ইউক্রেইনের আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী ৩০টির বেশি ড্রোন ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।
Published : 21 Jun 2023, 06:14 PM
ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলনস্কি বলেছেন, তার সেনারা পূর্ব ও দক্ষিণের যুদ্ধক্ষেত্রে রশিয়ার বাহিনীকে ক্রমাগত ধ্বংস করে চলছে।
রাজধানী কিইভ এবং পশ্চিমাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার দিন নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করার পাশাপাশি ওই দাবি জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
রাশিয়া মঙ্গলবার ইউক্রেইনের একাধিক শহরে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলে ইউক্রেইনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মস্কো পশ্চিমাঞ্চলীয় এমন অনেক এলাকায় হামলা চালিয়েছে যা দুই পক্ষের সেনাদের মধ্যে চলমান তুমুল লড়াইয়ের স্থান থেকে অনেক দূরে, বলেছেন তারা।
তবে ব্যাপক হামলা হলেও ইউক্রেইনের আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী ৩০টির বেশি ড্রোন ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, তিনি কিইভের আকাশ রক্ষাকারী বাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
জেলেনস্কির স্থলবাহিনীর কমান্ডার এবং উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রীও পূর্ব ও দক্ষিণের যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণে অগ্রগতি হচ্ছে বলে দাবি করেছেন।
অন্যদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার বলেছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় তারা ইউক্রেইনের ৮টি গোলাবারুদ গুদাম ধ্বংস করে দিয়েছে এবং তিনটি এলাকায় তাদের আক্রমণ প্রতিহত করেছে।
ইউক্রেইনের বাহিনী রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা পূর্বাঞ্চলীয় শহর দোনেৎস্ক ও দক্ষিণাঞ্চলীয় জাপোরিজিয়ায় হামলার চেষ্টা চালিয়েছিল, কিন্তু সবই প্রতিহত করা হয়েছে, বলেছে তারা।
জেলেনস্কির দপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কয়েক ধাপে কিইভ অঞ্চলে ড্রোন হামলা হয়েছে।
একইদিন ইউক্রেইনের বাহিনীও দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসনে রুশ নিয়ন্ত্রিত শহর নোভা কাখোভকায় ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে শহরটির রাশিয়াপন্থি কর্তৃপক্ষ। এই হামলায় এক নারী নিহত ও ৪ বেসামরিক আহত হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
রাশিয়া এমন এক সময়ে কিইভসহ ইউক্রেইনের বিভিন্ন শহরে এই ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে, যখন সবার নজর দক্ষিণ ও পূর্বের যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেইনের পাল্টা আক্রমণের দিকে।
কিইভের এই পাল্টা আক্রমণের প্রাথমিক লক্ষ্য হল পুতিনের বাহিনীকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির আগের জায়গায় ফিরিয়ে নেওয়া।
ইউক্রেইন জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত দুই সপ্তাহের পাল্টা আক্রমণে তারা ১১৩ বর্গকিলোমিটার জায়গা ও ৮টি এলাকা রুশ বাহিনীর কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করেছে।
রাতে দেওয়া ভিডিও ভাষণে জেলেনস্কি বলেছেন, দক্ষিণ ও পূর্বে ইউক্রেইনের সেনারা শত্রুদের ধ্বংস করে চলছে, ইউক্রেইনকে ক্রমশ শত্রুমুক্ত করছে।
“সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ মানে হচ্ছে সন্ত্রাসীদের ধ্বংস করা। এটা নিশ্চিত যে শয়তান রাষ্ট্রটি আর কখনোই ইউক্রেইনে তার শয়তানি নিয়ে আসার সুযোগ পাবে না,” বলেছেন তিনি।
ইউক্রেইনের স্থলবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল ওলেকসান্দর সিরিস্কিয়ি টেলিগ্রামে বলেছেন, তার বাহিনী বাখমুতের ধারে বেশ খানিকটা অগ্রসর হতে পেরেছে। কয়েক মাসের যুদ্ধশেষে গত মাসে পূর্বাঞ্চলীয় এই শহরটি রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনারের দখলে চলে যায়।
উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় শহর কুপিয়ানস্কে ইউক্রেইনকে তুমুল রুশ আক্রমণ মোকাবেলা করতে হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন সিরিস্কিয়ি।
ইউক্রেইনের সেনারা ধীরে ধীরে, ছোট ছোট কিন্তু দৃঢ় পদক্ষেপে দক্ষিণের যুদ্ধক্ষেত্রে অগ্রসর হচ্ছে বলে দাবি করেছেন এদিকে ইউক্রেইনের উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী হান্না মালিয়ার।
“আমরা এক এক মিটার করে ভূমি শত্রুদের কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছি,” বলেছেন তিনি।
মালিয়ার বলেছেন, রুশ সেনারা বিস্তৃত এলাকাজুড়ে মাইন পেতে রেখেছে।
মস্কোর বাহিনী জাপোরিজিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লিগুলোকে ঠাণ্ডা করতে ব্যবহৃত পুকুরেও মাইন পেতে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন ইউক্রেইনের সামরিক গোয়েন্দা প্রধান কিরিলো বুদানভ।
মঙ্গলবার কিইভ অঞ্চলে রাশিয়ার ড্রোন হামলায় একাধিক বাণিজ্যিক ও প্রশাসনিক ভবন এবং বেশ কয়েকটি ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলেনস্কির দপ্তর। তবে রাতভর এই হামলায় কেউ হতাহত হয়েছে কিনা, তা জানায়নি তারা।
ইউক্রেইনের জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূপাতিত ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ পড়ে বৈদ্যুতিক লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কিইভ ও দক্ষিণের মাইকোলাইভ অঞ্চলের শত শত বাসিন্দা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
রাশিয়া জাপোরিজিয়ার বিভিন্ন স্থাপনায় ইস্কান্দার ও এস-৩০০ ক্ষেণাস্ত্র ছুড়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেইনের বিমান বাহিনী।
রয়টার্স এসব ভাষ্যের কোনোটিরই সত্যতা যাচাই করে দেখতে পারেনি।
আরও খবর: