করদাতাদের সেবা দিতে পারছে না- এমন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ হস্তক্ষেপ করল সরকার।
Published : 23 Jan 2025, 11:32 AM
স্বচ্ছতার ঘাটতি ও ‘বিষাক্ত’ সংস্কৃতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর লন্ডনের বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল পরিচালনায় আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তক্ষেপ করেছে যুক্তরাজ্য সরকার।
দেশটির স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জিম ম্যাকমাহন বুধবার বলেছেন, টাওয়ার হ্যামলেটস কর্তৃপক্ষ কিছু জায়গায় উন্নতি করতে ব্যর্থ হয়েছে। সে কারণে সেখানে হস্তক্ষেপ করা জরুরি হয়ে পড়েছিল। উন্নয়ন কাজ তদারকির জন্য সেখানে একদল কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিবিসি লিখেছে, গত নভেম্বরে এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজনৈতিক দল ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মধ্যে আস্থা ও শ্রদ্ধার সংকটের কারণে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহীরা জবাবদিহির বাইরে থেকে যাচ্ছেন। আর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মেয়র লুৎফুর রহমানকে ঘিরে একটি অভ্যন্তরীণ বলয় তৈরি হয়েছে।
ভোট জালিয়াতির দায়ে নাটকীয় ক্ষমতাচ্যুতির সাত বছর পর ২০২২ সালে লেবার পার্টিকে পরাজিত করে টাওয়ার হ্যামলেটসের নেতৃত্বে আসেন এস্পায়ার পার্টির নেতা লুৎফুর রহমান।
২০১০ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এ বারা কাউন্সিলে প্রথমবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন লুৎফুর। এরপর ২০১৪ সালে টাওয়ার হ্যামলেটসে দ্বিতীয়বারের মত মেয়র হন তিনি।
তবে ওই ভোটে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ আদালত পর্যন্ত গড়ায় এবং তাকে মেয়র পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয়। এ কারণে পাঁচ বছর তিনি নিবার্চনে অংশ নিতে পারেননি।
ওই কেলেঙ্কারির পর কমিউনিটির তৎকালীন সেক্রেটারি এরিক পিকলস কাউন্সিলের প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন এবং কমিশনারদের নিয়োগ করেছিলেন।
পিকলস সে সময় বলেছিলেন, লুৎফুর ‘মধ্যযুগীয় রাজা'র মত জনগণকে অর্থ দিয়েছেন এবং এমনভাবে প্রশাসন পরিচালনা করেছেন যা ‘সবচেয়ে অকার্যকর এবং সবচেয়ে খারাপভাবে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতিতে জর্জরিত'।
জিম ম্যাকমাহন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রশাসন, নেতৃত্ব, সংস্কৃতি ও অংশীদারিত্বের’ বিষয়ে কাউন্সিল ব্যর্থ হচ্ছে-এমন উদ্বেগের কারণে হস্তক্ষেপ ‘জরুরি’ ছিল।
এর আওতায় নিউহ্যামের সাবেক প্রধান নির্বাহী কিম ব্রোমলি-ডেরিসহ সরকারের প্রতিনিধিরা ২০২৮ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত কাউন্সিল দেখভালের পাশাপাশি সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেবেন।
ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড লিখেছে, হস্তক্ষেপের ‘ধরন ও মাত্রা’ অনুযায়ী মান বাড়াতে সহায়তার জন্য ব্রোমলি-ডেরিকে রোজ ১১০০ পাউন্ড দেওয়া হবে। আর দুজন সহকারী প্রতিনিধি সম্মিলিতভাবে রোজ ১০০০ পাউন্ড পাবেন। তারা সবাই ১২০ দিনের জন্য এই হারে সম্মানী পাবেন।
