ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এ প্রবণতা আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠী ও আইনজীবীরা।
Published : 20 Feb 2025, 09:49 PM
রাশিয়ায় কয়েক ডজন মানুষকে কেবলমাত্র তাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বাধ্যতামূলকভাবে মানসিক রোগের চিকিৎসা দিয়ে রোগী বানিয়ে রাখা হচ্ছে।
বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠী ও আইনজীবীরা এ তথ্য জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এ প্রবণতা আরও বেড়েছে।
এই পদ্ধতির সঙ্গে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘শাস্তিমূলক মনোচিকিৎসা’ নামে পরিচিত নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মিল রয়েছে। যদিও ১৯৬০-এর দশকের শেষ থেকে ১৯৮০-র দশকের শুরুর দিকে যে হারে এই পদ্ধতি ব্যবহার হত, তার তুলনায় বর্তমান সময়ে এটি ব্যবহারের মাত্রা অনেকটাই কম।
এ বিষয়ক প্রতিবেদন তৈরির জন্য বার্তা সংস্থা রয়টার্স একজন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ও দুটি রুশ মানবাধিকার গোষ্ঠীর তথ্য বিশ্লেষণ করেছে, তিন আইনজীবীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে এবং আদালতের আদেশের আওতায় সাইবেরিয়ার এক হাসপাতালে মানসিক রোগের মূল্যায়নের জন্য পাঠানো দুই নারী অধিকার কর্মীর মামলার নথি পর্যালোচনা করেছে।
৩৭ বছর বয়সী ইয়েকাতেরিনা ফাতিয়ানোভাকে গতবছর ২৮ এপ্রিলে তার নিজ শহর ক্রাসনোয়ার্স্ক- এ একটি মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি অবসর সময়ে তার পরিচালিত এক ছোট্ট বিরোধীমতের পত্রিকায় একটি নিবন্ধ প্রকাশের মাধ্যমে রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে ‘অপমান’ করেছেন। যদিও ইয়েকাতেরিনা নিজে নিবন্ধটি লিখেননি। নিবন্ধে বলা হয়েছিল, ইউক্রেইনে রাশিয়ার যুদ্ধ সাম্রাজ্যবাদী উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
হাসপাতালে তাকে যন্ত্রণাদায়ক, অবমাননাকর ও অপ্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এর মধ্যে ছিল স্ত্রীরোগ পরীক্ষাও। কর্তৃপক্ষকে পাঠানো অভিযোগপত্রে ইয়েকাতেরিনা এসব কথা উল্লেখ করেছেন। রয়টার্স সেটি পর্যালোচনা করেছে।
২৭ মে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছেড়ে দেয়। চিকিৎসকরা ইয়েকাতেরিনার কোনও মানসিক রোগ নেই বলে রিপোর্ট দেওয়ার পর তাকে ছাড়া হয়। রয়টার্স সেই রিপোর্ট দেখেছে।
ইয়েকাতেরিনা বলেন, “আমার ধারণা, আসল উদ্দেশ্য ছিল আমাকে নৈতিকভাবে চাপে রাখা এবং সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা। হয়ত নাগরিক হিসাবে আমার সক্রিয় অবস্থানের জন্যই আমাকে সাজা দেওয়া হয়েছিল।”
ডাচ অধ্যাপক ও মানবাধিকার বিষয়ক প্রচারকর্মী রবার্ট ভ্যান ভোরেন কয়েক দশক ধরে রাশিয়ায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মনোরোগ চিকিৎসার অপব্যবহার নিয়ে গবেষণা করে আসছেন।
ভোরেন জানান, তিনি ২০২২ সালে ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বছরে প্রায় ২৩টি এমন ঘটনা নথিভুক্ত করেছেন। এ সংখ্যা ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বছরপ্রতি গড়ে প্রায় ৫টি এমন ঘটনার চেয়ে বেশি।