অমর হয়ে থাকার জন্য সবসময় অসাধারণ কীর্তি গড়া জরুরি নয়। কখনও কখনও কীর্তির সাক্ষী বা শিকার হলেও যথেষ্ট। স্যার গ্যারি সোবার্সের ব্যাটে ওভারে ছয় ছক্কা হজম না করলে ম্যালকম ন্যাশকে কজন মনে রাখতেন। গ্যারেথ ব্যাটি যেমন ‘জীবন্ত’ ব্রায়ান লারার রেকর্ডে!
Published : 16 Sep 2016, 08:01 PM
বাংলাদেশ সফরের ডাকে রোমাঞ্চিত ব্যাটি
বাংলাদেশ সফরে ইংল্যান্ড টেস্ট দলে ৩ নতুন মুখ
প্রস্তুতির জন্য আগেই বাংলাদেশে আসবেন কুক
৭ টেস্টে ১১ উইকেট, ব্যাটিকে মনে রাখার কারণ নেই। কিন্তু লারার সৌজন্যে বারবার উঠে আসে ব্যাটির নাম। ২০০৪ সালে অ্যান্টিগায় এই অফ স্পিনারকে টানা দুই বলে ছক্কা ও চার মেরেই টেস্টে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড পুনরুদ্ধার করেছিলেন লারা। তার বলে সিঙ্গেল নিয়েই টেস্টে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ছুঁয়েছিলেন ৪০০ রানের মাইলফলক।
সেই ব্যাটি ক্যারিয়ার সায়াহ্নে সুযোগ পেলেন নিজেই কিছু করে স্মরণীয় হয়ে থাকার। জায়গা পেয়েছেন বাংলাদেশ সফরের টেস্ট দলে। বাংলাদেশে প্রথম টেস্টের আগেই বয়স পূর্ণ হবে ৩৯। এই বয়সেই কিনা ক্যারিয়ার পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ!
এমনিতে তার ক্যারিয়ারে বাংলাদেশ জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। ২০০২ ও ২০০৩ সালে সারের ইংলিশ কাউন্টিতে দারুণ দুটি মৌসুম কাটানোর পর সুযোগ পেয়েছিলেন ২০০৩ সালের বাংলাদেশ সফরে। সেই সফরে স্বপ্নের টেস্ট ক্যাপও পেয়ে যান।
বাংলাদেশ সফরের পরই ৩টি টেস্ট খেলেছেন শ্রীলঙ্কায়। পরের বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে বেদম প্রহার হজম করলেন লারার ব্যাটে। ম্যাথু হেইডেনের কাছে হারানো রেকর্ড পুনরুদ্ধারের মুহূর্তটির জন্য ব্যাটিকেই বেছে নিলেন লারা। প্রথমে মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা, পরের বলে সুইপ করে চার মেরে ছাড়িয়ে গেলেন হেইডেনের ৩৮০ রান। খানিকপর ব্যাটির বলেই আরেকটি সুইপে সিঙ্গেল নিয়ে লারা স্পর্শ করলেন ৪০০। ধারাভাষ্যকার বললেন, “পারহ্যাপস দা মোস্ট সিগনিফিকেন্ট সিঙ্গেল এভার ইন দা হিস্ট্রি অফ টেস্ট ম্যাচ ক্রিকেট।”
সেই টেস্টে ১৮৫ রান দিয় ব্যাটির উইকেট দুটি। খেসারত দিতে হলো জায়গা হারিয়ে। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ গেল ইংল্যান্ড সফরে। আবার ডাক পড়ল ব্যাটির। সেবার পেসারদের দাপট আর বাংলাদেশের ভঙ্গুর ব্যাটিংয়ে প্রথম টেস্টে বোলিংয়ের সুযোগই হলো না ব্যাটির। পরের টেস্টেও করতে পারলেন না দারুণ কিছু। ব্যাটিকে নিয়ে ইংলিশ নির্বাচকদের ধৈর্য্যের শেষ ওখানেই।
তবে ধৈর্য্য হারাননি ব্যাটি। কাউন্টিতে খেলে গেছেন। ধারাবাহিকও ছিলেন। তবে আবার নির্বাচকদের নজর কাড়া বা টেস্ট দলের আশেপাশে আসার মতো চোখধাঁধানো মৌসুম ছিল না। ক্রমেই তাই টেস্ট ক্রিকেট থেকে আরও দূরে সরে গেছেন ব্যাটি। বয়সও থেমে থাকেনি। ৭ ম্যাচে ১১ উইকেটেই তাই তার ক্যারিয়ারের ‘এপিটাফ’ লিখে ফেলেছিলেন অনেকেই। ব্যাটি নিজেও নিশ্চয়ই এমন কিছুর আশা জোর দিয়ে করেননি।
ইংল্যান্ডের আরেকটি বাংলাদেশ সফর সেই ব্যাটির জন্য বয়ে আনল আনন্দময় বিস্ময়। সারের হয়ে এবার কাউন্টিতে নিয়েছেন ৪১ উইকেট। অসাধারণ কিছু নয়। তবে বাংলাদেশের পর ভারত সফরের জন্য স্পিন বিকল্প বাড়ানোর ভাবনাতেই ডাক পড়ল ‘বুড়ো’ ব্যাটির। স্কোয়াডের চার স্পিনারের একজন তিনি। বাংলাদেশে সুযোগ পেলে এবং ভালো করলে সুযোগ মিলবে ভারত সফরেরও।
শেষ বেলায় সুযোগ ক্যারিয়ারে নতুন প্রাণ দেওয়ার, নতুন রঙ ছড়ানোর। লারার রেকর্ডের ‘শিকার’ হিসেবে নয়, ব্যাটি সুযোগ পাচ্ছেন নিজেই কোনো কীর্তি গড়ে স্মরণীয় হয়ে থাকার!