Published : 29 Apr 2025, 05:04 PM
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ‘দুর্নীতির’ মাধ্যমে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা ‘আত্মসাতের’ অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের ভাই ও স্ত্রী-সন্তানসহ প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।
এই আটজনের মধ্যে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার স্বামী শফিক আহেদ সিদ্দিকও আছেন, যিনি তারিক আহমেদ সিদ্দিকের ভাই।
তারিক সিদ্দিকের স্ত্রী শাহিন সিদ্দিক, দুই মেয়ে বুশরা সিদ্দিক ও নওরীন তাসমিয়া সিদ্দিকের নামেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।
এছাড়া সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল শহীদ উদ্দিন খান, তার স্ত্রী ফারজানা আনজুম, তাদের দুই মেয়ে শেহতাজ মুন্নাসী খান এবং পারিজা পাইনাজ খানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।
তাদের মধ্যে শাহিন সিদ্দিক প্রচ্ছায়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান, বাকিরা সবাই পরিচালক।
দুদকের আবেদনে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।
এই আটজনের মধ্যে কেউ কেউ আগে থেকেই বিদেশে অবস্থান করছেন। শেখ হাসিনার সরকারপতনের পরও অনেকে লাপাত্তা হয়েছেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানান, দুদকের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে এদিন আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে দুদকের সাত সদস্যের একটি দল।
“প্রচ্ছায়া লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডারা সপরিবারে গোপনে দেশত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তারা দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র পেতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রহিত করা প্রয়োজন।”
এর আগে তারিক আহমেদ সিদ্দিকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে গত ২৮ জানুয়ারি আদেশ দিয়েছিল আদালত।
রূপপুর প্রকল্পে কী ধরনের দুর্নীতির তথ্য দুদকের হাতে এসেছে তার একটি ধারণা পাওয়া যায় সরকারপ্রধানের দপ্তরের দেওয়া এক সারসংক্ষেপে।
দুদকের বরাত দিয়ে ওই সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ‘উন্মুক্ত সূত্র’ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের ‘আর্থিক অনিয়ম’ হয়েছে।
“রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ (জয়) এবং ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আত্মসাৎ করেছেন, যা পাচার করা হয়েছে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে।”
কীভাবে ওই অর্থ ‘পাচার’ করা হয়েছে, সে বিষয়েও একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের সারসংক্ষেপে।
সেখানে বলা হয়, টিউলিপ সিদ্দিকের চাচা তারিক আহমেদ সিদ্দিক বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন। তার স্ত্রী ও মেয়ে প্রচ্ছায়া লিমিটেড (নিবন্ধন সনদ নম্বর সি-৭৫৬৫৯/০৯, তারিখ ২৫ মার্চ ২০০৯) নামের একটি ‘ভুয়া কোম্পানির’ অংশীদার। ওই কোম্পানি ‘ডেসটিনি গ্রুপ নামের একটি চিট ফান্ড কোম্পানির’ সঙ্গে যুক্ত ছিল।
অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রচ্ছায়া লিমিটেড যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার করেছে। ওই অর্থ দিয়ে যুক্তরাজ্যে জুমানা ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড প্রোপার্টিস লিমিটেড (নিবন্ধন সনদ নম্বর ৭৪১৭৪১৭, তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১০) নামের একটি কোম্পানিও খোলা হয়েছে।
“বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সেই সাক্ষাতের পর থেকে মস্কোর সঙ্গে গোপন সম্পর্ক বজায় রেখেছেন।”
গণ অভ্যুত্থানের মুখে গত অগাস্টে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর তার পরিবারের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু করে দুদক।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গুমের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ যে ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, তাদের মধ্যে তারিক আহমেদ সিদ্দিকের নামও রয়েছে।