এই হাসপাতালটিতে ৬৫০ জনের মতো রোগী, ২০০ থেকে ৫০০ কর্মী ও আশ্রয় নেওয়া প্রায় দেড় হাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনি আছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
Published : 15 Nov 2023, 09:11 AM
ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজার বৃহত্তম হাসপাতাল আল-শিফায় ঝটিকা অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। হামাসের যোদ্ধারা হাসপাতালটিতে অবস্থান নিয়ে আছে অভিযোগ করে তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছে তারা।
এই হাসপাতালটিতে ৬৫০ জনের মতো রোগী, ২০০ থেকে ৫০০ কর্মী ও আশ্রয় নেওয়া প্রায় দেড় হাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনি আছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বুধবার রাত ২টার একটু পর ইসরায়েলি বাহিনী ‘হামাসের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ও লক্ষ্যযুক্ত’ অভিযান শুরু করার ঘোষণা দিয়ে হাসপাতালটিতে প্রবেশ করতে শুরু করে।
রয়টার্স জানায়, প্রায় এক ঘণ্টা আগে, রাত ১টার দিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, ইসরায়েল ছিটমহলটির কর্মকর্তাদের জানায় তারা ‘কয়েক মিনিটের মধ্যেই’ শিফা হাসপাতালে অভিযান চালাতে যাচ্ছে।
কয়েকদিন ধরেই গাজা সিটিতে শিফা হাসপাতালের আশপাশে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে হামাস যোদ্ধাদের তীব্র লড়াই চলছিল। এ সময় আশপাশে বেশ কয়েকবার বোমাবর্ষণ করে ইসরায়েল। এবার ইসরায়েলি বাহিনী প্রথমবারের মতো সরাসরি হাসপাতালটিতে প্রবেশ করল।
প্রত্যক্ষদর্শী রুশদি আবু আলৌফ বিবিসির সাংবাদিককে জানান, কয়েকশ ইসরায়েলি সেনা ‘ঝড়ের বেগে’ আক্রমণ চালিয়ে হাসপাতালটিতে প্রবেশ করে, হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অনেকগুলো ট্যাংক অবস্থান নিয়েছে।
তবে ঠিক কতোজন ইসরায়েলি সেনা হাসপাতালটিতে প্রবেশ করেছে আর অভিযানের তাৎক্ষণিক উদ্দেশ্য কী, তা পরিষ্কার হয়নি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ডাঃ মুনির আল-বুর্শ আল জাজিরা টেলিভিশনকে বলেছেন, ইসরায়েলি সেনারা মেডিকেল কমপ্লেক্সটির পশ্চিম পাশে অভিযান চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, “সেখানে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটেছে। আমরা যেখানে আছি সেখানে ধূলা প্রবেশ করেছে। আমাদের বিশ্বাস হাসপাতালের ভেতরেও একটি বিস্ফোরণ ঘটেছে।”
গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতির জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক পক্ষগুলো জোরালো আহ্বান জানাচ্ছে। গত পাঁচ সপ্তাহ ধরে ঘনবসতিপূর্ণ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে অবিরাম হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এর মধ্যে গাজার বৃহত্তম হাসপাতাল আল-শিফা অবরুদ্ধ করে রেখেছিল ইসরায়েলি বাহিনী। এতে রোগী, চিকিৎসা কর্মী ও হাসপাতালটিতে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত লোকজন আটকা পড়েছিল।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানিবিহীন হাসপাতালটিতে চিকিৎসা কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। স্তূপ হয়ে পড়ে থাকা শতাধিক মৃতদেহে পচন ধরেছে। হাসপাতালটিতে থাকা নবজাতক ও রোগীরা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। এ অবস্থায় আল-শিফার নাজুক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের মধ্যেই সেখানে অভিযান শুরু করল ইসরায়েলি বাহিনী।
ইসরায়েলের অভিযোগ, আল-শিফার নিচে ভূগর্ভে হামাসের একটি কমান্ড সেন্টার আছে এবং হাসপাতালটিকে ও এর নিচে থাকা টানেলগুলোকে সামরিক অভিযান গোপন করতে ব্যবহার করছে তারা, জিম্মিদেরও সেখানে বন্দি করে রেখেছে।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, “গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এবং অভিযানের প্রয়োজনীয়তায় আইডিএফ বাহিনী শিফা হাসপাতালের নির্দিষ্ট একটি এলাকায় হামাসের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ও লক্ষ্যযুক্ত অভিযান চালাচ্ছে।
“আইডিএফ বাহিনীর মধ্যে মেডিকেল টিম ও আরবি বলতে সক্ষম লোকজন আছে। বেসামরিকদের যেন কোনো ক্ষতি না হয় তার জন্য তারা এই কমপ্লেক্স এবং স্পর্শকাতর পরিস্থিতির জন্য সুনির্দিষ্ট প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রস্তুত হয়ে এসেছে।“
ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল পিচার লার্নার সিএনএনকে বলেছেন, “এই হাসপাতাল ও কম্পাউন্ড হামাসের অভিযানের একটি মূল কেন্দ্র, সম্ভবত তাদের হৃদস্পন্দনের উৎস।”
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তাদের নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্যও ইসরায়েলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে।
বুধবার হামাস বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা হাসপাতালটিতে ইসরায়েলের অভিযানের জন্য কার্যকর ‘সবুজ সঙ্কেত’ দিয়েছে। এই অভিযানের জন্য ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সম্পূর্ণভাবে দায়ী বলে বিবেচনা করা হবে।
এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে হোয়াই হাউজ থেকে কোনো মন্তব্য আসেনি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
আরও পড়ুন:
নেতানিয়াহুর বাড়ি অভিমুখে পদযাত্রায় জিম্মিদের পরিবার
গাজার অবরুদ্ধ হাসপাতালের ভেতরে খোঁড়া হচ্ছে গণকবর
গাজার আল-শিফা হাসপাতালকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে: বাইডেন
সত্তর জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে ৫ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব হামাসের
গাজার আল-শিফা হাসপাতাল মৃতদের দাফন করতে পারছে না: ডব্লিউএইচও