যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ফৌজদারি মামলা ঝুলছে।
Published : 19 Oct 2024, 11:23 PM
নির্বাচনের ফল পাল্টানোর চেষ্টা মামলার ১৮০০ পৃষ্ঠার নথি প্রকাশ করায় বিচারককে ‘সবচেয়ে শয়তান ব্যক্তি’ বলে অভিহিত করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ওইসব নথিতে ২০২০ সালের নির্বাচন নিয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে স্পেশাল কাউন্সেল জ্যাক স্মিথের করা ষড়যন্ত্র মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলীয় এই প্রার্থী জানান, আগামী মাসের ভোটের আগে নতুন নথি প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেছিলেন তিনি কিন্তু মার্কিন জেলা আদালতের বিচারক তানিয়া ছুকেন ওই অনুরোধ প্রত্যাখান করেছেন, যা 'নির্বাচনে হস্তক্ষেপের' সমতুল্য।
ভোটের ৬০ দিনের মধ্যে একটি নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে এমন যে কোনো তদন্ত কৌঁসুলিরা এড়াবেন, বিচার বিভাগের এ অভ্যন্তরীণ নিয়ম ওই মামলার নথি প্রকাশের কারণে লঙ্ঘিত হয়েছে কিনা তা নিয়ে আইন বিশ্লেষকরা বিতর্ক করেছেন।
তবে বিচারক ছুকান তার আদেশের পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন যে তিনি যদি ফাইলগুলো গোপন রাখতেন, তবে সেটিই নির্বাচনে হস্তক্ষেপ হিসেবে ধরা যেতে পারে।
তিনি লিখেছেন, "যদি আদালত এর সম্ভাব্য রাজনৈতিক পরিণতি বিবেচনায় এমন তথ্য আটকে রাখে যা জনসাধারণের জানার অধিকার আছে, তাহলে এই আটকে রাখার বিষয়টিই নির্বাচনে হস্তক্ষেপ অথবা হস্তক্ষেপ বলে প্রতীয়মান হতে পারে।”
ট্রাম্পের মামলা নিয়ে বিচারক ছুকানকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে গত বছর টেক্সাসের এক নারীর বিরুদ্ধে মামলা হয়।
বিবিসি লিখেছে, শুক্রবার প্রকাশিত ১ হাজার ৮৮৯ পৃষ্ঠার নথির বেশিরভাগই লাইনই কালি দিয়ে মুছে দেওয়া হয়েছে, এসব তথ্য ইতোমধ্যেই জনসম্মুখে প্রকাশ পেয়েছে আর সেগুলোকেই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ছাড়া প্রকাশ করা হয়েছে। এরমধ্যে আছে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের জীবনীর কিছু অংশ এবং তিনি যে ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল উল্টাতে চান না তার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।
ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল পাল্টানোর চেষ্টার মামলায় গত মাসে সংশোধিত অভিযোগ দাখিল করেন বিচার বিভাগের বিশেষ কাউন্সেল স্মিথ। তারই একটি অংশ প্রকাশ করা হয়েছে।
শুক্রবার ডানপন্থি মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ড্যান বাঞ্জিনোর সঙ্গে একটি পডকাস্টে হাজির হয়ে ট্রাম্প বিচারক ছুকানের তীব্র সমালোচনা করেন এবং বিশেষ কাউন্সেল স্মিথকে 'অসুস্থ কুকুরছানা' বলেন।
অভিযোগনামায় ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গা এবং এর তিন মাস আগে জো বাইডেনের কাছে নির্বাচনে পরাজয়ের ফল অবৈধভাবে উল্টানোর ষড়যন্ত্রের জন্য ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প ক্যাপিটল হিলে হামলার মামলায় অভিযুক্তদের আটকের ঘটনাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রে জাপানি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকদের বন্দি করার ঘটনার সঙ্গে তুলনা করেন।
তিনি বলেন, “কেন তাদের এখনও আটকে রাখা হয়েছে? এর আগে কারও সঙ্গে এমন আচরণ করা হয়নি। সম্ভবত দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় জাপানিদের ধরার মত, স্পষ্টভাবে বলছি।”
চলতি বছরের শুরুতে এক আদেশে আদালত বলেছিল, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসাবে তার সাংবিধানিক ক্ষমতার মধ্যে থেকে কোনও কিছু করে থাকলে সেক্ষেত্রে তার বিচার করা যাবে না। তবে ব্যক্তিগত কোনও কৃতকর্মের জন্য তার বিচার করা যেতে পারে।
সেই কারণে বিচার বিভাগের বিশেষ কৌঁসুলি সংশোধিত অভিযোগ দাখিল করেন। এতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ওই সময় (২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি) সাধারণ নাগরিক হিসেবে ওই কাজ করেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়।
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেন জয়ী হওয়ার পরই ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে তার জয় কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ট্রাম্পের এই মিথ্যা দাবিতে উদ্বুদ্ধ হয়েই তার উগ্র সমর্থকরা যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে প্রাণঘাতী দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরু করে বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।
পেন্সের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্কের অবনতি কীভাবে হয়েছিল, সে সম্পর্কেও বিবরণ দেওয়া হয়েছে সংশোধিত অভিযোগে। ট্রাম্পকে নির্বাচনি জালিয়াতি তত্ত্বের পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে বলেছিলেন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স, অভিযোগে এমনটি বলা হয়েছে।
শুক্রবার প্রকাশিত নথিগুলোর মধ্যে রয়েছে, ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল দাঙ্গার তদন্তকারী হাউস কমিটির সাক্ষাৎকারের প্রতিলিপি, পেন্সের আত্মজীবনীর কিছু অংশ এবং ভোটারদের কাছে পাঠানো তহবিল সংগ্রহের ইমেইল।
বিবিসি লিখেছে, ৬ জানুয়ারির মামলাটি আদৌ বিচারের জন্য উঠবে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে ফিরলে তিনি এই বিচার প্রক্রিয়ার ইতি ঘটাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তার বিরুদ্ধে আরও বেশ কয়েকটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এরই মধ্যে নিউ ইয়র্কে ৩৪টি অপরাধমূলক কর্মের দায়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।