ইমরান খান গুলিবিদ্ধ হলেও আশঙ্কামুক্ত; তার সমর্থকরা করছেন বিক্ষোভ।
Published : 04 Nov 2022, 12:46 AM
ক্ষমতা হারিয়ে নতুন নির্বাচনের দাবিতে লং মার্চে নামা ইমরান খানকে গুলি করা হলেও প্রাণে বেঁচে যান তিনি। কিন্তু এই ঘটনায় তিন ব্যক্তিকে দায়ী করেছেন পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
তারা হলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ এবং প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর শীর্ষ কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ফয়সাল।
ইমরানের দল তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) মহাসচিব আসাদ উমর একথা জানিয়েছেন বলে পাকিস্তানের গণমাধ্যমে খবর এসেছে।
গুলিবিদ্ধ হলেও ইমরান খান আশঙ্কামুক্ত বলে তার দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে একজন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন।
দলীয় চেয়ারম্যান ইমরান গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর পিটিআইর নেতা-কর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। বিক্ষোভ চলছে করাচি, লাহোরসহ সব শহরেই; বিভিন্ন স্থানে সড়কও আটকে দিয়েছে তারা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের উপর গুলিবর্ষণের নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতা। প্রতিবেশী দেশ ভারত বলেছে, তারা সার্বিক পরিস্থিতির উপর গভীর নজর রাখছে।
اندرونی اور بیرونی ملک دشمنوں کے خلاف تن تنہاء ڈٹ گیا، نہ ڈرا، نہ جھُکا، نہ بکا، وقت کے فرعونوں سے لڑتے لہو لہان ہوگیا، پھر بھی مسکراتا رہا، اپنے کارکنان کے حوصلے بڑھاتا رہا، ایسا ہے میرا قائد، ایسا ہے میرا کپتان، میرے خان تینوں رب دیاں رکھاں#عمران_خان_ہماری_ریڈ_لائن_ہے pic.twitter.com/efxBGuHYi0
— Hasnain Dreshak (@HasnainDreshak) November 3, 2022
জনপ্রিয় ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান ২০১৮ সালে ভোটে জিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। দেশটির রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারকারী সেনাবাহিনীর সমর্থন তখন তার দিকে থাকলেও কিছু দিন পর তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়।
সেনা সমর্থন হারানো ইমরানের বিরুদ্ধে এই বছরের শুরুতে জোট বেঁধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে দেশটির বড় দুই রাজনৈতিক দল। তাতে হেরে গত এপ্রিলে ইমরানের সরকারের পতন ঘটলে প্রধানমন্ত্রী হন মুসলিম লিগের শাহবাজ শরিফ, যিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই।
ক্ষমতা হারানো ইমরান নতুন নির্বাচনের দাবি তুলে পাকিস্তানে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ লংমার্চের ডাক দেন। গত ২৯ অক্টোবর লাহোর থেকে শুরু হয় এই কর্মসূচি।
রাজধানী ইসলামাবাদের পথে চার দিন পর বৃহস্পতিবার পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদে সমাবেশের জন্য তৈরি হলে সেখানে হয় গুলিবর্ষণ।
পাকিস্তানের দৈনিক ডন জানিয়েছে, ওয়াজিরাবাদে যে কনটেইনারে মঞ্চ বানিয়ে এই সমাবেশ হচ্ছিল, সেখানে গুলিবর্ষণের পর ইমরানকে ডান পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় অন্য একটি গাড়ি সরিয়ে নিতে দেখা যায়।
فیصل آباد :
— PTI (@PTIofficial) November 3, 2022
سیکرٹری اطلاعات پاکستان تحریک انصاف میاں فرخ حبیب کی زیر قیادت احتجاج جاری- #عمران_خان_ہماری_ریڈ_لائن_ہے pic.twitter.com/rnHe7wZ8aY
ইমরানের ডান হাঁটুর নিচে গুলি লেগেছে বলে রয়টার্সকে জানান পিটিআই’র মুখপাত্র ফাওয়াদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, “ইমরান খান এবং (দলীয় সহকর্মী) ফয়সাল জাভেদ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। একটি বুলেট ইমরানের পায়ে হাঁটুর নিচে আঘাত করেছে। দুজনকেই চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
ইমরান খানের এক সময়ের স্বাস্থ্য সহকারী ডা. ফয়সাল সুলতান হাসপাতালের বাইরে সংবাদকর্মীদের বলেন, “ইমরান খানের অবস্থা স্থিতিশীল। তার পায়ের এক্স-রে ও স্ক্যান করে দেখা গেছে, ভেতরে গুলির টুকরো রয়েছে।”
পরে এক ভিডিওতে পাঠিয়ে বিবৃতি দেন পিটিআই মহাসচিব আসাদ উমর, যেখানে তিনজনকে এই হামলার জন্য দায়ী করেন তিনি।
