এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন সবার আগে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট প্রয়োগে নতুন ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস।
Published : 29 Nov 2018, 07:19 PM
মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সম্প্রীতি বাংলাদেশ আয়োজিত ‘আসন্ন জাতীয় নির্বাচন: নতুন প্রজন্মের কাছে প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তরুণদের উদ্দেশে দুই বাংলার জনপ্রিয় এই নায়ক বলেন, “তোমরা রেস্টুরেন্টে গেলে ছবি তুলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো। সেভাবে ৩০ তারিখেও সবার আগে গিয়ে তোমরা ভোট দিবে।
“হাতে যে কালো দাগ দেওয়া হয়, সেটাসহ সেলফি তুলে ফেইসবুকে দিবে। এটা হবে তোমার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।”
তরুণ ও নতুন ভোটারদের ভোট যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও উন্নয়নের পক্ষের বাক্সে যায় সে আহ্বান জানান ফেরদৌস।
নির্বাচন কমিশনের হিসাবে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ১০ কোটি ৪১ লাখ ভোটারের মধ্যে ৪৩ লাখই নতুন ভোটার। ১৮ থেকে ২৮ বছর বয়সী ভোটার সংখ্যা ২ কোটি ১৫ লাখ, যা মোট ভোটারের প্রায় ২১ শতাংশ।
এই তরুণদের ভোটদানে উৎসাহিত করতে ‘বড়দের’ দায়িত্ব নিতে হবে বলে মনে করেন ফেরদৌস।
তিনি বলেন, “সেদিন আমাদের সতর্ক থাকতে হবে; এই তরুণ ভোটার যারা, এরা অনেক বেশি ইমোশনাল, অনেক বেশি নাজুক। ওদেরকে আমাদের অনেক বেশি উৎসাহিত করতে হবে।
“যাদের বয়স ২৫-২৬ তাদেরকে পরিবর্তন করা আমাদের পক্ষে দুরূহ। কারণ সে অলরেডি ঠিক করে রেখেছে, নৌকার পক্ষে ভোট দিবে না বিপক্ষে। এদের ভাবনাকে পরিবর্তন করার চেষ্টা কম করে, এই যে একেবারে তরুণদের ভাবনা পরিবর্তনের এবং সঠিকভাবে ভাবানোর চেষ্টা করি।”
উন্নয়নের যে ধারাবাহিকতা চলছে সরকার পরিবর্তন হলে তা ‘বন্ধ হয়ে যাবে’ বলে মন্তব্য করেন ফেরদৌস।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখার জন্য এখন বড় কোনো পণ্ডিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা চোখ খোলা রাখলেই দেখতে পারি, চারিদিকে কী উন্নয়ন। কিন্তু উন্নয়নগুলো বন্ধ হয়ে যাবে, যদি বর্তমান সরকার ক্ষমতায় না আসে।”
এই অভিনেতার মতে, অন্য কোনো সরকার এলে শুধু নিজেদের গোছাতেই তাদের ‘২০ বছর লেগে যাবে’।
সরকার সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছে বলে এখন সরকারি চাকরিতে তরুণদের আগ্রহ বেড়েছে বলে মনে করেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস।
আলোচনা অনুষ্ঠানে দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, “তরুণদের বলতে চাই, যে স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, যে স্বপ্ন নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই স্বাধীন দেশকে আমাদের এই তরুণ প্রজন্ম অনেক বড় জায়গায় নিয়ে যাবে। অনেক বড় একটি দেশ তাদের মাধ্যমে আমরা পেতে পারি।
“দেশ বড় হওয়া মানে আকৃতিতে বড় নয়। একটি দেশ বড় হয় তার শক্তি দিয়ে। তার শিক্ষায়, তার আলোয় যে দেশ আদর্শ হয়ে ওঠে, সে দেশ বড় হয়।”
তিনি বলেন, “যে ভোট হতে যাচ্ছে, সে ভোটে আমাদের তরুণেরা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার আদর্শে লালিত প্রত্যেকটি মানুষ বাংলাদেশের পক্ষে ভোট দেবে, প্রত্যেকটি মানুষ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পক্ষে ভোট দেবে। প্রত্যেকটি মানুষ জাতির জনকের আদর্শে ভোট দেবে।
“আমরা তরুণদের মাধ্যমে আলোকিত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতে চাই।”
