প্রতি বছর ভারত এবং রাশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি পর্যটক মালদ্বীপে যায়।
Published : 08 Jan 2024, 08:46 PM
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মালদ্বীপের তিন উপমন্ত্রীর ‘অপমানজনক’ মন্তব্যের প্রতিবাদে ভারতের দ্বিতীয় বৃহৎ অনলাইন ট্রাভেল বুকিং প্ল্যাটফর্ম ‘ইজিমাইট্রিপ’ সে দেশে তাদের সব ফ্লাইট বুকিং স্থগিত করেছে।
সোমবার কোম্পানিটির সহ প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী পরিচালক প্রশান্ত পিট্টি বলেন, মালদ্বীপ ভ্রমণের বুকিং গ্রহণ ‘অনির্দিষ্টকালের’ জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
পর্যটক নির্ভর দেশ মালদ্বীপের জন্য যেটি বড় ধাক্কা হয়ে উঠতে পারে। বিশ্ব ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারত মহাসাগরের এই ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রটির মোট আয়ের একতৃতীয়াংশ আসে পর্যটন খাত থেকে। আর প্রতিবছর ভারত ও রাশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি পর্যটক মালদ্বীপে যান।
প্রশান্ত পিট্টি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “আমরা এই পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি কারণ যে কোনও আত্মমর্যাদাশীল জাতির এটি করা উচিত। মালদ্বীপ সরকারের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে আমরা যে বিবৃতি শুনেছি তা দেশের জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর।”
ঐতিহ্যগতভাবে দিল্লি ও মালে বন্ধু এবং দুই দেশের মধ্যে বরাবরই সুসম্পর্ক বজায় থাকে। কিন্তু এবার সেই ধারায় ছেদ পড়ার কারণ মালদ্বীপের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু। গত বছর নভেম্বরে নির্বাচনে জিতে দেশটির ক্ষমতায় বসেন চীনঘেঁষা মুইজ্জু। তিনি নির্বাচনের শুরু থেকেই মালদ্বীপকে ভারতের প্রভাব মুক্ত করার (ইন্ডিয়া আউট) প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই প্রতিশ্রুতি দিয়েই তিনি ভোটে জিতেছেন এবং ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজও শুরু করেছেন। তিনি মালদ্বীপে নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত ভারতীয় সেনাদের দেশত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়ও, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক সফরে তিনি ৮ থেকে ১২ জানুয়ারি চীনে থাকবেন। অথচ, অতীতে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টরা নিজেদের প্রথম আন্তর্জাতিক সফরের জন্য ভারতকে বেছে নিতেন। এর মাধ্যমে তারা প্রভাবশালী প্রতিবেশীর প্রতি নিজেদের মিত্রতার প্রদর্শন করতেন।
বেইজিং এবং দিল্লি উভয়ই মালে কে তাদের প্রভাব বলয়ে রাখতে চায়।
মোদীকে কটাক্ষ:
সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশটির ছোট্ট ইউনিয়ন টেরিটোরি লাক্ষাদ্বীপ সফর করার পর সেই সফরের কিছু ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে তাকে ডুবসাঁতার দিতে দেখা যাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়। স্থানীয়ভাবে লাক্ষাদ্বীপে পর্যটন উৎসাহিত করতে মোদী সেখানে ভ্রমণ করেছিলেন।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট হলেন চীনঘেঁষা মোহাম্মদ মুইজ্জু
মোদীকে নিয়ে অপমানকর মন্তব্য, মালদ্বীপে তিন উপমন্ত্রী বরখাস্ত
মালদ্বীপের তিন উপমন্ত্রী ও কয়েকজন নেতা ওই ছবি, ভিডিও নিয়ে মোদীর বিরুদ্ধে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করেন। মোদীকে ‘জোকার’, ‘সন্ত্রাসী’ এবং ‘ইসরায়েলের হাতের পুতুলও’ আখ্যা দেন তারা। কেউ কেউ মোদীর লাক্ষাদ্বীপ সফরকে গোটা বিশ্বে জনপ্রিয় পর্যটনস্থল মালদ্বীপ থেকে পর্যটক ভাগিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা হিসাবেও দেখেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স এ তিন উপমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে তোলপাড় হয়। অনেক ভারতীয় মালদ্বীপে নিজেদের অবকাশ যাপনের পরিকল্পনা বাতিল করেন, যাদের মধ্যে দেশটির নানা ক্ষেত্রের তারকারাও রয়েছেন। মালদ্বীপে ভারতীয় হাই কমিশন থেকেও রোববার এ বিষয়ে প্রবল উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বিতর্ক থামাতে মালদ্বীপ সরকার দ্রুত তাদের তিন উপমন্ত্রী মরিয়াম শিউনা, মালাশা শরিফ ও আবদুল্লাহ মাহজোম মাজিদকে বরখাস্ত করে।
কিন্তু তাতে দিল্লির মন গলেছে বলে মনে হয় না। বরং দিল্লি সে দেশে মালদ্বীপের হাই কমিশনার ইব্রাহিম শাহীবকে ডেকে পাঠায়। সোমবার ইব্রাহিম শাহীবকে দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বের হতে দেখা গেছে বলে জানায় বিবিসি।
একই দিন ভারতীয় হাই কমিশনার মুনু মহাওয়ার মালদ্বীপের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন। তবে মালদ্বীপের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক্স এ এক পোস্টে মুনু মহাওয়ারের সেখানে যাওয়ার পরিকল্পনা ‘আগেই নির্ধারিত ছিল’ বলে জানানো হয়েছে।
নতুন বছরে ২০ লাখ পর্যটক আকর্ষণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে মালদ্বীপ।