আগামী মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষর হতে যাওয়া বাজেট পরিকল্পনায় সরকারের হস্তক্ষেপ বাবদ এবং প্রয়োজনীয় উন্নয়নের জন্য কাউন্সিল ৬ মিলিয়ন পাউন্ড রেখেছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কাউন্সিলকে সতর্ক করে বলেছে, উন্নতি দেখা না গেলে ভবিষ্যতে ‘আরও হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা’ রয়েছে।
ম্যাকমোহনের কাছে লেখা এক চিঠিতে লুৎফুর রহমান ও প্রধান নির্বাহী স্টিফেন হালসি বলেছেন, কাউন্সিল নভেম্বরের প্রতিবেদনের ফলাফল 'মেনে নিয়েছে' এবং এরই মধ্যে পরিস্থিতির উন্নয়নে কাজ শুরু করেছে।
তারা চিঠিতে বলেছেন, “আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে, এই বিধিবদ্ধ সহায়তা প্যাকেজ এলবিটিএইচ-এ অর্থবহ ও দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তনের জন্য একটি নতুন সূচনা হতে পারে এবং রাজনৈতিক বিভাজনে ভারসাম্য ফেরাতে ও বিধিবদ্ধ কর্মকর্তাদের সহায়তা করার জন্য প্রতিমন্ত্রীর প্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপকে (ইনপুট, তদারকি ও সমর্থন) স্বাগত জানাই।”
এর আগে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টাওয়ার হ্যামলেটসে সরকার হস্তক্ষেপ করেছিল।
নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে সরকারি প্রতিনিধিদের তিনি স্বাগত জানাচ্ছেন।
“যদিও আমাদের গর্ব করার মত অনেক কিছু আছে, আমরা জানি যে উন্নতির জায়গা রয়েছে এবং আমাদের কর্মী ও সদস্যদের সঙ্গে সরকারি প্রতিনিধিদের দক্ষতা মিলে আমাদের আরো ভালো ফল অর্জন সহজ হবে।”
নতুন বাস্তবতা নিজেদের অর্জন উদযাপন এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ দেবে মন্তব্য করে মেয়র লুৎফুর বলেন, “স্কুলে সবার জন্য বিনামূল্যে খাবার, পেনশনভোগীদের জন্য শীতকালীন জ্বালানি ভাতা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অনুদান এবং অনেক বাসিন্দার জন্য বিনামূল্যে সাঁতার শেখানোর মত যুগান্তকারী উদ্যোগ স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলোর মধ্যে আমরাই প্রথম নিয়েছি। আমাদের কমিউনিটির মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিনিয়োগের সময় ভারসাম্যপূর্ণ হিসাবরক্ষণের মাধ্যমে কাউন্সিলগুলো কীভাবে একটি শক্তিশালী আর্থিক অবস্থান বজায় রাখতে পারে তা আমরা দেখাচ্ছি।”
নভেম্বরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, টাউন হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক অশ্রদ্ধা ও অসহযোগিতার কারণে ‘সত্যিকারের উন্নয়ন সংস্কৃতিতে’ সম্পৃক্ত হতে বাধাগ্রস্ত হন কাউন্সিলররা। এ পরিস্থিতিতে সংস্থার শীর্ষ স্তরে ঘন ঘন চাকরি ছাড়ার ঘটনা ঘটছে।
কর্মীদের মধ্যে একটি ধারণা আছে যে, ক্ষমতাধরদের সামনে সত্য বলে ফেলার অপরাধে ‘অনেক ভালো ব্যবস্থাপক’ কাউন্সিলের চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন।
কাজের ক্ষেত্রে মেয়রের অগ্রাধিকারকে গুরুত্ব দেওয়ার একটি বিষয় থাকে। কিন্তু সেই কাজে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করার কথা বলা হলে তাকে দেখা হয় ‘বাধা’ হিসেবে, প্রয়োজনীয় ভারসাম্য রক্ষার স্বাভাবিক নিয়ম হিসেবে নয়।
প্রতিবেদনের বরাতে স্ট্যান্ডার্ড লিখেছে, পুরো সংস্থায় আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে এবং এ সংস্কৃতি অনেক কর্মী ও অংশীদারের কাছে ‘বিষাক্ত’ ঠেকছে।
লুৎফুরের এস্পায়ার পার্টি এবং লেবার- উভয় দলের কাউন্সিলররা পুরনো বিষয় নিয়ে বিতর্কে ব্যস্ত থাকছেন, যা কাউন্সিলের কাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।