গাজায় জিম্মিদের স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে এদিন সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীরাও সড়কে নেমেছিল। তারা প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর পদত্যাগ দাবি করেছে।
Published : 07 Apr 2024, 11:01 AM
গাজা থেকে ইসরায়েলি জিম্মি ইলাদ কাৎজিরের মৃতদেহ উদ্ধারের পর রাজধানী তেল আবিবসহ ইসরায়েলের অন্যান্য নগরীতে শনিবার লাখো মানুষ হামাস ও ইসলামিক জিহাদের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্ত করে আনার দাবিতে সড়কে নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, বিক্ষোভকারীরা ‘এখনই নির্বাচন’ এবং ‘ইলাদ, আমরা দুঃখিত’ বলে স্লোগান দেন।
পরে পুলিশ জোর করে তেল আবিবের বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
গাজায় জিম্মিদের স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে এদিন সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীরাও সড়কে নেমেছিল বলে জানায় বিবিসি।
গাজায় এখনও প্রায় ১২৯ জন ইসরায়েলি জিম্মি হয়ে আছেন বলে ধারণা করা হয়। তাদের মুক্ত করে আনতে ইসরায়েল সরকারের একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার অক্ষমতায় বিক্ষোভকারীরা চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন।
শনিবার ভোরে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী-আইডিএফ জানায়, তারা গাজার দক্ষিণের খান ইউনিসে রাতভর অভিযান চালিয়ে ইসরায়েলি জিম্মি কাৎজিরের মৃতদেহ উদ্ধার করে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার সময় যাকে তার মা সহ ধরে নিয়ে যায় গাজার ফিলিস্তিনিদের আরেকটি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক জিহাদ।
গত জানুয়ারিতে ইসলামিক জিহাদ কাৎজিরের একটি ভিডিও প্রকাশ করে। যেখানে তাকে ইসরায়েল সরকারকে গাজায় অভিযান বন্ধ করে তাকে এবং অন্যান্য জিম্মিদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানাতে দেখা যায়।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নোয়াম পেরি বিবিসিকে বলেন, “জিম্মি হওয়ার পর ইলাদ কাৎজির নিজেকে তিন মাস বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। আজ তার এখানে আমাদের সঙ্গে থাকা উচিত ছিল। আজ সে এখানে আমাদের সঙ্গে থাকতে পারতো।”
বিক্ষোভ আয়োজনকারীরা জানান, ইসরায়েল জুড়ে প্রায় অর্ধশত স্থানে জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। যে বিক্ষোভে এক লাখের মত মানুষ অংশ নিয়েছে বলে দাবি দেশটির বিরোধীদলগুলোর।
সম্প্রতি ইসরায়েলে সরকার বিরোধী এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে বৃহৎ যেসব বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে এটি তার একটি। বিক্ষোভকারীদের দাবি, নেতানিয়াহু জিম্মিদের মুক্ত করে আনতে ব্যর্থ হয়েছেন।
তেল আবিবে একটি গাড়ি বিক্ষোভকারীদের ভিড়ের মধ্যে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলেও জানায় বিবিসি। এতে পাঁচ জন আহত হয়েছেন। এটি দুর্ঘটনা ছিল নাকি ইচ্ছাকৃত ছিল তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে রোববার, গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঠিক ছয় মাস পর নিষ্ঠুর এই যুদ্ধ বন্ধ করতে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে উপনীত হতে মিশরের রাজধানী কায়রোতে বৈঠকের পরিকল্পনা করেছেন মধ্যস্থতাকারীরা।
কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, ওই বৈঠকে মিশর, ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সিআইএ পরিচালক বিল বার্নস এবং কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুলরহমান আল থানিও অংশ নেবেন।
কাৎজিরের বোন কারমিৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে তার ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন। বলেন, যদি তারা নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি হতো তবে তার ভাই জীবিত ফেরত আসতো।
ফেসবুকে তিনি লেখেন, “আমাদের নেতারা কাপুরুষ এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় চালিত, যে কারণে এই চুক্তি এখনও হয়নি।
“প্রধানমন্ত্রী, যুদ্ধ মন্ত্রিসভা এবং জোটের সদস্যরা: আয়নায় নিজেদের দেখুন এবং বলুন, আপনাদের হাতেও কী রক্তের দাগ লেগে নেই।”
গত ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে প্রায় ১২শ ইসরায়েলিকে হত্যা করে হামাস এবং ইসলামিক জিহাদ । ধরে নিয়ে যায় আরও ২৫৩ জনকে । যাদের মধ্যে গত নভেম্বরে ছয় দিনের যুদ্ধবিরতির সময় বন্দি বিনিময় চুক্তিতে ১০৯ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। মুক্তি পাওয়া জিম্মিদের মধ্যে কাৎজিরের মা হানাও ছিলেন।
আরও পড়ুন
গাজা যুদ্ধের ৬ মাস: হামাসের কতটা ক্ষতি করতে পারল ইসরায়েল?
ইসরায়েল সরকারকে যুদ্ধ থামিয়ে তাদের উদ্ধারের অনুরোধ জানানো জিম্মি নিহত