ইউক্রেইন যুদ্ধের সমাধান খুঁজতে প্রকাশ্যে ও গোপনে বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টারা।
Published : 04 Dec 2024, 10:15 PM
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেইন যুদ্ধের সমাধান খুঁজতে কী পরিকল্পনা নিতে পারেন তা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। তার উপদেষ্টারা প্রকাশ্যে ও গোপনে বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরছেন।
তাদের এসব প্রস্তাবে ভবিষ্যতে ইউক্রেইনকে দেশের ভূখণ্ডের বড় একটি অংশ রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দেওয়া এবং নেটো জোটে ইউক্রেইনের সদস্যপদের বিষয়টিও বিবেচনার বাইরে রাখার কথা বলা হয়েছে।
ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠজনদের বক্তব্য ও সাক্ষাৎকার বিশ্লেষণ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রস্তাবগুলো দিয়েছেন ট্রাম্পের তিন বিশিষ্ট উপদেষ্টা। যার মধ্যে আছেন, ট্রাম্পের মনোনীত রাশিয়া-ইউক্রেইন বিষয়ক নতুন প্রতিনিধি এবং অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিথ কেলোগ।
এছাড়াও ট্রাম্পের উপদেষ্টারা মস্কো ও কিইভকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করার জন্য ‘গাধাকে মুলা দেখানোর’ (ক্যারট অ্যান্ড স্টিক) কৌশল অনুসরণ করতে চান।
এই কৌশলে কিইভ আলোচনায় বসতে রাজি না হলে ইউক্রেইনকে সহায়তা দেওয়া বন্ধ করা এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আলোচনায় বসতে না চাইলে কিইভকে সহায়তা বাড়ানো হতে পারে।
ট্রাম্প গত নভেম্বরের নির্বাচনী প্রচাররের সময় বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে দায়িত্ব গ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে, এমনকি সম্ভব হলে তার আগেই ইউক্রেইন যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন। তবে কীভাবে সেটি করবেন, তা তিনি এখনও স্পষ্ট করে বলেননি।
বিশ্লেষক ও সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা অবশ্য ট্রাম্প তার এই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে ঘোর সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ইউক্রেইন যুদ্ধের জটিলতার কারণে ট্রাম্পের পক্ষে এর সমাধান করা সহজ নয় বলেই ধারণা তাদের।
তবে উপদেষ্টাদের বক্তব্য একসঙ্গে বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখলে ট্রাম্পের ইউক্রেইন শান্তি পরিকল্পনা কেমন হতে পারে সে সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়।
ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সেনা সংকটে পড়ে এবং ক্রমাগত বিভিন্ন অঞ্চলের দখল হারাতে থাকায় দিশেহারা হয়ে আভাস দিয়েছেন যে, তিনি আলোচনায় বসতে পারেন।
জেলেনস্কি এখনও পশ্চিমা সামরিক জোট নেটোর সদস্যপদ পেতে আগ্রহী এবং এ সপ্তাহে তিনি বলেছেন, ইউক্রেইনের দখল হওয়া কিছু ভূখন্ড কূটনৈতিকভাবে পুনরুদ্ধারের পথ তাকে খুঁজতে হবে।
তবে বিশ্লেষক এবং সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাম্পের পক্ষে পুতিনকে আলোচনায় বসতে রাজি করানো কঠিন হতে পারে। কারণ, পুতিন এরই মধ্যে ইউক্রেইনকে দুর্বল করে ফেলেছেন। লড়াই করে গেলে আরও ভূখণ্ড দখলে এনে তিনি লাভবান হতে পারেন।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার রাশিয়া বিষয়ক সাবেক শীর্ষ বিশ্লেষক এবং বর্তমানে থিঙ্কট্যাংক ‘কার্নেগি এন্ডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস’-এ কর্মরত ইউজিন রুমার বলেন, “পুতিনের কোনো তাড়া নেই।” যুদ্ধবিরতি এবং আলোচনার জন্য বেঁধে দেওয়া শর্ত থেকে সরে আসার কোনও লক্ষণ তিনি দেখাননি।
শান্তি আলোচনা শুরু করতে রাজি থাকার জন্য পুতিনের শর্ত হল- ইউক্রেইনের নেটো সদস্যপদের স্বপ্ন পরিহার করা এবং রুশ বাহিনীর দখল করা চার প্রদেশ রাশিয়ার অংশ হিসাবে মেনে নেওয়া। কিইভ এ শর্ত প্রত্যাখ্যান করেছে।
রুমার বলেন, “পুতিন সম্ভবত সময় নিয়ে আরও ভূখণ্ড দখল করবেন এবং ট্রাম্প তাকে আলোচনার টেবিলে নেওয়ার জন্য কী ধরনের ছাড় দেন, তা দেখার অপেক্ষায় থাকবেন।”
মে মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছিল, পুতিন আলোচনার মধ্য দিয়ে যুদ্ধবিরতি করতে প্রস্তুত। তবে তার জন্য রাশিয়ার দখলে থাকা অঞ্চলের সীমারেখার স্বীকৃতি চান তিনি। কিন্তু ইউক্রেইন এবং পশ্চিমারা তাতে সাড়া না দিলে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে রাশিয়া প্রস্তুত।
রাশিয়া ২০১৪ সালেই ইউক্রেইনের ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নিয়েছে। এছাড়াও ইউক্রেইনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে গঠিত ডনবাসের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা, জাপোরিজিয়া ও খেরসনের ৭০ শতাংশেরও বেশি এবং মাইকোলাইভ ও খারকিভ অঞ্চলের কিছু ক্ষুদ্র এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাশিয়া।