।
রান আসছিল দুই পাশ থেকেই। মার্শের পাশাপাশি দারুণ কিছু শট খেলেছেন অ্যাগারও। জুটি যখন সেঞ্চুরির কাছে, ফিফটির কাছে অ্যাগার, তখনই ছন্দপতন। আদিল রশিদের বলে ৪৬ রানে স্টাম্পড হলেন অ্যাগার।
মার্শ এরপরও চেষ্টা করছিলেন। ২০১৩ সালের পর দেখা পান প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরির। ছুটছিলেন সেঞ্চুরির পরও।
শেষ পর্যন্ত পেরে উঠলেন না প্লাঙ্কেটের সঙ্গে। ১০ চার ও ৩ ছক্কায় ১১৬ বলে ১৩১ রানে ফিরলেন মার্শ। শেষ হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়ার আশাও।
সাম্প্রতিক সময়ে ইংল্যান্ডের সফলতম ওয়ানডে বোলার প্লাঙ্কেট এদিনও কার্যকরি বোলিংয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। সেঞ্চুরির জন্য যদিও ম্যাচ সেরা রয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৪২/৮ (রয় ১২০, বেয়ারস্টো ৪২, হেলস ২৬, রুট ২২, বাটলার ৯১*, বিলিংস ১১, মইন ৮, উইলি ১১, প্লাঙ্কেট ১, রশিদ ০*; ঝাই রিচার্ডসন ২/৬৪, কেন রিচার্ডসন ২/৫৬, অ্যাগার ০/৫২, স্টয়নিস ১/৬০, টাই ২/৮১, শর্ট ০/২৪)
অস্ট্রেলিয়া: ৪৭.১ ওভারে ৩০৪ (হেড ১৯, শর্ট ২১, মার্শ ১৩১, স্টয়নিস ৯, ফিঞ্চ ০, ম্যাক্সওয়েল ৩১, অ্যাগার ৪৬, পেইন ১৫, টাই ১০, ঝাই রিচার্ডসন ২, কেন রিচার্ডসন ০*; উইলি ০/৪০, উড ১/৫৭, প্লাঙ্কেট ৪/৫৩, মইন ২/৪৭, রুট ০/২৪, রশিদ ৩/৭০) ।
ফল: ইংল্যান্ড ৩৮ রানে জয়ী
সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজে ইংল্যান্ড ২-০ তে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: জেসন রয়