যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামে’ আওতায় ইসরায়েলের নাগরিকরা ভিসা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের অনুমতি পান।
Published : 19 Nov 2023, 01:41 PM
পশ্চিম তীরে বসবাস করা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বলেছেন, সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা করা ‘চরমপন্থীদের’ বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করতে প্রস্তুত।
একই সঙ্গে তিনি আবারও পশ্চিম তীর ও গাজার ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্রের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিশ্চিত করেছেন।
গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা বেড়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্টে এক নিবন্ধে বাইডেন লেখেন, “এটা খুবই পরিষ্কার যে, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নিরাপত্তা সংকটের অবসান একমাত্র একটি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের মাধ্যমে সম্ভব।”
শনিবার ওয়াশিংটন পোস্টে ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশ পায় বলে জানায় সিএনএন। যেখানে বাইডেন আরো লেখেন, “আমি ইসরায়েলের নেতাদের জোর দিয়ে বলেছি, পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে চরমপন্থী সহিংসতা বন্ধ করতেই হবে এবং যারা সহিংসতা চালাচ্ছে তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
“যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম তীরে বেসামরিক নাগরিকদের উপর হামলাকারী চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারিসহ আমাদের নিজস্ব পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।”
বাইডেনের এই হুঁশিয়ারি নিশ্চিতভাবেই ইসরায়েলের জন্য উদ্বেগের। কারণ, অক্টোবরের শেষ দিকে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামে’ যুক্ত হয়। এই প্রকল্পের আওতায় থাকা দেশগুলোর নাগরিকরা যারা ভ্রমণে সক্ষম তারা ভিসা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পান।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও এ সপ্তাহের শুরুতে একই উদ্বেগের কথা বলা হয়েছিল। তখন মন্ত্রণালয়টির মুখপাত্র ম্যাট মিলার বলেছিলেন, যদি ইসরাইল এই প্রকল্পের নিয়ম মেনে না চলে তবে আমাদের হাতে ‘প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা আছে’।
ওই নিবন্ধে বাইডেন আবারও গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোর বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন। যে অবস্থানে তিনি গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েল সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই স্থির হয়ে আছেন।
বরং তিনি আবারও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান নীতির কথা বলেছেন এবং মধ্যবর্তী সময়ে তিনি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকেই সরকার পরিচালনার দায়িত্বে দেখতে চাওয়ার কথাও বলেছেন।
লেখেন, “দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান-দুটি মানুষ যারা সমান স্বাধীনতা, সুযোগ ও সম্মানের সঙ্গে পাশপাশি বসবাস করছেন..যেখানে শান্তির রাস্তাটিকে নিয়ে যেতে হবে। সেই রাস্তায় পৌঁছানোর জন্য ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনিদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, আমাদের মিত্র এবং অংশীদারদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিতে হবে।”
গাজার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিবন্ধে লেখেন, “গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোর করে বাস্তুচ্যুত করা চলবে না, পুনর্দখল চলবে না, কোনো নিরোধ বা অবরোধ চলবে না এবং ভূখণ্ডের পরিমাণও হ্রাস করা যাবে না।”
মূলত চলমান ইসরায়েল-হামাস সংঘাত শেষে গাজার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কী চায় সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে বাইডেন এ নিবন্ধের আশ্রয় নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
এর আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ‘অদূর ভবিষ্যতে’ গাজার ‘সামগ্রিক সামরিক দায়িত্ব’ ইসরায়েলকে হাতে তুলে নিতে হবে।
নিজের নিবন্ধে পুতিন এবং হামাসের হামলাকে একসঙ্গে তুলনা করে বাইডেন আরো লেখেন, “পুতিন এবং হামাস উভয়ই যুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিবেশী গণতান্ত্রিক দেশকে ম্যাপ থেকে মুছে ফেলতে চাইছে। এবং পুতিন ও হামাস উভয়ই বৃহৎ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হওয়ার আশায় আছেন। যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে তারা তার সুযোগ নিতে পারে।
“আমেরিকা এমনটা ঘটতে দিচ্ছে না এবং দেবেও না। আমাদের নিজস্ব জাতীয় নিরাপত্তা এবং সর্বপরি পুরো বিশ্বের ভালোর জন্য আমরা এটা হতে দেব না।”
হামাস-ইসরায়েল সংঘাত শুরু হওয়া পর বিশ্বজুড়ে ইহুদিবিদ্বেষ এবং ইসলামভীতি দুটোই বেড়েছে এবং বাইডেন এই উভয় আচরণের নিন্দা জানিয়ে তার নিবন্ধ শেষ করেন।