বিভিন্ন ফ্রন্টের যুদ্ধ এবং ধসে পড়া অর্থনীতি নিয়ে টালমাটাল অবস্থার মধ্যেও মিয়ানমার জান্তা চলতি বছর নির্বাচন আয়োজনের কথা জানিয়েছিল।
Published : 19 Jan 2025, 08:10 PM
নির্বাচনের পরিবর্তে সংলাপ ও যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে দেশের শান্তিকে অগ্রাধিকার দিতে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান।
এবছর আসিয়ানের সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছে মালয়েশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাসান বলেছেন, “সদস্যদেশ মিয়ানমারের যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে যুদ্ধ বন্ধ করা এবং জান্তার প্রতিনিধিকে অবাধে মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে আসিয়ান।”
তিনি বলেন, “আমরা জানতে চাই নির্বাচন নিয়ে মিয়ানমার মনে কী আছে।” মালয়েশিয়ার লাঙ্কাওয়িতে আসিয়ানের মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে হাসান আরও বলেন, “তাদের মনে কী আছে তা জানা খুব কঠিন।
“আমরা জানি যে তারা নির্বাচন চায়। তবে আমরা তাদের বলেছি, এই মুহূর্তে নির্বাচনকে অগ্রাধিকার না দিয়ে আগে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। আমি মনে করি না যে এই কাজটি করা তাদের পক্ষে খুব কঠিন।”
মিয়ানমারে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দেশটি শাসন করছে সেনাবাহিনী-সমর্থিত ‘দ্য স্টেট অ্যাডিমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল’ (এসএসি)।
সেনা অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। দেশটির বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র জাতিগত বিভিন্ন গোষ্ঠী ও বিদ্রোহী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস এর (পিডিএফ) লড়াই চলে আসছে। বিভিন্ন ফ্রন্টের যুদ্ধ এবং ধসে পড়া অর্থনীতি নিয়ে টালমাটাল অবস্থায় পড়েছে সরকার।
এর মধ্যেই চলতি বছর নির্বাচন আয়োজনের কথা জানিয়েছিল মিয়ানমার জান্তা সরকার। সমালোচকরা বলছেন, সামরিক কর্মকর্তাদেরকে ক্ষমতায় রাখতেই নির্বাচন দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।
আসিয়ান মিয়ানমারে নির্বাচনের পরিবর্তে বরং বর্তমান পরিস্থিতিতে জান্তা সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবে সমাধানের জন্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে সংলাপে বসার আহ্বান জানানোটাই বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে।
মিয়ানমারের জান্তা-বিরোধী নির্বাসিত ন্যাশনাল ইউনিটি গভমেন্ট (এনইউজি) বলেছে, জান্তার প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখার যোগ্য নয়। জান্তা সরকারের নির্বাচন করার কোনও এখতিয়ার নেই বলেও জানিয়েছে তারা।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা বিশেষ করে দেশের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং অভ্যন্তরীণ সংকটের মধ্যে বেশ বিতর্কিত।
মালয়েশিয়া মিয়ানমার সঙ্কট মোকাবেলায় বিশেষ দূত হিসাবে প্রাক্তন কূটনীতিক ওথমান হাশিমকে নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে, মিয়ানমারে মানবিক ত্রাণের চাহিদা "উদ্বেগজনক মাত্রায়" রয়েছে, জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশেরও বেশি সাহায্যের প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
মোহাম্মদ হাসানের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, ওথমান 'শিগগিরই' মিয়ানমার সফর করবেন।
আসিয়ানের পাঁচ দফা শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য (যে পরিকল্পনা অভ্যুত্থানের কয়েক মাস পরে প্রকাশ হওয়ার পর থেকে এখনও কোনও অগ্রগতি হয়নি) ওথমানকে মিয়ানমারের সব পক্ষকে বোঝানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে, অভ্যুত্থানের পর থেকে এই পরিকল্পনা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
আসিয়ানের সভাপতি মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহম্মদ হাসান বলেন, “আমরা চাই মিয়ানমার পাঁচ দফা ঐকমত্য মেনে চলুক, শত্রুতা বন্ধ করুক এবং সংলাপ করুক।”