অনাহারে থাকা মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকায় শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে। মিশরের সঙ্গে গাজার সীমান্তটাই এখন মানুষের এখান থেকে বের হওয়ার একমাত্র পথ।
Published : 11 Dec 2023, 10:20 PM
গাজাজুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে সোমবার আক্রমণ শানিয়েছে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। ওদিকে, ফিলিস্তিনিরা এবং আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, অনাহারে থাকা মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকায় জনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে। এতে দলে দলে মানুষের মিশরে চলে যাওয়ার শঙ্কা বাড়ছে।
দুই মাসেরও বেশি সময় আগে যুদ্ধ শুরুর সময় থেকে গাজা পুরোপুরি অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। মিশরের সঙ্গে গাজার সীমান্তটাই এখন মানুষের এখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ।
যুদ্ধের কারণে গাজার ২৩ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছে। অধিবাসীরা বলছে, জনাকীর্ণ এই ভূখন্ডে আশ্রয় এবং খাবার পাওয়া অসম্ভব হয়ে উঠেছে। লড়াইয়ে এরই মধ্যে প্রায় ১৮ হাজার মানুষ মারা গেছে। আর সংঘাত ক্রমেই বাড়ছে।
গাজাবাসীরা বলছে, হামলা থেকে প্রাণ বাঁচাতে মানুষ বারবার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পালাতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে তারা ক্ষুধা, ঠান্ডার পাশাপাশি বোমা হামলাতেও মরছে। ত্রাণের ট্রাকগুলোতে মরিয়া হয়ে হামলে পড়ছে মানুষ। জিনিসের দামও আকাশছোঁয়া।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) প্রধান নির্বাহী পরিচালক কার্ল স্কাউ বলেন, ত্রাণের ট্রাকগুলো এমনকি রাস্তার মোড়ে গতি কিছুটা কমালেও মরিয়া অধিবাসীদের কবলে পড়ে থামতে বাধ্য হওয়ার ঝুঁকি থাকছে।
“গাজার জনসংখ্যার অর্ধেকই অনাহারে আছে। ১০ জনে ৯ জন মানুষই প্রতিদিন খাবার পাচ্ছে না” বলে গত শনিবার জানান তিনি। এক ফিলিস্তিনি রয়টার্স বার্তা সংস্থাকে বলেছেন, তিনি তিনদিন ধরে কিছু খাননি। সন্তানদের খাওয়াতে রুটির জন্য তাকে ভিক্ষা করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমি শক্ত থাকার ভান করছি। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে যে, যে কোনও সময়েই আমি সন্তানদের সামনে পড়ে যেতে পারি।”
গাজায় এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি গত ১ ডিসেম্বরে ভেঙে পড়ার পর থেকে ইসরায়েল গত সপ্তাহে দক্ষিণে স্থল অভিযান শুরু করেছে। তখন থেকেই তারা পূর্ব দিক থেকে দক্ষিণের খান ইউনিস নগরীর ভেতর দিকে অগ্রসর হয়েছে। ওদিকে, পশ্চিমে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলের জঙ্গি বিমান।
জাতিসংঘ কর্মকর্তারা বলছেন, গাজার ১৯ লাখ মানুষ; অর্থাৎ, জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশই উদ্বাস্তু হয়েছে। দক্ষিণের এলাকাগুলোতে পরিস্থিতি নারকীয় বলে বর্ণনা করেছে তারা।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস রোববার বলেছেন: তার ধারণা, জনশৃঙ্খলা খুব শিগগিরই পুরোপুরি ভেঙে পড়বে। আর তখন মহামারী আকারে রোগ ছড়িয়ে পড়া এবং মিশরে গণহারে মানুষের পালিয়ে যাওয়ার চাপ বেড়ে যাওয়াসহ আরও খারাপ একটি পরিস্থিতির উদ্রেক ঘটতে পারে।