গত মাসে দেখা দেওয়া জনঅসন্তোষের পর কর্তৃপক্ষ সামনে বিধিনিষেধ আরও শিথিল করতে যাচ্ছে, এমন আভাসও পাওয়া গেছে।
Published : 06 Dec 2022, 02:09 PM
চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের কর্তৃপক্ষ সুপারমার্কেট, বিভিন্ন দপ্তর ও বিমানবন্দরে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোভিড শনাক্তকরণ পরীক্ষার ‘নেগেটিভ’ ফল দেখানোর বিধান তুলে নিয়েছে।
গত মাসের ঐতিহাসিক বিক্ষোভের পর চীন যে দেশজুড়ে ধীরে ধীরে কোভিড বিধিনিষেধ শিথিলে পথে হাঁটছে মঙ্গলবার কার্যকর হওয়া এ সিদ্ধান্তকে তার সর্বশেষ নজির বলছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
“বেইজিং স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে,” রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদপত্র চায়না ডেইলির এক শিরোনামে এমনটাই লেখা হয়েছে; লোকজন ‘ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তনকে’ উৎসাহের সঙ্গে মেনে নিচ্ছে বলেও জানিয়েছে তারা।
গত মাসে দেখা দেওয়া সবচেয়ে বড় জনঅসন্তোষের পর চীনের কর্তৃপক্ষ সামনে বিধিনিষেধ আরও শিথিল করতে যাচ্ছে বলেও আভাস পাওয়া গেছে। ২০১২ সালে শি জিনপিং প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এক দশকে দেশটির মূল ভূখণ্ডে এমন বিক্ষোভ আর দেখা যায়নি।
“পুনরায় সব খুলে দেওয়ার পথে এটি প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে,” নিজের ভ্রমণ কার্ড ব্যবহার করে বেইজিংয়ের একটি ট্রেন স্টেশনে ঢোকার সময় রয়টার্সকে এমনটাই বলেছেন নগরীটির বাসিন্দা হু ডংজু (২৭) ।
শহরটির সাবওয়েতে চলাচলেও কোভিড পরীক্ষার ফল দেখানোর শর্ত তুলে নেওয়া হয়েছে। বেইজিংয়ের দুটি বিমানবন্দরের টার্মিনালে প্রবেশের ক্ষেত্রেও এখন আর পরীক্ষার দরকার পড়ছে না বলে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তবে বিমানের ওঠার আগে যাত্রীদের পরীক্ষার নেগেটিভ ফল দেখানোর নীতিতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়েছে কিনা তার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা করোনাভাইরাসজনিত কঠোরতা নিয়ে সুর নরম করার পর থেকে চীনের বিভিন্ন শহরের কর্তৃপক্ষকে একটার পর একটা বিধিনিষেধ তুলে নিতে দেখা যাচ্ছে।
বিশ্বের অনেক দেশই বছরখানেকেরও বেশি সময় ধরে বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে ভাইরাসকে সঙ্গী করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে; চীনও এখন ধীরে ধীরে সে পথে হাঁটছে।
চীন সম্ভবত বুধবারের মধ্যেই দেশজুড়ে থাকা আরও ১০টি বিধিনিষেধ শিথিলের ঘোষণা দেবে বলে বিষয়টি সম্বন্ধে জ্ঞাত দুটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে। দেশটির বিভিন্ন শহর এর মধ্যেই স্থানীয়ভাবে থাকা লকডাউনগুলো তুলে নিচ্ছে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের বিধিনেষধ উঠতে শুরু করলে তা বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিকে চাঙ্গা করবে, বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও এমন প্রত্যাশা বাড়ছে।
অবশ্য কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করলেও বেইজিং ও চংকিংয়ের মতো বড় বড় শহরগুলোতে যানবাহনে যাত্রীর সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম দেখা যাচ্ছে।
অনেকেই, বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে। চীনের অনেক বয়স্ক নাগরিক এখনও টিকা পাননি। বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ায় চীনের দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় চাপ বাড়তে পারে এমন আশঙ্কাও আছে।
সোমবার পর্যন্ত চীন কোভিডে তাদের দেশে ৫ হাজার ২৩৫ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে; তবে বিধিনিষেধ তুলতে তাড়াহুড়া করা হলে এই সংখ্যা ১০ লাখও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে অনেক বিশ্লেষক সতর্ক করেছেন।
এদিকে চীনা কর্মকর্তারাও এখন নিয়মিতই ভাইরাসের বিপদ কমিয়ে বলছেন।
সোমবার চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে বেইজিং ইনস্টিটিউট অব রেসপিরেটরি ডিজিজের পরিচালক টং ঝাওহুই বলেছেন, ২০০৯ সালের বৈশ্বিক ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রাদুর্ভাবে দেখা মেলা রোগীর চেয়ে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনে গুরুতর অসুস্থ রোগীর সংখ্যা কম।
চীনের কোভিড ব্যবস্থাপনাও জানুয়ারির মধ্যেই এখনকার সংক্রামক ব্যাধি মোকাবেলায় বলবৎ থাকা সর্বোচ্চ মাত্রার ক্যাটাগরি ‘এ’ থেকে তুলনামূলকভাবে কম কঠোর ক্যাটাগরি ‘বি’-তে নামতে পারে বলে সোমবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
“সবচেয়ে কঠিন সময়টুকু পেরিয়ে গেছে,” ভাইরাসের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়া এবং জনসংখ্যার ৯০ শতাংশকে টিকা দেওয়ার চেষ্টার কথা উল্লেখ করে প্রকাশিত এক ভাষ্যে সোমবার এমনটাই বলেছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা সিনহুয়া।
আগামী বছর ধারণার চেয়েও আগেভাগেই চীন তার অর্থনীতিকে পুনরায় সচল ও সীমান্ত খুলে দিতে পারে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক; কেউ কেউ তো বসন্তেই চীনের সব বিধিনিষেধ প্রত্যাহার হবে বলে মনে করছেন।
আরও পড়ুন: