সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে ভারত ও মালদ্বীপের উচ্চ পর্যায়ের কূটনীতিকদের মধ্যে বৈঠক চলছে।
Published : 14 Jan 2024, 10:20 PM
মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু দিল্লিকে আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে দেশটি থেকে ভারতীয় সব সেনা প্রত্যাহার করে নিতে বলেছেন বলে খবর প্রকাশ করেছে ভারতের সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি।
সম্প্রতি প্রথা ভেঙে চীন সফর করে এসেছেন মুইজ্জু। মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্টরা সাধারণ প্রথম আন্তর্জাতিক সফরে ভারতে যান। এর মধ্য দিয়ে ভারত মহাসাগরের ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রটি প্রভাবশালী প্রতিবেশীদের প্রতি তাদের মিত্রতার প্রদর্শন করে।
কিন্তু মুইজ্জু শুরু থেকেই ভারতবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। নির্বাচনি প্রচারের সময়ই তিনি বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে তিনি ভারতীয় সেনাদের মালদ্বীপে অবস্থান করতে দেবেন না। সেই সূত্র ধরে গত বছর নভেম্বরে ভোটে জিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি দিল্লিকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু তখন সময়ের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।
তবে চীন সফর থেকে ফিরে তিনি এবার ভারতকে সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দিলেন। ৮ থেকে ১২ জানুয়ারি চীন সফর করেন তিনি। দেশে ফেরেন শনিবার।
এ মাসের শুরুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশটির ছোট্ট ইউনিয়ন টেরিটোরি লাক্ষাদ্বীপ সফর করার পর সেই সফরের কিছু ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে তাকে ডুবসাঁতার দিতে দেখা যাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়। স্থানীয়ভাবে লাক্ষাদ্বীপে পর্যটন উৎসাহিত করতে মোদী সেখানে ভ্রমণ করেছিলেন।
মালদ্বীপের তিন উপমন্ত্রী ও কয়েকজন নেতা ওই ছবি, ভিডিওতে মোদীকে নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করেন। মোদীকে ‘জোকার’, ‘সন্ত্রাসী’ এবং ‘ইসরায়েলের হাতের পুতুলও’ আখ্যা দেন তারা। কেউ কেউ মোদীর লাক্ষাদ্বীপ সফরকে গোটা বিশ্বে জনপ্রিয় পর্যটনস্থল মালদ্বীপ থেকে পর্যটক ভাগিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা হিসাবেও দেখেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স এ তিন উপমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে তোলপাড় হয়। দুই দেশের মধ্যে দেখা দেয় কূটনৈতিক টানাপড়েন। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে তিন উপমন্ত্রীকে বরখাস্ত করে মালদ্বীপ।
মালদ্বীপের বিরোধী দলগুলোও তিন উপমন্ত্রীর মন্তব্যের সমালোচনা করেন। তবে এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু বলেন, “আমরা হয়তো ছোট দেশ, কিন্তু আমাদের বিদ্রুপ করার অধিকার আরো নেই।”
এদিকে, ভারতীয় সেনা প্রত্যাহার বিষয়ে রোববার মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের পাবলিক পলিসি সেক্রেটারি আবদুল্লাহ নাজিম ইব্রাহিম বলেন, ভারতীয় সেনা কর্মকর্তারা মালদ্বীপে অবস্থান করতে পারবেন না। প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু ও তার প্রশাসনের নীতি এটাই।”
মালদ্বীপে বর্তমানে ৮৮ জন ভারতীয় সেনা দায়িত্বরত আছেন বলে জানা গেছে।
এনডিটিভি জানায়, ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে ভারত ও মালদ্বীপের উচ্চ পর্যায়ের কূটনীতিকদের (কোর গ্রুপ) মধ্যে বৈঠক চলছে। প্রথম বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় রোববার সকালে রাজধানী মালেতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সদর দফতরে। মালদ্বীপে ভারতের হাই কমিশনার মুনু মাহাওয়ার ওই বৈঠকে অংশ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
নাজিম রোববারের বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে আরও বলেন, ওই বৈঠকের এজেন্ডা ছিল আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার অনুরোধ জানানো।
ভারতের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, “বৈঠক চলাকালীন, উভয় পক্ষ চলমান উন্নয়ন সহযোগিতা প্রকল্পের বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা সহ অংশীদারিত্ব বাড়ানোর পদক্ষেপগুলি চিহ্নিত করে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার সম্পর্ক বিস্তৃত করার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে।”
উভয় পক্ষের সুবিধা অনুযায়ী দ্য হাই লেভেল কোর গ্রুপের পরবর্তী বৈঠক ভারতে অনুষ্ঠিত হবে বলেও ওই বিবৃতিতে জানানো হয়।