“তুমি তোমার চেয়ে ২০ গুণ বড় এমন কারো সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করতে পারো না, এবং তারপর আশা করতে পারো না যে লোকজন তোমাকে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র দেবে,” বলেছেন তিনি।
Published : 15 Apr 2025, 03:31 PM
সুমি শহরে রাশিয়ার হামলায় ৩৫ জন নিহত ও ১১৭ জন আহত হওয়ার পরদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেইনে যুদ্ধ শুরুর জন্য ভলোদিমির জেলেনস্কিকে দোষারোপ করেছেন।
যুদ্ধে ‘লাখ লাখ লোকের মৃত্যুর’ জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাশাপাশি তিনি ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্টকেও দায় দিয়েছেন, জানিয়েছে বিবিসি।
“তুমি তোমার চেয়ে ২০ গুণ বড় এমন কারো সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করতে পারো না, এবং তারপর আশা করতে পারো না যে লোকজন তোমাকে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র দেবে,” সোমবার হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের এমনটাই বলেন ট্রাম্প।
তিনি ইউক্রেইনে যুদ্ধের জন্য জো বাইডেনকেও দায়ী করেন।
এমন এক সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ মন্তব্য এলো যখন ইউরোপের নেতারা সুমিতে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। রোববার চালানো এ হামলাকে এ বছর ইউক্রেইনের বেসামরিকদের ওপর চালানোর সবচেয়ে প্রাণঘাতী রুশ হামলা বলছে কিইভ।
এই হামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, এটা খুবই ‘মর্মান্তিক’ হামলা হয়েছে, এবং ‘রাশিয়া ভুল করেছে’ বলে তাকে বলা হয়েছে। এরপর এ বিষয়ে আর বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।
“তিনটি মানুষের জন্য লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ধরা যাক এর মধ্যে পুতিন এক নম্বরে, এরপর দুই নম্বরে বাইডেন, যার আসলে কোনো ধারণাই ছিল না তিনি কী করছেন, আর জেলেনস্কি,” বলেছেন তিনি।
জেলেনস্কির সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেইনের নেতা সর্বদা ‘ক্ষেপণাস্ত্র কেনার চেষ্টায় থাকেন’।
“যখন আপনি যুদ্ধ শুরু করেন, আপনার জানা উচিত, আপনি জিতবেন কিনা,” বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে বসার পর ট্রাম্প একাধিকবার জেলেনস্কির সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছেন; যুদ্ধ শুরুর জন্য ইউক্রেইনকে দায়ী করতে তাকে আগেও দেখা গেছে।
ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে দুই দেশের প্রেসিডেন্ট সবার সামনেই তুমুল তর্কে জড়িয়েছিলেন। ট্রাম্প সেসময় জেলেনস্কিকে ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলার’ দায়ে অভিযুক্ত করেন; পুতিনের সঙ্গেই আগেই শান্তি আলোচনায় না বসায় ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্টকে কড়া ভাষায় তিরস্কারও করেন তিনি।
সোমবার ট্রাম্প জানিয়েছেন, গত মাসে পুতিনের সঙ্গে ‘চমৎকার’ ফোনালাপ হয়েছে তার। এক সপ্তাহ পরে রুশ প্রেসিডেন্ট তাকে (ট্রাম্পের) প্রতিকৃতি উপহারও পাঠিয়েছেন।
ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটন মস্কোর সঙ্গে মিলে জাতিসংঘে ইউক্রেইন যুদ্ধে রাশিয়াকে ‘আগ্রাসনকারী’ অ্যাখ্যা দেওয়া এক প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোটও দিয়েছে।
মার্কিন ও রুশ কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছিলেন, তিনি পুতিনের ওপর ‘ক্ষুব্ধ’, যদিও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার ‘ভালো সম্পর্ক’ রয়েছে।
শুক্রবার সেইন্ট পিটার্সবার্গে মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ পুতিনের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, এই বৈঠক চলেছে চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে।
“আমার মনে হয় আমরা হয়তো এমন কিছুর দ্বারপ্রান্তে আছি যা সমগ্র বিশ্বের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে,” ফক্স নিউজকে সোমবার এমনটাই বলেছেন উইটকফ।
এদিকে সুমিতে রাশিয়ার হামলার আগে জেলেনস্কি সিবিএস নিউজের এক অনুষ্ঠানে মস্কোর সঙ্গে যে কোনো চুক্তি করার আগে ট্রাম্পকে ইউক্রেইনে ঘুরে যাওয়ার আমন্ত্রণ করেছিলেন।
“কোনো সিদ্ধান্ত, বা যে কোনো ধরনের দরকষাকষির আগে দয়া করে এসে জনগণ, বেসামরিক নাগরিক, যোদ্ধা, হাসপাতাল, গির্জা, বিপর্যস্ত শিশু ও মৃতদের দেখে যান,” বলেছেন তিনি।
সুমিতে হামলা নিয়ে পরে রাশিয়া জানিয়েছে, তারা ইউক্রেইনের সেনাদের জড়ো হওয়ার স্থান লক্ষ্য করে দুটি ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, যা অন্তত ৬০ সেনার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। তারা অবশ্য এ ভাষ্যের সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ হাজির করেনি।