দাবানলে বহু গ্রাম ও অবকাশযাপন কেন্দ্র হুমকির মুখে পড়েছে, এসব এলাকা থেকে কয়েক হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
Published : 26 Jul 2023, 04:55 PM
ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়া ব্যাপক দাবানলে আলজেরিয়া, ইতালি ও গ্রিসে ৪০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
দাবানলে বহু গ্রাম ও অবকাশযাপন কেন্দ্র হুমকির মুখে পড়েছে, এসব এলাকা থেকে কয়েক হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বিবিসি জানায়, রোডস দ্বীপ থেকে বিমানযোগে আরও মানুষকে সরিয়ে নিতে প্রস্তুতি শুরু করেছে গ্রিস। দেশটির করফু ও এভিয়া দ্বীপেও দাবানল শুরু হয়েছে।
গ্রিসে দীর্ঘদিন ধরে চলা দাবদাহ প্রশমিত হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, বরং কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪৪ সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেশী ইতালির সিসিলি ও পুইয়াতে দাবানলের কারণে কয়েক হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তীব্র বাতাস ও শুষ্ক গাছপালার কারণে আগুন নেভাতে ও আগুনের পথে বাধা তৈরি করতে দমকল কর্মীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তবে দাবানলের কারণে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ভূমধ্যসাগরের অপর তীরে উত্তর আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়ায়। এখানে ১০ সেনাসহ ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
দেশটির বউমারডেস, বউরাতুন, তিজি ওউজৌ, জিজেল, বেজাইয়া ও স্কিকদা প্রদেশে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। রাজধানী আলজিয়ার্সের পূর্বে উপকূলীয় প্রদেশ বেজাইয়ায় লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার সময় আগুনের মধ্যে আটকা পড়ে অনেকের মৃত্যু হয়। দাবানলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত প্রদেশটিতে এ পর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।
আলজেরিয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোববারের পর থেকে ৮০ শতাংশ আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়েছে, তারপরও প্রায় ৮০০০ কর্মী, ফায়ার ট্রাক ও কিছু বিমানসহ বিশাল অগ্নিনির্বাপণ প্রচেষ্টা চলমান আছে।
প্রতিবেশী তিউনিসিয়াও আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। আলজেরিয়ার সীমান্তবর্তী তিউনিসীয় উপকূলীয় শহর মিলুলা থেকে ৩০০ জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
গ্রিসে বেসামরিক সুরক্ষা মন্ত্রণালয় বুধবার দেশটির ১৩টি অঞ্চলের মধ্যে ছয়টিতে দাবানলের ‘চরম বিপদ’ এর সতর্কতা জারি করেছে।
ওয়াল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন গোষ্ঠীর জলবায়ু বিজ্ঞানীদের একটি দল বলেছে, ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চল, উত্তর আমেরিকা ও চীনে চলতি মাসে যে তীব্র দাবদাহ চলছে তা মানুষের কারণে সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়া কার্যত অসম্ভব ছিল।
গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের উত্তরে এভিয়া দ্বীপে কানাডাএয়ারের তৈরি একটি অগ্নিনির্বাপণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে এর দুই পাইলট নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে দ্বিপটির এক প্রত্যন্ত গ্রামীণ খুপরিতে এক ব্যক্তির পোড়া মৃতদেহ পাওয়া গেছে।
গত কয়েকদিনে রোডস দ্বীপের দক্ষিণাঞ্চলের ঘরবাড়ি ও রিসোর্টগুলো থেকে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দ্বীপটির বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রোববার থেকে মঙ্গলবারের মধ্যে ৪০টিরও বেশি জরুরি ফ্লাইটে পাঁচ হাজারেরও বেশি পর্যটক রোডস ছেড়ে গেছেন।
গ্রিসে প্রতি পাঁচটি চাকরির একটি পর্যটন খাতের। রোডস ও অন্য অনেক দ্বীপের জন্য এই শিল্প আয়ের প্রধান উৎস।
এভিয়া ও করফু দ্বীপ থেকেও কয়েক হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গ্রিসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন গন্তব্য ক্রিট দ্বীপ উচ্চ সতর্কাবস্থায় আছে।
ইতালি বিপরীমুখি চরম আবহাওয়া পরিস্থিতির মোকাবেলা করছে, দেশটির উত্তরাঞ্চলে প্রাণঘাতী ঝড় বয়ে গেছে আর একই সময় দক্ষিণে সিসিলি ও অন্য কয়েকটি অঞ্চল দাবানলে পুড়ছে।
সিসিলির পালের্মোতে অগ্নিদগ্ধ একটি রিসোর্টে সত্তরোর্ধ এক দম্পতির মৃতদেহ পাওয়া গেছে। নগরীর বিমানবন্দরের সীমানার কাছে দাবানল পৌঁছে যাওয়ার পর ঘটনাটি ঘটেছে। পালার্মোর কাছে দাবানলে ৮৮ বছর বয়সী এক নারীরও মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার দ্বীপটির ক্যাতানিয়া শহরে তাপমাত্রা ৪৭ দশমিক ৬ সেলসিয়াসে ওঠার পর তীব্র গরমে কিছু ক্যাবল পুড়ে যায়। এরপর থেকে শহরের বেশ কয়েকটি অংশ বিদ্যুৎ ও পানিবিহীন অবস্থায় আছে।
সিসিলি পূর্বে ইতালির মূল ভূখণ্ডের ক্যালাব্রিয়ায় নিজ বাড়িতে আগুনের মধ্যে আটকা পড়ে ৯৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে তার মেয়ে ও জামাই দগ্ধ হয়েছেন।
ইতালির অ্যাড্রিয়াটিক উপকূলের ফোজ্জা অঞ্চলে দাবানলের কারণে হোটেল ও ক্যাম্পসাইট থেকে ২০০০ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দাবানল নিকটবর্তী জাতীয় উদ্যান থেকে ভিয়েস্তে শহরেও পৌঁছে গেছে।
ইতালির উত্তরাঞ্চলে মঙ্গলবার ঝড় চলাকালে গাছ পড়ে দু’জন নিহত হন।
বুধবার ভোররাতের দিকে ফ্রান্সের ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ কর্সিকায়ও দাবানল শুরু হয়। এর পাশপাশি ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশ স্পেন ও তুরস্ক থেকেও দাবানলের খবর পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন:
একদিকে ঝড় অন্যদিকে দাবানলে বিপর্যস্ত ইতালি