তিনি বলেন, “আমরা হিসাব করে দেখেছি, যে নতুন ভোটাররা আছে, তাদের সঙ্গে যদি নারী ও জাতিগত-ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভোট যোগ হয়, তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তির জয় অনিবার্য। আসুন, আমরা এই ভোটকে একসঙ্গে নিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে বিজয়ী করি।”
নির্বাচনী ইশতেহারে তরুণদের কর্মসংস্থানকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বানও জানান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়।
“তরুণদের যে কর্মসংস্থান সেটাকে হাজার গুণ বাড়িয়ে দিন। তরুণরা যদি আত্মশক্তিতে বলীয়ান হতে না পারে, তাহলে আমরা যে বাংলাদেশ নিয়ে ভাবছি, যে বাংলাদেশ নিয়ে সামনের দিকে এগোবো- সেটা সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে না।”
এবার নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ শক্তির যে স্পষ্ট মেরুকরণ ছিল সেটার বাইরে নতুন প্রতারণার পথ খুলেছে বলে আলোচনা সভায় মন্তব্য করেন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের মহাসচিব সাংবাদিক হারুন হাবীব।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এবং পাকিস্তানপ্রেমী সাম্প্রদায়িক শক্তির মধ্যে দুটি স্পষ্ট ধারা ছিল। সেই মেরুকরণ ভাঙ্গার চেষ্টা করা হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক আছে বলে অনেকে প্রতারিত হতে পারেন। কিন্তু তরুণ প্রজন্ম এতো বোকা না।
“তারা বোঝে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের জোট। আরেকটা জোট যারা মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলছেন, আবার মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তির সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য এ ধরনের দ্বিচারিতা দুর্ভাগ্যজনক।”
অনুষ্ঠানে দুই শক্তির মধ্যে নতুন মেরুকরণের প্রসঙ্গ উঠে আসে ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরীর কথায়ও।
“অনেক দিন যাবত যাদেরকে জেনেছিলাম, তারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন; বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কাজ করেছেন বলে জেনেছি, তারা এখন জামায়াত-বিএনপির হাত ধরে রাজনীতিতে নেমেছেন। তারা এখন তারেক জিয়ার কথামতো নির্বাচন করছেন। এতে আমাদের মধ্যে অনেক বিভ্রান্তি তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।”
আলোচনা অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন, “স্বাধীনতাবিরোধীরা তো নয়ই, তাদের সহযোগী কেউই এদেশে যেন রাজনীতি করতে না পারে সেই দিকে তরুণদের সচেষ্ট হতে হবে।”
দেশবিরোধী চক্রের চক্রান্তের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে ভোট দেওয়া।
“কোনো ক্ষুদ্র কারণেই আমাদের বিভাজিত হওয়া চলবে না। ব্যক্তিগত ক্ষোভ থাকতে পারে, দলীয় কাজের অসম্মতি থাকতে পারে, কিন্তু মনে রাখতে হবে সামগ্রিক পরিস্থিতি। সামনের নির্বাচন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির টিকে থাকার লড়াই। এই লড়াইয়ে অতি বিপ্লবী আচরণের কোনো সুযোগ নেই। অতিরিক্ত উচ্চমার্গের অবাস্তব আদর্শিক স্বপ্ন দেখার বা বাছবিচার করার সময় এটা নয়। থাকতে হবে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সঙ্গে, তরুণদের সঙ্গে এটাই স্পষ্ট হিসাব।”
সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য সচিব ডা. মামুন আল মাহতাবের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব সোহেল হায়দার চৌধুরী, মোহনা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক রহমান মুস্তাফিজ এবং ছাত্রলীগের সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন।