গাম্বিয়ার একটি পার্লামেন্টারি কমিটি বলেছে, ভারতের মেইডেন ফার্মাসিউটিকালসকে ‘অবশ্যই দূষিত ওষুধ রপ্তানি করার দায়ে জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত’।
Published : 21 Dec 2022, 06:57 PM
গাম্বিয়ার একটি পার্লামেন্টারি কমিটি সেদেশে অন্তত ৭০ শিশুর মৃত্যুর পেছনে দায়ী বলে সন্দেহ করা কফ সিরাপগুলোর উৎপাদনকারী ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে।
তারা বলেছে, ভারতের মেইডেন ফার্মাসিউটিকালসকে ‘অবশ্যই দূষিত ওষুধ রপ্তানি করার দায়ে জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত’।
গত অক্টোবরে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ায় হঠাৎ করেই শিশুদের মধ্যে মারাত্মক কিডনি জটিলতা সংক্রান্ত অসুস্থতা দেখা দেয় এবং অনেক শিশু মারা গেছে এমন খবর পাওয়া যায়।
যার প্রেক্ষিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওই মাসেই ভারতে উৎপাদিত চারটি ব্র্যান্ডের কফ সিরাপ নিয়ে বৈশ্বিক সতর্কতা জারি করে বলে, সেগুলোর সঙ্গে কিডনি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্পর্ক থাকতে পারে।
ভারতের মেইডেন ফার্মাসিউটিকেলের বানানো কফ সিরাপ চারটি হল: প্রোমেথাজাইন ওরাল সল্যুশন, কোফেক্সমালিন বেবি কফ সিরাপ, ম্যাকফ বেবি কফ সিরাপ ও ম্যাগ্রিপ এন কোল্ড সিরাপ।
পরীক্ষায় যেগুলোতে অনুনমোদিত মাত্রার ডাইইথিলিন গ্লাইসল ও ইথিলিন গ্লাইসল পাওয়া গেছে।
মেইডেন ফার্মাসিউটিকেল কর্তৃপক্ষ অবশ্য তাদের ওষুধে ক্ষতিকর কিছু থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
ভারতে সরকারি গবেষণাগারে ওই ওষুধগুলো পরীক্ষার পর বলা হয়, তারা সেগুলোতে ‘নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলি মেনে চলার’ প্রমাণ পেয়েছে।
গত সপ্তাহে ভারতের একজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, ডব্লিউএইচও ‘আগবাড়িয়ে’ কফ সিরাপগুলোকে দায়ী করেছে।
অন্যদিকে, ডব্লিউএইচও-র পক্ষ থেকে বিবিসি-কে বলা হয়ছে, তারা শুধুমাত্র তাদের নির্দেশিকা অনুসরণ করেছে এবং যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তার পাশে দাঁড়াবে।
ভারতের নিম্নমানের কফ সিরাপ কীভাবে পৌঁছাল গাম্বিয়ায়?
কফ সিরাপে গাম্বিয়ায় শিশু মৃত্যুর পর ভারতে উৎপাদন স্থগিত
বিবিসি জানায়, কফ সিরাপের এই ঘটনা নিয়ে গাম্বিয়ার পার্লামেন্টারি কমিটি কয়েক সপ্তাহ ধরে তদন্তের পর কর্তৃপক্ষকে এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে।
তাদের সুপারিশের মধ্যে মেইডেন ফার্মাসিউটিকালসের সব ওষুধ গাম্বিয়ায় নিষিদ্ধ করা এবং কোম্পানিটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করাও অন্তর্ভুক্ত।
মেইডেন ফার্মাসিউটিকেল সম্পর্কে কী জানা যায়?
মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যাল বলেছে, তারা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মান বজায় রেখে ওষুধ প্রস্তুত করে। যদিও তাদের তৈরি কিছু ওষুধ ভারতেই জাতীয় বা রাজ্য পর্যায়ে মান নিয়ন্ত্রণের পরীক্ষায় উৎরাতে পারেনি।
এই কোম্পানির ওষুধ নিয়ে সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী:
#এই কোম্পানির একটি সিরাপ রাজ্য পর্যায়ের মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার পর ২০১১ সালে বিহার রাজ্যে মেইডেন ফার্মাসিউটিকালকে কালো তালিকাভূক্ত করা হয়।
#ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন করায় ২০১৮ সালে ভারতের জাতীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করে।
#এই কোম্পানির ওষুধ ২০২০ সালে জম্মু ও কাশ্মীরে মান-নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়।
#সর্বশেষ ২০২২ সালে মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালের ওষুধ কেরালা রাজ্যে মান নিয়ন্ত্রণের পরীক্ষায় চার চারবার ব্যর্থ হয়।
হরিয়ানা রাজ্যের এই ওষুধ কোম্পানিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, গাম্বিয়ায় শিশু মৃত্যুর খবর পেয়ে তারা ‘হতবাক’ হয়েছে।
কারণ, তারা ‘খুবই নিষ্ঠার সঙ্গে ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং হরিয়ানা রাজ্যের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সব ধরনের প্রোটোকল অনুসরণ করে’।
এ বিষয়ে ওই সময়ে বিবিসি থেকে হরিয়ানা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনিল ভিজকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘‘যে কফ সিরাপগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, সেগুলো পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। যদি সেখানে কোনো ভুল বা অনিয়ম পাওয়া যায় তবে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”