Published : 10 Apr 2024, 08:04 PM
হামলার আতঙ্কের মধ্যেই গাজায় ঈদুল ফিতর উদযাপন করছে ফিলিস্তিনিরা। তবে ছয় মাস ধরে চলা ইসরাইলের বর্বর হামলার কারণে বিধ্বস্ত গাজায় দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাসের মধ্যে বাসিন্দাদের নেই ঈদের আনন্দ। কোনও মিষ্টি বিলি হচ্ছে না। কেবলই বেদনায় ভরা এক ঈদের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছে গাজাবাসী।
রাফাহ নগরীর অবস্থা শোচনীয়। সেখানে মানুষ মৌলিক চাহিদাও মেটাতে পারছে না। জীবনের মৌলিক প্রয়োজন মেটানো ছাড়াই ঈদ উদযাপন করার কথা বিবিসি সাংবাদিকদের জানিয়েছে রাফাহ নগরীর এক পরিবার।
ঈদের দিন গাজার বহু ফিলিস্তিনিই অনাহারে আছে। ত্রাণের জন্য অপেক্ষায় আছে গাজাবাসী। তবে এর মাঝেও সব দুর্ভোগ, বেদনাকে পাশ কাটিয়ে ঈদ বরণ করছে ফিলিস্তিনিরা।
ইসরায়েলের হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া মসজিদেই ঈদের নামাজ আদায় করেছে তারা। আল-আকসা মসজিদে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশে কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ভোর থেকেই সেখানে নামাজ আদায় করতে হাজির হয় হাজার হাজার মানুষ।
রাফাহ নগরীর একটি অস্থায়ী শিবিরের এক ফিলিস্তিনি আলা আল ইদাহ জানিয়েছেন, ঈদের দিন উপলক্ষে সেখানে কিছু নারী কুকি বানাচ্ছেন। ইসরায়েলের হামলায় বাবা-মা, বাড়িঘর হারানো এতিম শিশুদের মুখে হাসি দেখার জন্যই তাদের এই চেষ্টা।
বিবিসি-কে ইদাহ বলেন, ইসরায়েলের হামলায় এত বেশি মানুষ মারা গেছে যে, মৃত্যুশোক, দুঃখকে এখন সবাই জয় করে ফেলেছে।
আগের ঈদের সঙ্গে এবারের ঈদের পার্থক্য তুলে ধরে তিনি বলেন, আগে ঈদের দিনের শুভেচ্ছা জানাতে পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় দেখা করতে যাওয়া হত। শিশুরা আনন্দ করত। আর এবারের ঈদে তারা বাড়িঘার ছাড়া হয়ে উদ্বাস্তু জীবন যাপন করছে।
তবে এর মধ্যেও ঈদ উদযাপন করতে ফিলিস্তিনিরা আত্মীয়-স্বজনদের ডাকবে এবং প্রিয়জন হারানো মানুষদের সঙ্গে দেখা করবে বলে জানান ইদাহ।
বিবিসি জানায়, ইসরায়েল ঈদের মাঝেও হামলা থামায়নি। মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের আল-জাওয়াইদা এলাকায় একটি বাড়িতে ইসরাইলের বোমা হামলায় ১৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদের অধিকাংশই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের বার্তা সংস্থা ওয়াফা।
“এই ঈদ অন্য কোনও ঈদের মতো নয়। কারণ যুদ্ধ চলছে। আমরা পরিবার হারিয়েছি,” বলেছে রাফাহ নগরীর এগার বছরের এক শিশু।
গাজার শিশুদের কাছে এবারের ঈদ এসেছে ভিন্নভাবে। তাদের কাছ থেকে যেন ঈদের আনন্দ ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ বলেছে, গাজায় যত মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, তাদের মধ্যে এক শতাংশ শিশুই অনাথ বা এতিম হয়েছে। প্রায় সব আশ্রয় শিবিরেই শিশুরা বাবা-মা দুজনকেই হারানো বা একজনকে হারানোর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে।
যুদ্ধে অনাথ হওয়া ১৪ বছর বয়সী এক শিশুর কথায়, “এই ঈদে কোন আনন্দ নেই। আমরা আগে ঈদের সময় রাস্তায় বাতি জ্বালাতাম। কিন্তু এখন আমরা সাজসজ্জা হিসেবে শুধুমাত্র তাবুতে একটি দড়ি ঝুলাতে পারি।”
১১ বছর বয়সী সারাহ আমির বিবিসি’র গাজা লাইফলাইনকে বর্ণনা করেছেন গত বছরের আনন্দের ঈদের কথা। সে সময় ঈদের দিন বিনোদোন পার্কে গিয়ে খেলার স্মৃতিচারণ করে সারাহ।
“কিন্তু এখন সবকিছু বদলে গেছে। ঈদের দিনের আনন্দ ভোজনের আবহ আর নেই। ঈদ আদৌ আসেনি এবার। ঈদের আনন্দের বদলে এবার আছে কেবল চারিদিকে মৃত আর আহত মানুষ,” বলেন সারাহ।
তার কথায়, “এ দিনটি আসলে যুদ্ধের এক ছুটির দিন। তাই মানুষ যখন মারা যাচ্ছে,বন্দি হচ্ছে কিংবা আহত হচ্ছে তার মধ্যে আমরা কীভাবে ঈদের আনন্দ করব। আমি আগের ঈদের সেই আনন্দের অনুভূতি মিস করছি।”