ভারতে সংখ্যালঘুরা নিগৃহীত হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করা সত্ত্বেও মোদী একথা বলেন।
Published : 23 Jun 2023, 10:52 AM
বিজেপি শাসিত ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য থাকার কথা অস্বীকার করেছেন দেশটির যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মোদী দাবি করেছেন তার সরকারের অধীনে এ ধরনের কোনো বৈষম্যের অস্তিত্ব নেই।
ভারতে সংখ্যালঘুরা নিগৃহীত হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করা সত্ত্বেও মোদী একথা বলেন; জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বাইডেন জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউজে বৈঠকের সময় তিনি মানবাধিকার ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিয়ে মোদীর সঙ্গে কথা বলেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে মোদীকে জিজ্ঞেস করা হয় তার দেশের ‘মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের অধিকারের উন্নয়ন ও বাক স্বাধীনতা রক্ষা করতে’ তিনি কী পদক্ষেপ নিতে চান; উত্তরে মোদী বলেন, এসব উন্নয়নের কোনো প্রয়োজন নেই।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমাদের সংবিধান ও আমাদের সরকার এবং আমরা প্রমাণ করেছি গণতন্ত্র রক্ষা করতে পারে। যখন আমি বলি রক্ষা করতে পারে তখন- জাত, বিশ্বাস, ধর্ম, লিঙ্গ, কোথাও কোনো বৈষম্যের স্থান নেই (আমার সরকারে) ।”
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে করা তাদের প্রতিবেদনে, ভারতে মুসলিম, হিন্দু দলিত, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সঙ্গে আচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল, এর পাশাপাশি সাংবাদিকদের ওপরও দমনপীড়ন চালানো হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছিল।
মানবাধিকার কর্মীরা ও বাইডেনের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বহু আইনপ্রণেতা তাকে প্রকাশ্যে এ বিষয়টি মোদীর কাছে তুলে ধরার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। মোদীর হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ২০১৪ সাল থেকে ভারতের ক্ষমতায় আছে।
মোদীর মন্তব্য প্রত্যাখ্যান
মোদীর এ বক্তব্যের পর বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউজের কাছে বহু প্রতিবাদকারী জড়ো হয়।
এদের মধ্যে থাকা প্রতিবাদকারী এবং ইন্ডিয়ান আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিলের জনসমর্থন বিষয়ক পরিচালক অজিত সাহি বলেন, “সংবাদ সম্মেলনে তাকে প্রথমেই কেন এ প্রশ্নটি করা হয়েছে মোদীর সেটি ভাবা উচিত। ভারতে অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে এটা সবার কাছেই স্পষ্ট।”
ভারতের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবেদনগুলো পর্যবেক্ষণকারী গোষ্ঠী ‘হিন্দুত্ব ওয়াচ’ এর প্রতিষ্ঠাতা রাকিব হামিদ নায়িক বলেন, “মোদীর মন্তব্য পুরোপুরি মিথ্যা। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ভারত একটি কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হয়েছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, চীনকে মোকাবেলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারত গুরুত্বপূর্ণ এবং দেশ দুটির বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিবিড় হওয়ায় ওয়াশিংটনের পক্ষে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশটির মানবাধিকার বিষয়ে সমালোচনা করা কঠিন হয়ে উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের দুই মুসলিম নারী সদস্য, প্রতিনিধি ইলহান ওমর ও রাশিদা তালিব এবং প্রতিনিধি আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্তেজের মতো অন্যান্য প্রগতিশীল আইনপ্রণেতারা ভারতে ভিন্নমতালম্বী ও সংখ্যালঘু, বিশেষ করে মুসলিমদের নিগৃহীত করার অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার মার্কিন কংগ্রেসে দেওয়া মোদীর ভাষণ বয়কট করেছেন।
মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স বলেছেন, “মোদীর আক্রমণাত্মক হিন্দু জাতীয়তাবাদ ভারতের সংখ্যালঘুদের জন্য তেমন কোনো জায়গা রাখেনি।”
মোদী বলেছেন, ভারতীয় সরকারের নীতিগুলোর সুবিধা সবাই গ্রহণ করতে পারে।
অপরদিকে অধিকার আন্দোলনকারী গোষ্ঠীগুলো জোর দিয়ে বলেছে, মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের ভিন্নমতাবলম্বী, সংখ্যালঘু ও সাংবাদিকরা হামলার সম্মুখীন হচ্ছেন।
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ২০১৪ সালে ভারতের অবস্থান ছিল ১৪০তম স্থানে, চলতি বছর তা আরও নেমে ১৬১তম স্থানে দাঁড়িয়েছে; যা এ পর্যন্ত দেশটির সর্বনিম্ন অবস্থান।
গত পাঁচ বছর ধরে বিশ্বের মধ্যে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা দেশগুলোরও শীর্ষস্থানে রয়েছে মোদীর ভারত।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর ভারতের ২০১৯ সালের নাগরিকত্ব আইনকে মুসলিম অভিবাসীদের বাদ দেওয়ার জন্য প্রণীত ‘মৌলিকভাবে বৈষম্যমূলক’ আইন বলে বর্ণনা করেছে।
এর পাশাপাশি ধর্মান্তর বিরোধী আইন, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা, অবৈধ স্থাপনা সরানোর নামে মুসলিমদের সম্পত্তি ধ্বংস করা ও কর্নাটকে শ্রেণিকক্ষে হিজাব পরা নিয়ে সৃষ্ট গণ্ডগোলের দিকেও আঙুল তুলেছেন সমালোচকরা।