দেড় বছর আগে চারদলীয় এ জোট সরকার গঠিত হলেও অভিবাসন নীতি নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই মতবিরোধ ঘটত।
Published : 08 Jul 2023, 11:14 AM
অভিবাসন নীতি নিয়ে অংশীদার দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধে নেদারল্যান্ডসের জোট সরকারের পতন ঘটেছে।
অভিবাসন সীমিত করার বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ার পর শুক্রবার ক্ষমতাসীন চারদলীয় জোট সরকার ভেঙে যায় বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে।
দেড় বছর আগে চারদলীয় এ জোট সরকার গঠিত হলেও অভিবাসন নীতি নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই মতবিরোধ ঘটত। প্রধানমন্ত্রী রুটের সভাপতিত্বে শুক্রবার এ সংকট নিয়ে বৈঠক হলেও তা কোনো সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়।
বিবিসি জানিয়েছে, নভেরম্বরে নেদারল্যান্ডসে নতুন নির্বাচন হতে পারে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে।
গত বছর অভিবাসন কেন্দ্রগুলোতে অতিরিক্ত ভিড় নিয়ে হৈচৈ হওয়ার পর রুটের রক্ষণশীল ভিভিডি পার্টি শরণার্থীদের ঢল সীমিত করার চেষ্টা করে আসছিল, কিন্তু চারদলীয় জোট সরকারের দুই অংশীদার রুটের পরিকল্পনার বিরোধিতা করে।
মন্ত্রিসভার এক জরুরি বৈঠকের পর শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক সংবাদ সম্মেলনে রুটে জানান, তার সরকারের পতন ঘটেছে। শনিবার রাজা ভিলেম আলেকজান্দারের কাছে পদত্যাগ পত্র পেশ করবেন বলে জানান তিনি।
নতুন নির্বাচন পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রিসভা হিসেবে মন্ত্রীরা তাদের কাজ চালিয়ে যাবেন বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।
“অভিবাসন নীতি নিয়ে জোটের অংশীদারদের মধ্যে যে মতপার্থক্য আছে এটি কোনো গোপন বিষয় নয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজ আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে এই পার্থক্যগুলো অনতিক্রম্য হয়ে উঠেছে। তাই আমি রাজার কাছে পুরো মন্ত্রিসভার পদত্যাগপত্র জমা দেবো,” সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন রুটে।
গত বছর নেদারল্যান্ডসে আশ্রয় চেয়ে জানানো আবেদনের সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে ৪৭ হাজার ছাড়িয়ে যায় আর চলতি বছরের প্রথমদিকে দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, ২০২৩ সালে আবেদনের সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে তাদের ধারণা।
গত সপ্তাহে রুটে অভিবাসন নিয়ে তার একটি পরিকল্পনার বিষয়ে জোট অংশীদারদের সমর্থন চান। ওই পরিকল্পনায় ইতোমধ্যেই নেদারল্যান্ডসে থাকা যুদ্ধ শরণার্থীদের সন্তানদের প্রবেশ সীমিত করা ও পরিবারগুলোকে একত্রিত হওয়ার আগে অন্তত দুই বছর অপেক্ষায় রাখার প্রস্তাব ছিল। প্রতি মাসে নেদারল্যান্ডসে যুদ্ধ শরণার্থীদের স্বজনদের প্রবেশের অনুমতি মাত্র ২০০ জনে সীমিত করার কথা এতে বলা হয়েছিল।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, এসব প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে জোট সরকারের সংখ্যালঘু অংশীদার খ্রিশ্চিয়ান ইউনিয়ন ও লিবারেল ডি৬৬। তাদের এ বিরোধিতায় জোট সরকারে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়।
সংবাদ সম্মেলনে রুটে বলেন, “সব দলই একটি সমাধান খোঁজার অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে অভিবাসন নিয়ে পার্থক্যগুলোর মধ্যে কোনো সেতুবন্ধ রচনা করা সম্ভব হয়নি। আমাদের জন্য এই সিদ্ধান্ত (পদত্যাগের) অনেক কঠিন ছিল।”
খ্রিশ্চিয়ান ইউনিয়নের মুখপাত্র টিম কায়েস্তে বলেছেন, “অভিবাসন নিয়ে তারা কোনো সমঝোতায় পৌঁছতে পারবেনা বলে সিদ্ধান্ত নেয় এই চার দল। এরপর তারা এই সরকারের ইতি ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেয়।”
রুটে (৫৬) নেদারল্যান্ডসের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী প্রধানমন্ত্রী। তিনি ২০১০ সাল থেকে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বপালন করে আসছেন। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণ করা বর্তমান সরকার রুটের চতুর্থ ক্ষমতাসীন জোট ছিল।
নেদারল্যান্ডসে খিয়েট বিল্ডার্স পিভিভিসহ কয়েকটি চরম ডানপন্থি দলের উত্থানে অভিবাসন নিয়ে চাপে ছিলেন রুটে।
মার্চে এক নির্বাচনে অপ্রত্যাশীতভাবে ফার্মার-সিটিজেন মুভমেন্ট (বিবিবি) পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তারা জানিয়েছে, রুটের নেতৃত্বাধীন ভবিষ্যৎ কোনো সরকারের হয়ে কাজ করবে না তারা।