জর্ডানে ড্রোন হামলায় মার্কিন সেনা নিহতের এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের চলমান উত্তেজনায় আরেকটি বিস্ফোরণ্মুখ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
Published : 29 Jan 2024, 12:16 PM
জর্ডানে একটি সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত ও অন্তত ৩৪ জন আহত হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ হামলার জন্য তারা ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে দায় দিয়েছেন।
কিন্তু ইরান রোববারের এই হামলার সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেছে।
৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের হামলার পর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের পাল্টা অবিরাম হামলায় গাজা ভূখণ্ড ধ্বংস হয়ে গেছে, নিহত হয়েছে ২৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এই নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বিরাজমান চরম অস্থিরতার মধ্যেই জর্ডানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে হামলার ঘটনায় মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলের হামলার শুরু হওয়ার পর থেকে জর্ডানের প্রতিবেশী ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন বাহিনীগুলোর অবস্থানে হামলা চালিয়ে আসছে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানানো ইরানপন্থি মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো। ইয়েমেনের ইরানপন্থি গোষ্ঠী হুতিরা লোহিত সাগর ও সংলগ্ন অঞ্চলে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা স্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে হামলা চালাচ্ছে।
কিন্তু জর্ডানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অবস্থানে চালানো প্রথম হামলায়ই প্রথমবারের মতো মার্কিন সেনা নিহতের ঘটনা ঘটলো।
মার্কিন সেনা নিহতের এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের চলমান উত্তেজনায় আরেকটি বিস্ফোরণ্মুখ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এই হামলার প্রতিক্রিয়া অনেকে মার্কিন কর্মকর্তা ইরানকে দায়ী করে মন্তব্য করেছেন। এ পরিস্থিতিতে কোনো দিক থেকে ইরানে কোনো হামলা হলে আরও বড়ো ধরনের যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে আর এ নিয়ে প্রবল উদ্বেগ বিরাজ করছে।
জর্ডানে মার্কিন সেনা নিহতের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, “তিন আমেরিকান সেনার সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের কথা আমাদের জাতি কখনো ভুলবে না। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাদের লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি আমরা বহন করবো। আর কোনো সন্দেহ নেই যারা দায়ী, তাদের সবাইকে আমাদের পছন্দমতো সময়ে ও উপায়ে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, “এটি আমেরিকার জন্য একটি ভয়ঙ্কর দিন ছিল। জো বাইডেনের দুর্বলতা ও আত্মসমর্পণের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আরেকটি ভয়ানক ও শোচনীয় হামলার ঘটনা ঘটল।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীগুলোর ওপর ধারাবাহিক হামলার জন্য ইরান সমর্থিত জঙ্গিরা দায়ী। আমাদের বাছাই করা সময় ও স্থানে আমরা এর জবাব দেবো।”
মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক প্যানেলের রিপাবলিকান চেয়ারম্যান মাইকেল ম্যাকল বলেছেন, “প্রতিরোধ পুনরুদ্ধার ও আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের সুরক্ষায় আমাদের মধ্যপ্রাচ্য নীতি ঢেলে সাজানো দরকার।”
মার্কিন সেনেটের রিপাবলিকান দলীয় নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেছেন, “প্রতিপক্ষদের নিবৃত্ত করার ব্যর্থতার মূল্য জীবন দিয়ে দিতে হল। দ্বিধা ও আধা-পদক্ষেপ নিয়ে এই সহিংস আগ্রাসনের মোকাবেলা করতে পারবো না আমরা। ইরানকে তার আচরণ পরিবর্তন করতে বাধ্য করার জন্য প্রেসিডেন্ট আমেরিকান শক্তি ব্যবহার করতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেবেন, এমন ইঙ্গিত দেখতে পুরো বিশ্ব চোখ রাখছে। আমাদের শত্রুরা সাহসী হয়ে উঠেছে।”
মার্কিন সেনেটের আর্মড সার্ভিসেস কমিটির রিপাবলিকান সদস্য রজার উইকার বলেছেন, “আমাদের অবশ্যই ইরানের লক্ষ্যস্থল ও নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আঘাত হেনে ইরান ও এর ছায়া বাহিনীগুলোর উপর্যুপরি হামলার জবাব দিতে হবে। এ পর্যন্ত বাইডেন প্রশাসন যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তা শুধু আরও হামলা ডেকে এনেছে।”
একই কমিটির ডেমোক্র্যাট সদস্য জ্যাকি রোজেন বলেছেন, “ইরানকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।”
এক বিবৃতিতে মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “হাশেমি রাজ্য জর্ডানের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলা যেকোনো সন্ত্রাসী কর্মের তীব্র নিন্দা জানায় মিশর। মিশর এই স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সহিংসতার সব প্রদর্শন প্রত্যাখ্যান ও সন্ত্রাসবাদের সব ধরনের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।”
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, “আমরা আমাদের মূল্যবোধে ঐক্যবদ্ধ থেকে একটি অভিন্ন শত্রুর বিরুদ্ধ লড়াই করছি।”
হামাসের মুখপাত্র সামি আবু জুহরি মার্কিন বাহিনীর ওপর এই হামলাকে ‘মার্কিন প্রশাসনের জন্য একটি বার্তা’ বলে অভিহিত করেছেন। গাজার নিরপরাধ মানুষদের হত্যা করা বন্ধ না হলে ‘মার্কিন প্রশাসনের পুরো মুসলিম জাহানের মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে’ বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
“গাজায় অব্যাহত আমেরিকান-জায়নবাদী আগ্রাসন আঞ্চলিক বিস্ফোরণের ঝুঁকি তৈরি করেছে,” বলেছেন তিনি; জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
আরও পড়ুন:
জর্ডানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাঘাঁটিতে ড্রোন হামলা, ৩ মার্কিন সেনা নিহত