যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ২২৪টি ইসরায়েলি হামলা হয়েছে।
Published : 12 Apr 2025, 03:51 PM
গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর এমন কয়েক ডজন ইসরায়েলি বিমান হামলা হয়েছে, যেখানে কেবল নারী ও শিশু নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
এর মধ্যে শুক্রবার দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একই পরিবারের ১০ জন মারা গেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের একটি প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, লোকজনকে সরে যাওয়ার ইসরায়েলি আদেশ বৃদ্ধির কারণে জোরপূর্ব বাস্তুচ্যুতি বাড়ছে, যা গাজায় ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্ব নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর সতর্ক করে বলেছে, গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড গোষ্ঠী হিসেবে ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্বকে ক্রমাগত বিপন্ন করছে।
মানবাধিকার হাই কমিশনারের কার্যালয়ের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেন, “গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর আচরণগত যে প্রভাব বাড়ছে, তাতে আমরা এই ভেবে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে- ইসরায়েল গাজার ফিলিস্তিনিদের উপর এমন পরিস্থিতি তৈরি করছে যা তাদের গোষ্ঠী হিসেবে অস্তিত্বের প্রশ্নে অসঙ্গতিপূর্ণ।”
ডন লিখেছে, হামাসের সঙ্গে দুই মাসের যুদ্ধবিরতির পর গত ১৮ মার্চ গাজায় ফের ইসরায়েল হামলা শুরু করে। সর্বশেষ হামলার বিষয়ে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, খান ইউনিসে একই পরিবারের সদস্যদের হত্যার বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছে।
বেসামরিক প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, “মধ্যাঞ্চলীয় খান ইউনিসে ফারা পরিবারের বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর সাত শিশুসহ ১০ জনকে শহীদ হিসেবে হাসপাতালে আনা হয়েছে।”
ঘটনার ফুটেজে সাদা কাফন ও কম্বলে মোড়ানো বেশ কয়েকটি মৃতদেহ দেখা গেছে এবং বাড়ির ফুটেজে কংক্রিটের স্ল্যাব ও দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ধাতব দেখা গেছে।
১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্্রতণালয়।
‘বর্বরতা’
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ান ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, “এটা যদি বর্বরতা না হয়, তাহলে আমি আপনাদের জিজ্ঞেস করছি, এটা কী?”
চলমান ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ বলেছে, “নিহতদের একটি বড় শতাংশই শিশু ও নারী।”
তিন সপ্তাহে ২২৪টি হামলা: জাতিসংঘ
জেনিভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর বলেছে, গত ১৮ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিলের মধ্যে বাস্তুচ্যুতদের আবাসিক ভবন ও তাঁবুতে ইসরায়েলি হামলার প্রায় ২২৪টি ঘটনা ঘটেছে।
“জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর ৩৬টি হামলায় কেবল নারী ও শিশু নিহত হওয়ার খবর পেয়েছে।”
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান তুরস্কে সেখানকার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর গাজায় ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ১৮ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১ হাজার ৫৪২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আর ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে তার নিরিখে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৯১২ জনে।
যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টা
দুই মাসের যুদ্ধবিরতির মধ্যে ১৯ জানুয়ারি প্রায় ১৮০০ ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে আট কফিনসহ ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে ফেরত দেওয়া হয়। পাসওবার ছুটির বার্তায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বাকি জিম্মিদের দেশে ফেরানোর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বন্দি মুক্তির আলোচনায় অগ্রগতির বিষয়ে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “আমরা তাদের ফিরিয়ে আনার কাছাকাছি পথে রয়েছি।”