রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প তার সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসকে 'পাগল' ও 'পাথরের মতো নির্বোধ' বলে মন্তব্য করেছেন।
Published : 28 Jul 2024, 01:15 PM
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও প্রথম দক্ষিণ এশীয় হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্বপালন করা কমলা হ্যারিস ডেমোক্র্যাট পার্টির সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনীত হওয়ার পথে সমর্থন দৃঢ় করার পর থেকেই তার ওপর আক্রমণ তীব্র হয়ে উঠেছে।
রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হ্যারিসকে 'পাগল', ‘উন্মাদ’ এবং 'পাথরের মতো নির্বোধ' বলে মন্তব্য করেছেন। মার্কিন কংগ্রেসের রিপাবলিকানরা তাকে ‘বৈচিত্রের জন্য ধরে আনা একজন’ বলে উপহাস করেছেন। ডানপন্থিরা অনলাইনে তাকে বর্ণবাদী, লিঙ্গ বৈষম্যমূলক এবং নিষ্ঠুর অশ্লীল মন্তব্য করে জর্জরিত করেছেন।
রয়টার্স বলছে, এসব অবমাননাকর বর্ণবাদী ও লিঙ্গ বৈষম্যমূলক আক্রমণ হ্যারিসের নীতির উপর মনোযোগ দেওয়ার রিপাবলিকান পার্টির সমন্বিত চেষ্টাকে বিপথে নিয়ে যাওয়ার হুমকি তৈরি করেছে।
'ব্ল্যাক আমেরিকানস ফর ট্রাম্প' জোটের কিছু সদস্যসহ ট্রাম্পের মিত্ররা সতর্ক করে বলেছেন, হ্যারিসকে অপমান করা হতে থাকলে কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের কাছে ট্রাম্পের পৌঁছানোর চেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, ৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যাদের ভোট গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক হয়ে উঠতে পারে।
ট্রাম্পের সমর্থক ৯ রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা ও ১১ কৃষ্ণাঙ্গ রিপাবলিকান নারীর মধ্যে আটজন সাক্ষাৎকারে অশালীন মন্তব্যের বিরোধীতা করে বলেন, হ্যারিসের ওপর ব্যক্তিগত আক্রমণ করা উচিত নয়, যেকোনো মন্তব্য করার সময় সতর্ক থাকা উচিত, কারণ এসব মন্তব্যের কারণে ট্রাম্পের নির্বাচনী ফলে প্রভাব পড়তে পারে।
৭৫ সদস্যের ‘রিপাবলিকান মেইন স্ট্রিট ককাস’ এর চেয়ারম্যান ডাস্টি জনসন বলেন, “আমি ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিসের বিরোধিতা করবো তার কাজের জন্য, তিনি কে তার জন্য নয়। তার বিরুদ্ধে এসব কুৎসিত মন্তব্য দেশের জন্যও অসম্মানজনক।”
আবার কেউ কেউ বলছেন, হ্যারিসের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে যেমন রিপাবলিকানরা কথা বলছে তেমনি ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পকে তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন নিয়ে আক্রমণ করছে। আদতে দুই পক্ষের কাঁদা ছোড়াছুড়ি কোনোটাই সমর্থনযোগ্য নয়।
এই উত্তেজনা থেকে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিবাসন, অপরাধ ও অর্থনীতিসহ বিভিন্ন রেকর্ডের সঙ্গে যুক্ত করে দেখানোর ট্রাম্পের প্রচারণা শিবিরের চেষ্টা ব্যক্তিগত আক্রমণের তোড়ে আড়ালে চলে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে, যে আক্রমণ কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
সেনেটর মার্কো রুবিও, ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিসান্টিস ও অন্যান্যদের হয়ে কাজ করা রিপাবলিকান পোলস্টার হুইট আইরেস বলেছেন, "কমলা হ্যারিসকে 'ডিইআই ভাড়াটে' বলা খুব নিন্দনীয় এবং বোকামির পরিচয়। এটি পাল্টা আঘাত হানতে যাচ্ছে।”
ডিইআই বলতে ‘ডাইভারসিটি, ইক্যুয়িটি এবং ইনক্লুশন’ বোঝায়। দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান অসাম্য ও বৈষম্য চিহ্নিত করে কর্মক্ষেত্রে নারী ও বিভিন্ন বর্ণের লোকজনের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে নেওয়া উদ্যোগকে ‘ডিইআই’ বলা হয়। এখন ‘ডিইআই ভাড়াটে’ বলতে এমন ব্যক্তিকে বোঝানো হয় যিনি তার পদের যোগ্য নন কিন্তু যাকে কোনো বর্ণের প্রতিনিধি বা লিঙ্গের প্রতিনিধি হিসেবে বেছে নিয়ে সেই পদে বসানো হয়েছে।
তাই হ্যারিস কে "ডিইআই ভাড়াটে" বলতে বোঝানো হয়েছে তার তাকে তার যোগ্যতা দেখে নির্বাচিত করা হয়নি বরং বর্ণ, লিঙ্গের ভিত্তিতে বেছে নেওয়া হয়েছে।
বাগাড়ম্বর বিশেষজ্ঞ, সমালোচকদের ভাষ্য এবং অতীতের জনমত জরিপে পাওয়া তথ্য থেকে দেখা গেছে, ট্রাম্পের উস্কানিমূলক বক্তব্য বর্ণবাদে বিশ্বাসী লোকদের উৎসাহিত করে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে রাজনৈতিক বিরোধীদের আক্রমণ করার ইতিহাস রয়েছে ট্রাম্পের। বুধবার নর্থ ক্যারোলাইনায় এক সমাবেশে ট্রাম্প তার বক্তব্যে হ্যারিস কে উদ্দেশ্য করে বলেন, "তিনি একজন উগ্র উন্মাদ বাম, তিনি আমাদের দেশকে ধ্বংস করবেন।”
ট্রাম্পের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, ভোটাররা কমলা হ্যারিসকে প্রত্যাখ্যান করবে তার বর্ণ ও লিঙ্গের কারণে নয়, বরং তার ‘ব্যর্থ নীতির’ কারণে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থিতা ঘোষণা কমলা হ্যারিসের
হ্যারিসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “হ্যারিস তার কাজের দিকে মনোনিবেশ করছেন। বিরোধীদের এসব মন্তব্য তাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে এবং রিপাবলিকানরাও এটা জানে।”
ট্রাম্পের অন্য মিত্ররা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, তিনি তার এসব বেফাঁস মন্তব্যের কারণে জনপ্রিয়তা হারাবেন, এটা তার ভোট সংখ্যায় প্রভাব ফেলবে।
জর্জিয়া ব্ল্যাক রিপাবলিকান কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ক্যামিলা মুর বলেন, “আমি আশা করছি তার উপদেষ্টারা ট্রাম্পকে বোঝাতে সক্ষম হবেন। ট্রাম্প নিজের কথায় লাগাম না টানলে ভবিষ্যতে আরও ভুগতে হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প একটি বর্ণবাদী ক্ষমতা কাঠামোর প্রতিনিধিত্ব করছেন। বহু যুগ ধরে যুক্তরাষ্ট্রে লিঙ্গবৈষম্য ও বর্ণবাদ বিরাজ করছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বর্ণবাদের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে আমেরিকার।
যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বর্ণবাদী মানসিকতার মানুষ আছেন জেনেই ট্রাম্প বৈষম্যকে আরও উস্কে দিয়ে বর্ণবাদকে হাতিয়ার করে আদাজল খেয়ে লেগে পড়েছেন তার সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে।