বর্ষবরণ উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যৌন নিপীড়নের ঘটনার কয়েকজনকে ‘ধরার’ কথা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সংসদকে বললেও পুলিশের কথায় তার সমর্থন মেলেনি।
Published : 06 Jul 2015, 04:46 PM
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম সোমবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।”
এর কয়েক ঘণ্টা আগে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “চিহ্নিত ব্যক্তিদের (ধরার বিষয়ে) আমাদের আইজি সাহেব (পুরস্কারের ) ঘোষণাও দিয়েছেন। কয়েকজনকে আমরা ধরেছি। তাদের আইনের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। দুই-একজন বাকি আছে। তাদেরও ধরব।”
গত ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের উৎসবের সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে ভিড়ের মধ্যে একদল যুবক নারীদের ওপর চড়াও হয়।
তাতে বাধা দিতে গিয়ে আহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লিটন নন্দীসহ কয়েকজন।
সে সময় চার নিপীড়ককে ধরে দুই পুলিশ কর্মকর্তার কাছে দেওয়া হলেও পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। পরে পুলিশের পক্ষ থেকেও বিষয়টি স্বীকার করা হয়।
ওই ঘটনায় পুলিশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। এক মাসেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে না পেরে ছবি ও ভিডিও দেখে চিহ্নিত আটজনের পরিচয় শনাক্ত করার জন্য গত ১৭ মে ১ লাখ টাকা করে পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়।
ওই ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে- তা উচ্চ আদালতও জানতে চেয়েছিল।
এ বিষয়ে রুল পাওয়ার পর গত ১৯ মে পুলিশের মহাপরিদর্শক আদালতে একটি প্রতিবেদন দেন। তবে ওই প্রতিবেদনে কী আছে, তা গণমাধ্যমকে জানানো হয়নি।
সোমবার সংসদে প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের পর এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই ঘটনার পর বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে কয়েকজনের ছবি প্রচার করে তাদের দোষী বলা হয়। কিন্তু এদের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী এসে আমাদের বলেছে, তারা ঘুরতে গিয়েছিলেন, নিপীড়নে জড়িত নন। আমরাও এর সত্যতা পেয়েছি।”
মনিরুল জানান, নিপীড়নে জড়িত একজনের সম্পর্কে তথ্য পেয়ে পুলিশ বরিশালে তার বাড়িতেও গিয়েছিল। কিন্তু সেখানে গিয়ে এক বৃদ্ধকে পাওয়া যায়; গত পাঁচ বছরের মধ্যে তিনি ঢাকায় আসেননি।
গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার শেখ নাজমুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুরস্কার ঘোষণা করা হলেও এখন পর্যন্ত কারও কাছ থেকে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।”
গোয়েন্দা পুলিশের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে প্রতিমন্ত্রী কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইজিপি এবং থানা পুলিশের মাধ্যমে যা তথ্য পাওয়া গেছে, তাই সংসদে বলা হয়েছে।
“ওই ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে, কাউকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, আবার অনেককে আদালতে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে কেউ কারাগারেও গেছে। তবে সবাই সন্দেহভাজন।”
বর্ষবরণে নির্যাতনের ঘটনা গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছে, ফলে গ্রেপ্তার হলে তাদের তো জানার কথা- এ কথা বলা হলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “গোয়েন্দা পুলিশ তো তাদের গ্রেপ্তার করেনি। আর গ্রেপ্তার করলেও তারা থানা পুলিশকে দিয়ে দেয়।”
এর আগে গত ২০ জুন শাহবাগ থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিকের কাছে এই ঘটনার তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “এ ঘটনাটি গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছে।
“আমি এ থানায় যোগ দেওয়ার আগেই ঘটনা ঘটেছে এবং গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে। আমি যোগ দেওয়ার আগে কেউ গ্রেপ্তার হয়ে থাকলে আমার জানা নেই।”