পাকিস্তানে এক আত্মঘাতী হামলা কেড়ে নিল শত পুলিশের প্রাণ

পাকিস্তান তালেবানের এক কমান্ডার প্রাথমিকভাবে হামলার দায় স্বীকার করলেও গোষ্ঠীটি পরে দাবি করেছে, এর সঙ্গে তারা জড়িত নয়।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Jan 2023, 05:56 AM
Updated : 31 Jan 2023, 05:56 AM

পাকিস্তানের পেশোয়ার শহরের পুলিশ লাইনস এলাকার ভেতর একটি মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০০ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার কমিশনার রিয়াজ মাহসুদ।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, মসজিদের ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ এখনো চলছে। তাই নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে এ পুলিশ কর্মকর্তা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এ ঘটনায় হতাহতদের নগরীর বৃহৎ লেডি রিডিং হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হাসপাতালের একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানান, ‘‘এখন পর্যন্ত আমাদের এখানে ১০০টি মৃতদেহ আনা হয়েছে।”

নিহত ১০০ জনের মধ্যে ৯৭ জনই পুলিশ কর্মকর্তা বলে মঙ্গলবার পার্লামেন্টে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ।

সোমবারের ওই হামলায় আরও অন্তত ১৭০ জন আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা সঙ্কটজনক বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন পেশোয়ারের লেডি রিডিং হাসপাতালের (এলআরসি) মুখপাত্র মোহাম্মদ আসিম।

পাকিস্তান তালেবান নামে পরিচিত জঙ্গি গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সঙ্গে ইসলামাবাদ সরকারের যুদ্ধবিরতি নভেম্বরে শেষ হওয়ার পর থেকে দেশটিতে সন্ত্রাসী হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো গোষ্ঠী পেশোয়ারের হামলার দায় স্বীকার না করলেও এর জন্য টিটিপিকেই সন্দেহ করা হচ্ছে।

টিটিপির এক কমান্ডারও প্রাথমিকভাবে হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে গোষ্ঠীটি দাবি করেছে, তারা এর সঙ্গে জড়িত নয়।

ডন জানিয়েছে, সোমবার পেশোয়ারের অত্যন্ত সুরক্ষিত পুলিশ লাইনস এলাকার ভেতরে মসজিদটিতে জোহরের নামাজ চলার সময় এক আত্মঘাতী হামলাকারী বোমা বিস্ফোরণে নিজেকে উড়িয়ে দেয়।

মসজিদটিতে তখন প্রায় তিন থেকে চারশ লোক ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদের অনেকেই পুলিশ সদস্য বা কর্মকর্তা।

হামলাকারী কীভাবে এই এলাকায় প্রবেশ করেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করেই হামলাটি চালানো হয়েছে বলে ধারণা তদন্তকারীদের।

পেশোয়ারের পুলিশ প্রধান মুহাম্মদ ইজাজ খান বলেন, বোমা নিয়ে হামলাকারী কম্পাউন্ডের সবচেয়ে সুরক্ষিত স্থানে পৌঁছে গেছেন।

“সেখানে নিরাপত্তায় গাফিলতি হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট। আমরা বিস্ফোরকের চিহ্ন খুঁজে পেয়েছি,”বলেছেন তিনি।

মসজিদটি পেশোয়ারের সবচেয়ে সুরক্ষিত এলাকাগুলোর (রেড জোন) একটিতে অবস্থিত। এই এলাকায় প্রাদেশিক পুলিশের সদরদপ্তর, গোয়েন্দা সংস্থা ও সন্ত্রাস দমন বিভাগের কার্যালয় আছে।

এ হামলার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘‘যারা পাকিস্তানের সুরক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে সন্ত্রাসীরা দেশ জুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে।”

‘হামলাকারীদের সঙ্গে ইসলাম ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

এক প্রত্যক্ষদর্শী পাকিস্তানের সংবাদ চ্যানেল জিও টিভিকে বলেছেন, “জোহরের নামাজ চলাকালে বিস্ফোরণটি ঘটে, এতে দোতলা মসজিদটি ভেঙে পড়েছে।”

বিস্ফোরণের সময় তিনি মসজিদের ঠিক সামনে ছিলেন বলে জানিয়েছেন।

পাকিস্তানের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম পিটিভির দেখানো ফুটেজে পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ছোটাছুটি করে ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে আহতদের কাঁধে করে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।

ঘটনাস্থল থেকে ডনের সংবাদাতা জানিয়েছেন, মসজিদ ভবনের এটি অংশ ধসে পড়েছে এবং সামনের সারিতে যারা নামাজ পড়ছিলেন তারা ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগে গত বছর পেশোয়ারের কোচা রিসালদার এলাকার একটি শিয়া মসজিদে আত্মঘাতী হামলায় ৬৩ জন নিহত হয়েছিল।

আগের খবর:

Also Read: পাকিস্তানে মসজিদে বোমা হামলায় নিহত বেড়ে ৫৯

Also Read: পাকিস্তানে মসজিদে বোমা হামলায় নিহত ৩২, আহত ১৫০