ইউরোপের সবচেয়ে ব্যস্ততম এই বিমানবন্দরে শুক্রবার ১ হাজার ৩৫১টি ফ্লাইট পরিচালনার কথা ছিল, যেগুলো ২ লাখ ৯১ হাজার যাত্রী পরিবহন করত।
Published : 22 Mar 2025, 12:50 AM
বড় রকমের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সূচি ওলোটপালট হয়ে গেছে।
শুক্রবার সারা দিন যে ফ্লাইটগুলো হিথ্রো বিমানবন্দরে নামার কথা ছিল, তার অনেকগুলো যাত্রার মাঝপথ থেকে ফিরে গেছে। বাতিল হওয়া ফ্লাইটগুলো পুনরায় যাত্রা করতে হিথ্রোর পরস্থিতির দিকে তাকিয়ে আছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, ইউরোপের সবচেয়ে ব্যস্ত এই বিমানবন্দরে শুক্রবার ১ হাজার ৩৫১টি ফ্লাইট পরিচালনার কথা ছিল, যেগুলো ২ লাখ ৯১ হাজার যাত্রী পরিবহন করত। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ফ্লাইটগুলোকে ব্রিটেন ও ইউরোপের অন্যান্য বিমানবন্দরে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। অনেক ফ্লাইট আগের বিমানবন্দরে ফিরে যায়।
বিশ্বের বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকে হিথ্রো বিমানবন্দরে এদিন নামার কথা ছিল ৭৭টি এয়ারলাইন্সের ৬৬৯টি ফ্লাইট। তার মধ্যে ব্রিটিশ এয়ারয়েজের ৩৪১টি, ভার্জিন আটলান্টিকের ৩১টি, লুফথানাসার ২১টি, আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ২০টি ও ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ১৭টিসহ ফ্লাইট রয়েছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটও এদিন হিথ্রো বিমানবন্দরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যাত্রার মাঝপথ থেকে ঢাকায় ফিরে এসেছে। এত গুরুত্বপূর্ণ এই বিমানবন্দর কীভাবে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে এখন সেই প্রশ্ন উঠছে।
‘ফ্লাইটরেডারের’ শুক্রবার দুপুরের তথ্যের ভিত্তিতে বিবিসি লিখেছে, হিথ্রোতে নামতে না পেরে বদলে আমস্টারডারমে গেছে সাতটি, লন্ডন গ্যাটউইকে নেমেছে সাতটি, ফ্রাঙ্কফুর্ট, প্যারিস, শ্যানন ও ওয়াশিংটন ডিসিতে নেমেছে ছয়টি করে ফ্লাইট। আর গ্লাসগো, মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার ও নিউ ইয়র্ক জেএফকে-তে নেমেছে পাঁচটি করে উড়োজাহাজ।
রয়টার্স লিখেছে, হিথ্রো বিমানবন্দর বন্ধের কারণে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে উড়োজাহাজ শিল্প। এক দিনের বন্ধের কারণে কোটি কোটি পাউন্ড ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। আর এই ক্ষতি কে পোষাবে, তা নিয়েও ঝামেলা বাধতে পারে।
বিষয়টি নিয়ে ইউরোপীয় একটি এয়ারলাইন্সের একজন নির্বাহী বলেন, “আপনি ভাবতেই পারেন, তাদের যথেষ্ট ব্যাকআপ পাওয়ার আছে। যদিও যে ব্যাকআপ পাওয়ার হিথ্রোর রয়েছে, তা দিয়ে পুরো বিমানবন্দর চালানো সম্ভব নয়।”
হিথ্রো বিমানবন্দর সংলগ্ন পশ্চিম লন্ডনের হেইয়েসে একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের কারণে এ বিপর্যয়ের সূত্রপাত। ওই বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র থেকেই বিমানবন্দরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হত।
সেখানে আগুন লাগার পর বিমানবন্দরের পাশাপাশি আশপাশের কয়েক হাজার বাড়িও বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুঃখ প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে ২১ মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত বিমানবন্দর বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। যাত্রীদের বিমানবন্দরে না আসতে এবং বিস্তারিত তথ্য জানতে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
হিথ্রো বিশ্বের মধ্যে পঞ্চম ব্যস্ততম বিমানবন্দর। যুক্তরাজ্যের সব থেকে বড় এই বিমানবন্দর গত এক মাসে ব্যবহার করেছেন ৪০ লাখ ৮ হাজার ৬৪৪ যাত্রী। সেন্ট্রাল লন্ডনের পশ্চিমে অবস্থিত এ বিমানবন্দর দিয়ে ৮০টির বেশি দেশের দুই শতাধিক গন্তব্যে ছোটে মানুষ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির পরপরই (১৯৪৬ সালে) বিমানবন্দরটি চালু হয়। বর্তমানে দুটি রানওয়ে ও চারটি টার্মিনাল রয়েছে সেখানে।
লন্ডন ফায়ার ব্রিগেডের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রটিতে আগুন এখনও জ্বলছে। আগুন লাগার পর বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রটির ট্রান্সফর্মারগুলোতে থাকা ২৫ হাজার লিটার তেলের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ে। টার্মিনাল দুই ও চারসহ আশেপাশের ৫ হাজার বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্যাকআপ জেনারেটর থাকলেও সেগুলোর গোটা বিমানবন্দর চালানোর সক্ষমতা নেই। বিমানবন্দরের আশেপাশের হোটেলগুলো যাত্রীতে ভরে গেছে। তারা হিথ্রোর খবরের জন্য অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন।
কাউন্টার টেরোরিজম পুলিশ আগুনের ঘটনা তদন্ত করছে, তবে প্রাথমিকভাবে নাশকতার কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে নগর পুলিশ জানিয়েছে।
ইউরোপিয়ান এয়ারলাইন্সগুলো বড় পরিসরে সবশেষ বিড়ম্বনায় পড়েছিল ২০১০ সালে। সেসময় আইসল্যান্ডের আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ধোয়া আর ছাইয়ে আকাশ ঢেকে যাওয়ায় উড়োজাহাজ পরিষেবা ব্যাহত হয়।
প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও হিথ্রোর বর্তমান পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখছেন।
আরও পড়ুন-
হিথ্রো বন্ধ, মাঝপথ থেকে ফিরল বিমানের ফ্লাইট