Published : 17 Sep 2022, 02:58 PM
কপিকলের চাকা ঘোরাতেই খুলে গেল খাঁচার গেইট। আর একে একে বেরিয়ে এসে এক ছুটে জঙ্গলে চলে গেল নবাগতরা। মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যানে এভাবেই নাবিবিয়া থেকে আনা চিতাদের ছেড়ে দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
একসময় ভারত এশীয় চিতার অভয়ারণ্য হলেও শিকারিদের দৌরাত্ম্য এবং আবাসস্থল সঙ্কটে হারিয়ে যায় এই প্রাণীটি। ১৯৫২ সালে ভারতে চিতাকে সরকারিভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
সেই হিসাবে ৭৫ বছর পর শনিবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিনে ভারতের মাটিতে ফিরিয়ে আনা হল চিতা।
ভারতের সংবাদ মাধ্যম জানায়, নামিবিয়া থেকে যে বিশেষ কার্গো বিমান করে নতুন অতিথিদের ভারতে নিয়ে আসা হয়, তার সামনের অংশটি আঁকা হয় চিতার মুখের আদলে।
নাবিমিয়া থেকে আনা এই আটটি চিতার মধ্যে পাঁচটি পুরুষ এবং তিনটি নারী, এদের বয়স চার থেকে ছয় বছর।
বছরের শুরুতে ভারতের কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের একটি দল যায় নামিবিয়ায়। তারাই বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে চিতা বাছাই করে।
#WATCH | Prime Minister Narendra Modi releases the cheetahs that were brought from Namibia this morning, at their new home Kuno National Park in Madhya Pradesh.
— ANI (@ANI) September 17, 2022
(Source: DD) pic.twitter.com/CigiwoSV3v
শনিবার সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে চিতাদের নিয়ে কার্গো বিমানটি গোয়ালিয়র রানওয়ের মাটি ছোঁয়।
সেখানে ডাক্তারি পরীক্ষার পর চিতাগুলোকে হেলিকপ্টারে করে কুনো জাতীয় উদ্যানে নেওয়া হয়। ৭৪০ বর্গকিলোমিটারের মধ্যপ্রদেশের এই বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। সেখানে তাদের বরণ করেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চিতাগুলোকে জঙ্গলে ছাড়ার পর উচ্ছ্বসিত মোদী বলেন, “দীর্ঘ কয়েক দশক পর চিতারা আমাদের দেশে ফিরে এসেছে। ঐতিহাসিক এই দিনে আমি ভারতবাসীকে অভিনন্দন জানাই। ধন্যবাদ জানাই নাবিমিয়া সরকারকে।”
জীববৈচিত্র্যে বিলু্প্ত এই প্রাচীন সংযোগকে নতুন করে যুক্ত করার সুযোগ এসেছে মন্তব্য করেন তিনি। চিতার প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে ভারতে প্রকৃতিপ্রেমীরাও উজ্জীবিত হয়ে উঠছেন বলে তিনি মনে করেন।
কুনো জাতীয় উদ্যানে আফ্রিকার এই অতিথিদের দেখতে সবাইকে কিছুদিন ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন মোদী। তিনি বলেন, এই জঙ্গলকে চিতাদের আপন আঙিনা ভেবে নিতে মাসখানেক সময় দিতেই হবে।
চিতাগুলোর শিকারের জন্য এই উদ্যানে কিছুদিন আগেই ছাড়া হয়েছে কয়েকশ হরিণ ও বুনো শুয়োর। আশপাশের ২৪ গ্রামের বাসিন্দাদেরও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
গবেষকদের মতে, জঙ্গল ও তৃণমূল বেষ্টিত মধ্যপ্রদেশের পরিবেশ এবং আবহাওয়ার সঙ্গে আফ্রিকার চিতার আবাসভূমি সাভানার সাদৃশ্য রয়েছে। ফলে এই চিতাগুলোর কুনোতে খাপ খাইয়ে নিয়ে বংশবিস্তারে খুব একটা অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
ভারত সরকার আগামী ৫ বছরে আরও ৫০টি চিতা আনার পরিকল্পনা নিয়েছে। এ বছরই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আরও ১২টি চিতা আসার কথা রয়েছে।
ভারতে চিতার দেখা সর্বশেষ মিলেছিল ১৯৪৭ সালে। তৎকালীন সরগুজার বর্তমানে ছত্তিশগড়ে রাজা রামানুজ প্রতাম সিং দেও তখন তিনটি এশীয় চিতা শিকার করেছিলেন। তারপর আর চিতার দেখা মেলেনি। এর পাঁচ বছর পর চিতা বিলুপ্ত বলে ঘোষণা আসে।