কমলা হ্যারিস ট্রাম্পের এই মন্তব্যের নিন্দা জানিয়ে বলেন, অসম্মানজনক এবং বৈষম্যমূলক আচরণ করা ট্রাম্পের পুরানো অভ্যাস।
Published : 01 Aug 2024, 05:06 PM
যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ সাংবাদিকদের এক সম্মেলনে কমলা হ্যারিসের জাতিগত উত্তরাধিকার নিয়ে বর্ণবৈষম্যমূলক প্রশ্ন তুলেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্প মিথ্যা দাবি করে বলেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সম্ভাব্য ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এতোদিন পর্যন্ত কেবল তার এশিয়ান-আমেরিকান পরিচয়ের উপরই জোর দিয়েছেন কিন্তু কিছুদিন হল ‘তিনি একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন’।
বিবিসি জানিয়েছে, বুধবার শিকাগোতে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ব্ল্যাক জার্নালিস্টস সম্মেলনে ট্রাম বলেন, “তিনি যে কৃষ্ণাঙ্গ তা জানতাম না আমি, কয়েক বছর আগে তিনি যখন তিনি কৃষ্ণাঙ্গ হয়ে গেলেন তখন জানতে পারি, আর এখন তিনি কৃষ্ণাঙ্গ হিসাবে পরিচিত হতে চান।”
“তাই আমি জানি না- তিনি কি ভারতীয়? নাকি তিনি কৃষ্ণাঙ্গ?” প্রশ্ন করেন ট্রাম্প।
রয়টার্স জানিয়েছে, ভারতীয় ও জ্যামাইক্যান বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিস দীর্ঘদিন ধরেই নিজেকে কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয় বংশোদ্ভূত হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছেন। তিনি প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয় মার্কিন ব্যক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্বপালন করছেন।
ট্রাম্পের এইসব মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পর হ্যারিস টেক্সাসের হিউস্টনে কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের ঐতিহাসিক ক্লাব সিগমা গামা রোর এক বৈঠকে ট্রাম্পের ওই মন্তব্যের নিন্দা জানিয়ে বলেন, “এটি সেই বিভেদ ও অসম্মানের একই পুরনো প্রদর্শনী।”
হ্যারিস আরও বলেন, “আমেরিকার জনগণ আরও ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য। আমাদের এমন একজন নেতা প্রাপ্য যিনি বোঝেন আমাদের পার্থক্যগুলো আমাদের বিভক্ত করে না- এগুলো আমাদের শক্তির এক অপরিহার্য উৎস।”
ট্রাম্পের এই বেফাঁস মন্তব্যের পর শিকাগোর সম্মেলনের অন্যতম সঞ্চালক এবিসি নিউজের সংবাদদাতা র্যাচেল স্কটের সঙ্গে তার উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।
হ্যারিসের জাতিগত পরিচয় প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, “আমি যে কোনো একটিকে সম্মান করি। কিন্তু তিনি স্পষ্টতই তা করেন না, তিনি পুরোটা সময় ভারতীয় থাকলেও হুট করে বাঁক বদল করলেন আর তিনি কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি হয়ে উঠলেন।”
এ প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জ্যঁ-পিয়েরে বলেন, “কারও পরিচয় নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার অধিকার কারও নেই।“
নিউ ইয়র্কের প্রতিনিধি রিচি টরেস প্রশ্ন তুলেছেন, “ট্রাম্পকে কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কে নিয়োগ দিয়েছে?”
রিপাবলিকান দলের মনোনীত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এই প্রেসিডেন্টের প্রতিপক্ষকে জাতিগত ভিত্তিতে আক্রমণ করার ইতিহাস আছে।
তিনি দেশটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে বলেছিলেন, ওবামা যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেননি।
জাতিসংঘে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং তার এক সময়ের রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী নিকি হ্যালিকে মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে আক্রমণ করে করে বলেছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না কারণ জন্মের সময় তার বাবা-মা মার্কিন নাগরিক ছিলেন না।
হ্যারিস সম্ভাব্য ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হওয়ার পর থেকে ট্রাম্পের একের পর এক আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছেন এবং হচ্ছেন।
ট্রাম্প আলোচনার সময় হ্যারিসের আইন পেশা নিয়েও কটাক্ষ করেন। তার এই মন্তব্যের পরই অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকজন হইহল্লা শুরু করে।
ট্রাম্প বলেন,"আমি শুধু ঘটনাগুলো তুলে ধরছি। সে তার বার পরীক্ষায় পাস করেনি এবং সে ভাবেনি যে সে কখনও এটি পাস করবে। আমি জানি না পরবর্তীতে কী ঘটেছিল। হয়তো পরে সে পাস করেছিলো।।
হ্যারিস ১৯৮৯ সালে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া হেস্টিংস কলেজ অব ল থেকে আইনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, বার পরীক্ষায় তিনি তার প্রথম প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হন এবং দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় পাস করেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার অঙ্গরাজ্য বার জানিয়েছে, যারা পরীক্ষায় বসেন, তাদের অর্ধেকেরও কম প্রথম চেষ্টায় পাস করেন।
সম্মেলনে সঞ্চালক স্কট এবং সাবেক প্রেসিডেন্টের মধ্যে বিতর্ক নিয়ে ট্রাম্প অভিযোগ করে বলেন, কৃষ্ণাঙ্গদের নিয়ে ট্রাম্পের অতীত সমালোচনা নিয়ে কথোপকথন শুরু হলে ওই সাংবাদিক অত্যন্ত রূঢ় আচরণ করেছেন।
তিনি কৃষ্ণাঙ্গ সাংবাদিকদের প্রশ্নকে 'নির্বোধ ও বর্ণবাদী' বলে মন্তব্য করেন।
"আমি এই দেশের কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীকে ভালোবাসি, আমি এই দেশের কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর জন্য অনেক কিছু করেছি," তিনি নিজ থেকে এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টা পর নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে এই কথোপকথনের সমালোচনা করেন ট্রাম্প; তিনি বলেন, "সঞ্চালকের প্রশ্নগুলি অভদ্র এবং আক্রমণাত্মক ছিল।”