ভারতীয় আইনে বিচারে এই জলদস্যুদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা হতে পারে।
Published : 24 Mar 2024, 10:35 AM
লোহিত সাগরে জলদস্যু দমন অভিযানের শততম দিনে ভারতীয় নৌবাহিনী ৩৫ সোমালি জলদস্যুকে মুম্বাই পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে।
প্রায় এক দশক সুপ্ত থাকার পর লোহিত সাগরে জলদস্যুদের দৌরাত্ম্য আবার বেড়েছে। এডেন উপসাগর এবং আরব সাগরের উত্তরাঞ্চলে সামরিকভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ ভারত। ওই অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র পথে জলদস্যুদের দৌরাত্ম্য হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় তাদের দমনে ভারতীয় নৌবাহিনী সমুদ্রে জলদস্যু দমন অভিযান শুরু করেছে।
যে অভিযানের অংশ হিসেবে গত সপ্তাহে তারা মাল্টার পতাকাবাহী কার্গো জাহাজ এমভি রুয়েন জব্দ করে এবং সেটিতে থাকা ১৭ জন ক্রুকে উদ্ধার এবং ৩৫ সোমালি জলদস্যুকে গ্রেপ্তার করে।
গত ডিসেম্বরে সোমালিয়া উপকূল থেকে এমভি রুয়েন ছিনতাই করেছিল জলদস্যুরা। ধারণা করা হয়, এমভি রুয়েন ব্যবহার করেই জলদস্যুরা সম্প্রতি বাংলাদেশের পতাকাবাহী কার্গো জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ ছিনতাই করেছে এবং সেটিতে থাকা ২১ বাংলাদেশি নাবিককে জিম্মি করেছে।
গাজা যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা গত কয়েকমাস ধরে লোহিত সাগরের অন্য অংশে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়ে আসছে। গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র পথে হুতি বিদ্রোহীদের হামলা থেকে বাণিজ্যিক জাহাজ রক্ষা করতে পশ্চিমা বাহিনীগুলো সমুদ্রের ওই অংশ পাহারা জোরদার করেছে।
এই সুযোগে লোহিত সাগরের সোমালি উপকূলীয় অঞ্চল অরক্ষিত হয়ে পড়লে তার সুযোগ নেয় ওই অঞ্চলের জলদস্যুরা। গত বছর নভেম্বর থেকে তাদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়।
গত নভেম্বর থেকে সোমালি জলদস্যুরা ২০টির বেশি বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়ে সেগুলো ছিনতাই করেছে বা ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছে।
ভারতীয় নৌবাহিনী যে ৩৫ জলদস্যুকে আটক করে নিয়ে এসেছে তাদের দেশটির ‘অ্যান্টি-পাইরেসি ল-২০২২’ অনুযায়ী বিচারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।
ভারতের নৌবাহিনীর চিফ অ্যাডমিরাল আর হরি কুমার তাদের অভিযানের শততম দিনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সোমালি জলদস্যুরা এমভি রুয়েন কে ‘মাদার শিপ’ হিসেবে ব্যবহার করে অন্যান্য জাহাজে হামলা চালাত।
ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের এই অভিযোনে ২১টি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে। নৌবাহিনীর পাঁচ হাজার সদস্য অভিযানে অংশ নিয়েছে। তারা এক হাজারের বেশি জাহাজ পরীক্ষা করেছে এবং জলদস্যুদের আক্রমণের অন্তত ১৮টি ঘটনায় সাড়া দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
বলেন, “কোনো কোনো দিন এক ডজনের বেশি যুদ্ধজাহাজ এক সঙ্গে মোতায়েন করা হয়েছে। ওই অঞ্চলকে নিরাপদ ও সুরক্ষিত করতে এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে এই অভিযান পরিচালনা হচ্ছে।
“ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে আমরা সবার আগে সাড়া দেই এবং পছন্দের নিরাপত্তা অংশীদার হওয়ার সব প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে সক্ষম।”
গত বছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের জলদস্যু দমন অভিযান শুরু করে। ওই সময়ে তারা ৫৭টি ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হতে বা সেগুলো উড়ে যেতে দেখেছে।
ভারতীয় নৌবাহিনী হামলার শিকার হওয়া কয়েকটি জাহাজকে সহায়তা করেছে। হুতিদের ড্রোন হামলার পর সেগুলোর ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করেছে বলেও জানান আর হরি কুমার। বলেন, “আমাদের কারো সঙ্গেই বিরোধ নেই।”
আরও পড়ুন:
সোমালি জলদস্যুদের পুনরুত্থান, নৌ বাণিজ্য সংকটে নতুন মাত্রা
ভারতীয় নৌবাহিনীর হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে সোমালি জলদস্যুদের গুলি
এমভি আবদুল্লাহকে উদ্ধারের ‘চেষ্টা করেছিল’ ভারতীয় নৌবাহিনী
১০৯ দিনে ২৩ নৌযান সোমালি জলদুস্যদের নিশানায়, সর্বোচ্চ সতর্কতা