মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের মেয়াদ আরও ছয় সপ্তাহ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন, এতে ইসরায়েল রাজি হলেও হামাস নারাজ।
Published : 02 Mar 2025, 07:21 PM
যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রস্তাব তাতে হামাসের সম্মতি দাবি করে ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে।
শনিবার দুই পক্ষের মধ্যে জানুয়ারিতে হওয়া যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর যে প্রস্তাব দিয়েছেন, ফিলিস্তিনি সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাস তাতে রাজি হয়নি।
যুদ্ধ শেষ করার বিষয়ে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে মতপার্থক্য দূর করতে উইটকফ মুসলিমদের রমজান ও ইহুদিদের পাসওভারের সময় পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন, জানিয়েছে বিবিসি।
ইসরায়েল বলেছে, তারা প্রথম ধাপের মেয়াদ আরও ছয় সপ্তাহ বাড়ানোর প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে যদি আলোচনায় কোনো ফল না আসে, তাহলে তেল আবিব ফের গাজায় অভিযান শুরু করবে।
হামাসের এক মুখপাত্র বলেছেন, গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ ইসরায়েলের ‘সস্তা ব্ল্যাকমেইল’ এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন। তিনি এ বিষয়ে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর দ্রুত হস্তক্ষেপও চেয়েছেন।
হামাস চায়, জানুয়ারিতে হওয়া চুক্তিতে যেভাবে ছিল সেভাবেই দ্বিতীয় ধাপে জিম্মিদের পাল্টায় ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর প্রত্যাহার নিশ্চিত করতে হবে।
ফিলিস্তিনি এ সশস্ত্রগোষ্ঠীটি এর আগে বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে ‘দ্বিতীয় ধাপ কার্যকর হবেই’ এমন নিশ্চয়তা না পেলে তারা আর যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়াবে না।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিনিধি উইটকফ যে রূপরেখা দিয়েছেন, ইসরায়েল তা মেনে নিলেও হামাস তাতে সম্মত হয়নি। তাই শনিবার যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার পর থেকেই গাজায় সব ধরনের পণ্য প্রবেশ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
নেতানিয়াহু বলেছেন, “জিম্মিদের মুক্তি ছাড়া ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি অনুমোদন করবে না। হামাস চুক্তি প্রত্যাখ্যান করলে তাদের আরও কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।”
এর পাল্টায় হামাসের মুখপাত্র বলেন, “গাজায় ত্রাণ পাঠানো বন্ধ করার নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্ত আবারো ইসরায়েলের দখলদারিত্বের কুৎসিত চেহারা তুলে ধরেছে।”
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানান।
যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে উইটকফের প্রস্তাবে কী আছে তা জানা না গেলেও তেল আবিব বলছে, তারা জীবিত ও মৃত জিম্মিদের মধ্যে অর্ধেককে মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে চায়।
সোয়া এক বছর ধরে চলা যুদ্ধের পর জানুয়ারিতে যে বিরতি আসে, তাতে ১,৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে ৩৩ জন ইসরায়েলি ও পাঁচজন থাই জিম্মি ছাড়া পায়।
হামাস মেয়াদ বাড়াতে রাজি হলে ইসরায়েল তাৎক্ষণিকভাবে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু করবে, বলেছে
গাজায় মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালানো সংস্থাগুলো জানিয়েছে, রোববার সকাল থেকে ভূখণ্ডটিতে ত্রাণের কোনো ট্রাককে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
“গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ অব্যাহত রাখতে হবে। এটি খুবই দরকার। আমরা সব পক্ষকে এ বিষয়ে একটি সমাধানে পৌঁছানোর আহ্বান জানাচ্ছি,” বিবিসিকে এমনটাই বলেছেন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ডব্লিউএফপি-র আঁতোয়া রেনা।
জানুয়ারির মাঝামাঝি যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর গাজা ভূখণ্ডে প্রতি সপ্তাহে কয়েক হাজার ট্রাক ঢুকেছে। এই সুযোগে দাতা সংস্থাগুলো অনেক পণ্য মজুদ করে রেখেছে, যে কারণে ইসরায়েল এখন ত্রাণ প্রবেশ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিলেও সেখানকার ফিলিস্তিনিরা তাৎক্ষণিক সংকটে পড়বেন না।
এদিকে রোববার ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীরা।
ভূখণ্ডটির উত্তরাংশে বিস্ফোরক স্থাপনকারী লোকজনের ওপর হামলা চালাতে হয়েছে, বলেছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী।