এ হামলা যুদ্ধাপরাধ হতে পারে বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার কর্মকর্তারা মন্তব্য করেছেন।
Published : 02 Nov 2023, 09:35 AM
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস পরিচালিত গাজা ভূখণ্ডের সরকার জানিয়েছে, জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলের হামলায় ১৯৫ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
এ হামলা যুদ্ধাপরাধ হতে পারে বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ইসরায়েলি বোমায় বিধ্বস্ত গাজায় আটকা পড়া আরও অনেক বিদেশি নাগরিক বৃহস্পতিবার অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটি ছাড়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
এর আগে ইসরায়েল, মিশর ও হামাসের মধ্যে হওয়া চুক্তির আওতায় বুধবার প্রায় ৮৮ জন গুরুতর আহত গাজাবাসী ফিলিস্তিনি এবং ৫০০ জনের প্রাথমিক তালিকায় থাকা অন্তত ৩২০ জন বিদেশি নাগরিক সীমান্ত পার হয়ে মিশরে প্রবেশ করেন।
এদিন গাজা থেকে যারা মিশরে প্রবেশ করেছেন তাদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, অষ্ট্রিয়া, বুলগেরিয়া, চেক রিপাবলিক, ফিনল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, জর্ডান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারীরা ছিলেন।
গাজার সীমান্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আরও বিদেশিরা যেন গাজা ছাড়তে পারেন তার জন্য বৃহস্পতিবার রাফাহ সীমান্ত ক্রসিংটি ফের খোলা হবে।
একজন কূটনৈতিক রয়টার্সকে জানিয়েছেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ৭৫০০ বিদেশি পাসপোর্টধারী গাজা ছাড়তে পারেন।
৭ অক্টোবর হামাসের ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা গাজার সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে সবাইকে হতবাক করে দেয়। ইসরায়েল জানিয়েছে, এই হামলায় ১৪০০ জন নিহত হয়েছে যাদের অধিকাংশ বেসামরিক আর হামাসের যোদ্ধারা ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে ধরে নিয়ে গিয়ে বন্দি করে রেখেছে।
এরপর থেকে হামাসকে নির্মূল করার প্রত্যয় নিয়ে গাজায় স্থল, জলপথ ও আকাশপথে ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৩৬৪৮ শিশুসহ অন্তত ৮৭৯৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা মঙ্গলবার ও বুধবার গাজার বৃহত্তম শরণার্থী শিবির জাবালিয়ায় হামলা চালিয়ে হামাসের দুই সামরিক নেতাকে হত্যা করেছে।
ইসরায়েল অভিযোগ করে বলেছে, “শরণার্থী শিবিরটির বেসামরিক ভবনগুলোতে, সেগুলোর চারপাশে ও নিচে হামাসের কমান্ড সেন্টার ও অবকাঠামো ছিল, তারা সচেতনভাবে গাজার বেসামরিকদের বিপদগ্রস্ত করেছে।”
গাজার হামাস পরিচালিত তথ্য মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জাবালিয়ায় ইসরায়েলের দুইবারের হামলায় অন্তত ১৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং আরও ১২০ জন ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ রয়েছে, অন্তত ৭৭৭ জন আহত হয়েছে।
বুধবার ফিলিস্তিনিরা আটকাপড়া লোকজনকে উদ্ধারের চেষ্টায় বেপরোয়াভাবে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ঢুকে পড়ছিল। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “এটি একটি গণহত্যা।”
জাতিসংঘের মানবাধিকার কর্মকর্তারা জাবালিয়ায় ইসরায়েলের এই বিমান হামলায় বহু বেসামরিক হতাহত ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হওয়ায় একে ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ হামলা’ অভিহিত করে এটি একটি যুদ্ধাপরাধ হতে পারে বলে সামাজিক মাধ্যমে মন্তব্য করেছেন।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, বুধবার গাজায় তাদের এক সেনা নিহত হয়েছে আর আগের দিন মঙ্গলবার নিহত হয়েছিল ১৫ জন।
বৃহস্পতিবারের প্রথম কয়েক ঘণ্টায়ও গাজা নগরীর আল-কুদস হাসপাতালের আশপাশের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে। এই হাসপাতালকে সতর্ক করে এখান থেকে অবিলম্বে সবাইকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সবাইকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে গেলে রোগীদের জীবন বিপন্ন হবে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন:
নেই পানি-শৌচাগার, ওষুধ খেয়ে ঋতুস্রাব আটকে রাখছেন গাজার নারীরা