Published : 29 Apr 2025, 04:18 PM
ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাটে স্তব্ধ হয়ে পড়া স্পেন ও পর্তুগালে বিদ্যুৎ ফিরে আসতে শুরু করেছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে সোমবার দিনজুড়ে দেশ দু’টির জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছিল। গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যায়, উড়োজাহাজগুলো বিমানবন্দরে পড়ে থাকে আর হাসপাতালগুলো নিয়মিত অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়।
ঘটনার পরপরই স্পেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে ও শৃঙ্খলা বজার রাখতে ৩০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করে। দুই দেশের সরকার মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক করে।
রয়টার্স জানিয়েছে, ইউরোপের এ ধরনের ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা অত্যন্ত বিরল। এর কারণ পরিষ্কার হয়নি। সমস্যাটির উৎপত্তি স্পেনে বলে ধারণা প্রকাশ করেছে পর্তুগাল আর স্পেন ফ্রান্সের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার দিকে আঙুল তুলেছে।
পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী লুয়িজ মন্টিনিগ্রো জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শুরু হওয়া এই বিদ্যুৎ বিভ্রাট সাইবার হামলার কারণে হয়েছে এ ধরনের ‘কোনো ইঙ্গিত’ পাওয়া যায়নি।
তারপরও সম্ভাব্য নাশকতার গুজব ছড়াতে শুরু করলে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ জানান, পরিস্থিতি নিয়ে তিনি নেটোর মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে কথা বলেছেন।
সানচেজ আরও জানান, পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে তার দেশের ১৫ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষতির সম্মুখীন হয় যা পুরো দেশের চাহিদার ৬০ শতাংশের সমতুল্য। কেন হঠাৎ এই ঘটনা ঘটল টেকনিশিয়ানরা তা খতিয়ে দেখছে।
“এ ধরনের ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি,” বলেন তিনি।
পর্তুগালের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আরইএন এর বোর্ড সদস্য জোয়াও কনসেইসাও সাংবাদিকদের জানান, তাদের কোম্পানি ‘বৈদ্যুতিক ভোল্টেজে খুব বড় ওঠানামার’ সম্ভাবনা বাতিল করেনি, ‘এটি প্রথমে স্পেনের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় ঘটেছে, পরে পর্তুগালের ব্যবস্থায় ছড়িয়ে পড়েছে’।
আরইএন জানিয়েছে, তাদের জাতীয় ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্কে থাকা সব উপকেন্দ্রে এখন বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। স্পেনেও ধীরে ধীরে পরিস্থিতি ফিরছে, তবে কিছু অঞ্চলে এখনও বিদ্যুৎ বিভ্রাট রয়ে গেছে।
স্পেনের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী কোম্পানি আরইই এই বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের জন্য ফ্রান্সের সঙ্গে থাকা সংযোগের একটি বিপত্তিকে দায়ী করেছে।
স্পেনে ও পর্তুগালে বিদ্যুৎ বিপর্যয় শুরু হওয়ার আগে ফ্রান্সের কিছু অংশ অল্প সময়ের জন্য একটি বিভ্রাটে পড়েছিল।
স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, বাস্ক অঞ্চলসহ বেশ কিছু এলাকায় সোমবার রাতেই বিদ্যুৎ ফিরেছে। তবে অনেক স্কুল মঙ্গলবারও বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
স্পেনের পরিবহনমন্ত্রী জানিয়েছেন, বেশ কিছু লোকাল ট্রেনলাইন বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘপথের কিছু ট্রেন চললেও মাদ্রিদ থেকে হুয়েলভা, কাদিজ ও গালিসিয়ার মতো এলাকায় এখনও যাত্রা স্থগিত রয়েছে।
মাদ্রিদ মেট্রোর প্রায় সব লাইন চালু হলেও ‘লাইন ৭এ’ এখনও বন্ধ আছে।
পরিবহন সাংবাদিক সায়মন ক্যাল্ডার জানিয়েছেন, স্পেন ও পর্তুগালে ৫০০-এর মতো ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, অনেক যাত্রী সময়মতো বিমানবন্দরে পৌঁছাতে না পারায় ফ্লাইট উড্ডয়নেও বিলম্ব হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ নিয়ে বিভ্রান্তি চলছে। আন্দালুসিয়ার আঞ্চলিক প্রেসিডেন্ট ‘সাইবার হামলার’ ইঙ্গিত দিলেও তা দ্রুত নাকচ করে দেন কেন্দ্রীয় কর্মকর্তারা। কেউ কেউ আবহাওয়াজনিত কারণকেও সন্দেহ করছেন।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী সানচেজ বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে গুজব ও ভুল তথ্যের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। পর্তুগাল সরকার সাইবার হামলার সম্ভাবনা নাকচ করেছে।
পর্তুগাল সরকার জানিয়েছে, বিভ্রাটের প্রকৃত কারণ জানতে আরও সময় লাগবে। তবে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, ইউরোপে এমন বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিভ্রাট বিরল হলেও অতীতে কিছু নজির রয়েছে। ২০০৩ সালে ইতালি ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে একটি জলবিদ্যুৎ লাইনে সমস্যা দেখা দিলে পুরো ইতালির বিদ্যুৎ প্রায় ১২ ঘণ্টার জন্য চলে গিয়েছিল।
২০০৬ সালে জার্মানির একটি বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কে অতিরিক্ত চাপ পড়ে ইউরোপের একাধিক দেশে এবং মরক্কো পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে।
এমবার থিঙ্ক ট্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, স্পেনের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪৩ শতাংশ আসে বায়ু ও সৌর শক্তি থেকে, ২০ শতাংশ আসে পারমাণবিক শক্তি থেকে এবং ২৩ শতাংশ আসে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে।