এবার মোদীকে নিয়ে বিবিসি’র তথ্যচিত্র প্রদর্শনের ঘোষণা ভারতীয় শিক্ষার্থীদের

দিল্লির বিশ্ববিদ্যালয়ে মোদীকে নিয়ে বিবিসি’র তথ্যচিত্র প্রদর্শনে ‘বাধা দেওয়ায়’ দেশটির বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রয়টার্স
Published : 25 Jan 2023, 01:48 PM
Updated : 25 Jan 2023, 01:48 PM

এবার ভারতের সব রাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে তৈরি বিবিসি-র তথ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির ছাত্রদের সংগঠন এসএফআই।

‘দ্য স্টুডেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া’র (এসএফআই) সাধারন সম্পাদক বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তাদের এ পরিকল্পনার কথা জানান।

ছাত্রদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে এবং বিরোধী দলের ছাত্ররা আয়োজকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে মঙ্গলবার রাজধানী দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে মোদীকে নিয়ে তৈরি বিবিসি-র তথ্যচিত্র ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোশ্চেন’ এর প্রদর্শনীতে বিঘ্ন ঘটায়।

যদিও বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ঐশি ঘোষ বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলেও ওইদিন কয়েকশ ছাত্র মোবাইল ফোনে এবং ল্যাপটপে তথ্যচিত্রটি দেখেছেন।

তিনি বলেন, ‘‘নিশ্চিতভাবে প্রশাসন থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।

‘‘এ ধরনের সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আমরা পুরো দেশজুড়ে ক্যাম্পাসগুলোকে এই তথ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করতে উৎসাহ দিচ্ছি।”

শুধু বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে নয় বরং ডানপন্থি ছাত্রদের একটি দল তথ্যচিত্র দেখতে আসা শিক্ষার্থীদের দিকে ইট নিক্ষেপ করেছে বলেও জানান ছাত্র নে‍তা ঐশি। যাতে বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হয়েছেন। ছাত্ররা এ বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছে বলেও জানান তিনি।

Also Read: মোদীকে নিয়ে বিবিসি’র তথ্যচিত্র প্রদর্শনে এবার ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিষেধাজ্ঞা

ছাত্র ইউনিয়ন থেকে বিবিসি-র তথ্যচিত্রটি প্রদর্শনের আয়োজনের ঘোষণা দেওয়ার পর জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই আয়োজনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বলেছিলেন, যারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে শান্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে।

রয়টার্স থেকে বিদ্যুৎ না থাকার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মিডিয়া কোঅর্ডিনেটরকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।

ডানপন্থি ছাত্রদের সংগঠনের একজন মুখপাত্রের কাছে তাদের বিরুদ্ধে হামলার যে অভিযোগ উঠেছে যে বিষয়ে মন্তব্য করতে মোবাইলে বার্তা পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তারা সাড়া দেয়নি বলেও জানায় রয়টার্স।

পুলিশও এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো তথ্য দিতে রাজি হয়নি।

গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে তৈরি বিবিসি-র তথ্যচিত্রকে কেন্দ্র করে ভারতে রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। রাজ্যে রাজ্যে বিরোধীরা তথ্যচিত্র প্রদর্শনী করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

গুজরাটে ওই দাঙ্গার সময় মোদী পশ্চিমাঞ্চলীয় এই রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। সেবারের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় সরকারি হিসাবেই এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন মুসলমান।

দাঙ্গায় প্রকৃত নিহতের সংখ্যা সরকারি সংখ্যার দ্বিগুণের বেশি বলে অনুমান একাধিক মানবাধিকার সংস্থার।

হিন্দু তীর্থযাত্রীবাহী একটি ট্রেনে আগুন ধরে ৫৯ জনের মৃত্যুর পর গুজরাটে ওই দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিল।

দাঙ্গা রোধে মোদী কার্যকর ব্যবস্থা নেননি, এমনকি নিরাপত্তা বাহিনীকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিলেন বলে অনেকেই অভিযোগ করেন।

ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এই শীর্ষ নেতা অবশ্য প্রথম থেকেই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

দাঙ্গায় মোদী ও অন্যদের ভূমিকা তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের নিয়োগ দেওয়া বিশেষ তদন্ত দলও ২০১২ সালে দেওয়া তাদের ৫৪১ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে গুজরাটের তখনকার মুখ্যমন্ত্রীকে বিচারের আওতায় আনার মতো কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে।

মোদী এরপর দলের প্রধান হন; তার হাত ধরেই বিজেপি ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে জিতে কেন্দ্রের ক্ষমতায় বসে। নির্বাচনে জিতে তারা ২০১৯ সালে ফের সরকার গড়ে।

গত সপ্তাহে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে বিবিসি-র তথ্যচিত্র ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোশ্চেন’ কে বিতর্কিত কাহিনী ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে বানানো ‘অপপ্রচার’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন।

পরে শনিবার এক টুইটে ভারত সরকারের উপদেষ্টা কাঞ্চন গুপ্ত জানান, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের অধীনে জরুরি ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে দেশটির সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই তথ্যচিত্র প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশ জারি করেছে। এমনকী তথ্যচিত্রের কোনো ক্লিপও শেয়ার করা যাবে না।

বিবিসি-র দাবি, ‘বিস্তারিত গবেষণার’ মাধ্যমে তথ্য যাচাই-বাচাই করে তারা ওই তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছে। যেখানে নানা ক্ষেত্রের মানুষদের বক্তব্য ও মতামত তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে মোদীর দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) লোকজনের প্রতিক্রিয়াও রয়েছে।