ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ বিক্ষোভ

ইসরায়েল সরকারের বিচারবিভাগ সংস্কার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ হচ্ছে। বিরোধীরা সরকারের পরিকল্পনাকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি আখ্যা দিয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 March 2023, 11:57 AM
Updated : 12 March 2023, 11:57 AM

ইসরায়েলে বিচারব্যবস্থার আমূল সংস্কার সাধনের সরকারি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে লাখ লাখ মানুষ। আয়োজকরা বলছেন, ইসরায়েলের ইতিহাসে রাস্তায় রাস্তায় জনতার এতবড় বিক্ষোভ আর কখনও দেখা যায়নি।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলছেন, সংস্কারের মধ্য দিয়ে আদালতের ক্ষমতা খর্ব হবে এবং সরকারের বিভিন্ন শাখার মধ্যে ভারসাম্য ফিরে আসবে। তবে বিরোধীরা বলছে, সরকারের এ পরিকল্পনা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।

শনিবারের প্রতিবাদ বিক্ষোভে বিরোধী নেতা ইয়াইর লাপিদ বলেছেন, ইসরায়েল সবচেয়ে বড় সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

শনিবারের বিক্ষোভের আয়োজকরা জানান, ইসরায়েলজুড়ে রাস্তায় রাস্তায় কমপক্ষে ৫ লাখ মানুষ বিক্ষোভ করেছে। হারেজ পত্রিকা একে ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ বলে বর্ণনা করেছে।

প্রায় দুই লাখ বিক্ষোভকারী জড়ো হয় তেল আবিবে। তাদের অনেকের হাতে ছিল ইসরায়েলের জাতীয় পতাকা।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একজন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “সরকার বিচারবিভাগ সংস্কারের যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তা কোনও বিচারিক সংস্কার নয়। বিচারব্যবস্থায় এ এক বিপ্লব, যা ইসরায়েলকে সম্পূর্ণ স্বৈরাচারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমার সন্তানদের জন্য একটি গণতান্ত্রিক ইসরায়েলই আমি প্রত্যাশা করি।”

বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে পুলিশ প্রধান আমিচাই এশিদ হেঁটে যাওয়ার সময় বিক্ষোভকারীরা হাততালি দিয়ে তার প্রশংসা করে। নেতানিয়াহুর সরকার এর আগে ডিস্ট্রিক্ট কমান্ডারকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এটর্নি জেনারেলের বাধার মুখে তা পারেনি।

বিবিসি জানায়, শনিবার উত্তরের হাইফা শহরে রেকর্ড ৫০ হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছে। সরকারের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে এটি ছিল টানা ১০ম সপ্তাহের প্রতিবাদ বিক্ষোভ। 

দক্ষিণের শহর বীর শেভাতে বক্তব্য দেন বিরোধী নেতা ইয়াইর লাপিদ। তিনি সতর্ক করে বলেন, দেশ অপ্রত্যাশিত এক সংকটের মুখোমুখি। সন্ত্রাসের ঢেউ আমাদের ওপর আছড়ে পড়ছে। আমাদের অর্থনীতি দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। দেশ থেকে অর্থ বাইরে চলে যাচ্ছে। সৌদি আরবের সঙ্গে নতুন চুক্তি করেছে ইরান। কিন্তু এই সরকার একটি বিষয়েই মনোযোগ দিয়েছে, তা হল ইসরায়েলের গণতন্ত্র ধ্বংস করে দেওয়া।

নেতানিয়াহু সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তাতে আদালতের বিচারক বাছাইয়ে নির্বাচিত সরকার চূড়ান্ত প্রভাব খাটাতে পারবে। নির্বাহী বিভাগের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের রায় দেওয়া এবং আইন বাতিলের ক্ষমতাও সীমিত হয়ে যাবে। এই ইস্যুতে ইসরাইলের সমাজ গভীরভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তারা বিরোধীদের সহ্য করার রীতি থেকে বেরিয়ে আসছে।

এ বিষয়টিতেই ইসরায়েলের সমাজ গভীরভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মেরুদণ্ড যাদের বলা হয়, সেই রিজার্ভ সেনারা সরকারের এ পরিকল্পনার প্রতিবাদে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।

গত সোমবার নজিরবিহীন এক পদক্ষেপে ইসরায়েলের বিমানবাহিনীর স্কোয়াড্রনের কয়েক ডজন রিজার্ভ পাইলট বলেছিল, তারা প্রশিক্ষণে যাবে না। পরে অবশ্য তারা সিদ্ধান্ত বদলিয়ে প্রশিক্ষণে যেতে রাজি হয় এবং কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করে।

গত বৃহস্পতিবার বিক্ষোভকারীরা রাস্তা অবরোধ করে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে বহনকারী উড়োজাহাজ দেশের বাইরে যেতে বাঁধা দেয়। তবে পরে নেতানিয়াহু রোমের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন।

বিক্ষোভের মুখেও সরকার অবস্থানে অটল রয়েছে। বিক্ষোভ দমনেও সরকার কঠোর। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিক্ষোভে উসকানি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে সরকার।

ওদিকে, সমালোচকরা বলছেন,  সংস্কার পরিকল্পনা বিচারব্যবস্থার রাজনৈতিকীকরণ করবে এবং কর্তৃত্ববাদী সরকারের দিকে দেশকে নিয়ে যাবে।

তবে নেতানিয়াহু বলছেন, আদালতের হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা চলে যাওয়া ঠেকাতে এই সংস্কার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাছাড়া, গত নির্বাচনে ইসরায়েলের জনগণ ভোট দিয়ে তার সরকারকে নির্বাচিত করেছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।