سیکرٹری جنرل پاکستان تحریک انصاف اسد عمر اور میاں اسلم اقبال کا عمران خان پر بزدلانہ حملے کے حوالے سے اہم ترین بیان
— PTI (@PTIofficial) November 3, 2022
َ#عمران_خان_ہماری_ریڈ_لاین_ہے pic.twitter.com/AMbSJiZFO2
পাকিস্তানের জিও নিউজের প্রতিবেদনে তিনজনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সানাউল্লাহর কথা বলা হয়। আরেকজনের বিষয়ে বলা হয়, একজন সেনা কর্মকর্তা। তবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে মেজর জেনারেল ফয়সালের নাম উল্লেখ করা হয়।
আসাদ উমর বলেন, “ইমরান খান আমাদের বলেছেন, এই তিনজন তার উপর এই ধরনের হামলা চালাতে পারে বলে তার কাছে তথ্য ছিল।”
আসাদ উমরের এই ভিডিও বার্তা প্রচারের উপর নিষেধাজ্ঞা সরকার দিয়েছে বলে জিও নিউজের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়।
হামলার পরপরই পিটিআই সমর্থকরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সানাউল্লাহর বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
এদিকে হামলার সময়ের একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায়, ইমরানের একজন সমর্থক হাতে অস্ত্র ধরে থাকা হামলাকারীকে পেছন থেকে ধরে ফেলেছেন। পরে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জিও নিউজ সন্দেহভাজন ওই হামলাকারীর একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। যেখানে হামলাকারী স্বীকার করেন, ইমরানকে হত্যা করাই তার উদ্দেশ্য ছিল।
কেন এ কাজ করেছেন- প্রশ্নে ওই ব্যক্তি বলেন, “আমি এটা এজন্য করেছি যে, ইমরান লোকজনকে বিভ্রান্ত করছেন। আমি তা মেনে নিতে পারছিলাম না। এজন্য তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। শুধুমাত্র ইমরানকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম, আর কাউকে না। তাকে মেরে ফেলার সম্পূর্ণ চেষ্টা করেছিলাম।”
কবে থেকে হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, লাহোর থেকে ইমরান যখন বিক্ষোভযাত্রা শুরু করেন, তখন থেকেই তিনি পরিকল্পনা করা শুরু করেন।
তার সঙ্গে এই পরিকল্পনায় আর কেউ জড়িত নয় বলেও দাবি করেন ওই ব্যক্তি।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, সমাবেশস্থলে দুজন হামলাকারী ছিলেন। তাদের একজনের হাতে পিস্তল এবং একজনের হাতে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল ছিল।
এদিকে হামলাকারীর সাক্ষাৎকার প্রচারের পর দায়িত্বে অবহেলার জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সানাউল্লাহ আদেশ দিয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।
ইমরান মানুষকে বিভ্রান্ত করার কারণে তাকে মারতে চেয়েছি, বললেন হামলাকারী
অন্যদিকে পিটিআই থেকে টুইট করে বিভিন্ন নগরীতে তাদের কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভের খবর জানানো হয়েছে। ফয়সালাবাদে পিটিআই নেতা ফারুখ হাবিবের নেতৃত্বে বিক্ষোভ চলছে।
রাওয়ালপিন্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সানাউল্লাহর বাসভবনের বাইরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন পিটিআই কর্মীরা। তারা বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধেও স্লোগান দিচ্ছে বলে জানায় ডন।
করাচিতে পিটিআই সমর্থকরা সড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করলে পুরো নগরজুড়ে ভয়ঙ্কর যানজট তৈরি হয়। করাচির শারে ফয়সাল, নর্থ নাজিমাবাদ, লন্ধি, কাউইদাবাদ, নর্থ করাচি, হাব রিভার রোড ও মাউরিপুরে বিক্ষোভ হচ্ছে।
বেলুচিস্তানের কোয়েটা শহরেও ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সেখানকার বিমানবন্দর সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। পেশাওয়ারে সেনা কমান্ডারের বাড়ির বাইরেও বিক্ষোভ হচ্ছে। খাইবার পাখতুনখাওয়াতেও বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।
ইমরানের উপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের নেতারা।
ইমরান খানের ওপর হামলার প্রতিক্রিয়ায় দেশটির ঘটনাবলীর ওপর ‘গভীরভাবে নজর রাখা হচ্ছে’ বলে জানিয়েছে ভারত।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচিকে উদ্ধৃত করে এনডিটিভি জানিয়েছে, “সবেমাত্র ঘটনা ঘটেছে। আমরা গভীরভাবে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছি এবং চলমান পরিস্থিতি আমরা পর্যবেক্ষণ করতে থাকব।”