নির্বাচন সামনে রেখে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টকে ‘খুবই ইতিবাচক’ বলে মনে হয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের।
Published : 02 Nov 2018, 11:18 PM
শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে তিন ঘণ্টা সংলাপ শেষে রাত পৌনে ১১টায় আওয়ামী লীগের পক্ষে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে এসে কাদের বলেন, যুক্তফ্রন্টের অনেকগুলো দাবি তারা ‘মেনে নিয়েছেন’।
“তাদেরকে আমরা খুবই পজিটিভ বলে মনে হয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে তারা অত্যন্ত ইতিবাচক ও গঠনমূলক কথা বলেছে। তারা আসবে বলে মনে হয়েছে।”
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিরোধপূর্ণ রাজনৈতিক অবস্থানের মধ্যে কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপের পরদিন বি. চৌধুরীর ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সংলাপ হয়।
পৌনে ৮টায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বৈঠক; এরপর চলে রুদ্ধদ্বার আলোচনায় অংশ নেন দুই পক্ষের ৪৪ জন নেতা।
যুক্তফ্রন্টের নেতারা আলোচনায় বসেছিলেন সাত দফা দাবি নিয়ে, যার মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন, ইভিএম ব্যবহার না করা, নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির মত বিষয় ছিল।
এ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমাদের এমপি-মিনিস্টাররা নিজ নিজ এলাকায় উদ্বোধনের কাজ করে ফেলেছেন। আজকে ময়মনসিংহে প্রধানমন্ত্রী ১৯৬টি প্রকল্পের উদ্বোধন বা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। এই সুযোগ যদি শিডিউলের পরে থাকত, তবে এতগুলো প্রকল্পে উদ্বোধনের কথা ছিল না।”
যুক্তফ্রন্টের দ্বিতীয় দাবি ছিল- নির্বাচনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত কর্মচারীদের নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত করা। নির্বাচন কমিশনকে শতভাগ রাষ্ট্রপতির অধীনে রাখা। তফসিল ঘোষণার পর এমপিরা যাতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় কোনো প্রকল্প উদ্বোধন বা প্রতিশ্রুতি দিতে না পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। প্রয়োজনে আইন করে মন্ত্রী ও এমপিদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাহার করা। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের বিল বোর্ড, ব্যানার, পোস্টার অপসারণ করা।
কাদের বলেন, “দুই নম্বরে তারা যেটা বলেছেন, তা আমরা মেনে নিয়েছি। … এ বিষয়গুলো গতবারও ছিল, এবারও থাকবে।”
যুক্তফ্রন্টের একটি দাবি ছিল- নির্বাচনের আগে ও পরে যাতে শান্তি-শৃঙ্খলার বিঘ্ন না ঘটে-সেজন্য সেনাবাহিনীকে নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে এবং নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পর পর্যন্ত মোতায়েন করতে হবে। ভোটের দিন সেনাবাহিনীকে সীমিত ক্ষমতা দিতে হবে যেমন, আটক রাখার ক্ষমতা ও ভোট কেন্দ্রে থাকা।
এ বিষয়ে ওবায়দুল কারে বলেন, “আমাদের প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেছেন, এ দেশে সেনাবাহিনীকে নিয়ে অনেক খেলা হয়েছে, অনেক বিতর্ক হয়েছে। তারা আজ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে যোগ দিয়ে সারাবিশ্বে প্রশংসা কুড়োচ্ছে। এই সেনাবাহিনীকে যত্রতত্র ব্যবহার না করাই ভালো।
“সেনাবাহিনী নিয়োগের আমরা বিরুদ্ধে নই। সেনাবাহিনী অবশ্যই নিয়াজিত হবে। তবে তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করবে। স্থানীয় প্রশাসন যেখানেই প্রয়োজন মনে করবে সেখানেই সেনাবাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করবে।”
কাদের বলেন, “নির্বাচন কমিশন এ সময়ের মধ্যে কতটা ইভিএম ব্যবহারে ভূমিকা রাখতে পারবে সেটা পরিষ্কার না। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন কমিশনকে কিছু বলতে পারে না। সিটি করপোরশনে সীমিত আকারে তারা ব্যবহার করেছে। সে রকম কোনো পরিকল্পনা নির্বাচন কমিশনের থাকতে পারে। তবে যুক্তফ্রন্ট্রের নেতাদের বিশেষ অনুরোধে প্রধানমন্ত্রী ইভিএম নিয়ে তাদের উদ্বেগের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করবেন।”
একটি দাবিতে যুক্তফ্রন্ট বলেছিল, নির্বাচন হতে হবে নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে। প্রয়োজনে এক দিনের জন্য সংসদ ডেকে জাতীয় সরকার গঠন করা যেতে পারে। অথবা মন্ত্রিপরিষদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা জোট থেকে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে একটি সন্তোষজনক নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে। নির্বাচনে সকল প্রকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার অথবা বর্তমান সরকারের নির্বাচন বিষয়ে ক্ষমতা সীমিত করতে হবে।
এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, যুক্তফ্রন্টের নেতারা সংলাপে সরকার পরিবর্তন বা নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে ‘জোর কোনো দবি উত্থাপন করেনি’।
“গঠনমূলক আর ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে,দে আর হ্যাপি।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, সংলাপে ১৪ দলীয় জোট ও যুক্তফ্রন্ট স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সেই সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবিসংবাদিত নেতৃত্বের বিষয়ে এক সুরে কথা বলেছে।
সংসদ ভেঙে দেওয়া অথবা নিষ্ক্রিয় করার যে দাবি যুক্তফ্রন্ট্র জানিয়েছে, সে বিষয়ে কাদের বলেন, সংসদ ইতোমধ্যে নিস্ক্রিয় হয়েছে।
নির্বাচনের সময় সরকারের ক্ষমতা সীমিত করার বিষয়ে আলোচনায় দুই পক্ষই একমত হয়েছে বলে জানান কাদের।
পৌনে ৮টায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বৈঠক; এরপর চলে রুদ্ধদ্বার আলোচনা। দুই পক্ষের ৪৪ জন নেতার আলোচনার মধ্যেই চলে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আপ্যায়ন।
অন্যদিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফর উল্যাহ, আবদুল মতিন খসরু, মো.আব্দুর রাজ্জাক, রমেশ চন্দ্র সেন, আনিসুল হক, মাহাবুব-উল আলম হানিফ, আবদুর রহমান, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুস সোবহান গোলাপ, শ ম রেজাউল করিম, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু, মইনুদ্দিন খান বাদল ও সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া।
বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বৃহস্পতিবার রাতে গণভবনে সংলাপে অংশ নেয়।
পরে এক সংবাদ সম্মেলনে কামাল বলেন, এ আলোচনায় বিশেষ কোনো সমাধান তারা পাননি। আর জোটের সবচেয়ে বড় দল বিএনপির ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনায় তারা সন্তুষ্ট নন।