কঠোর এ আইনের ফলে বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী শীর্ষ কোম্পানি গ্রাহকদের ইচ্ছেমতো পরিষেবা বাছাই করার সুযোগ দিতে বাধ্য হবে।
Published : 11 Mar 2024, 04:53 PM
ইউরোপীয় ইউনিয়নের যুগান্তকারী ‘ডিজিটাল মার্কেটস অ্যাক্ট’ বা ডিএমএ মেনে চলার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানি নিজেদের মূল অনলাইন পরিষেবাগুলো পুনর্গঠন করছে। আর এসব পরিবর্তন কিছু ছোট প্রতিদ্বন্দ্বী, এমনকি সমবয়সী কোম্পানিগুলোর জন্য প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে।
ইউরোপের ডিএমএ আইনটি শীর্ষ সব প্রযুক্তি কোম্পানির লাগাম টানার প্রথম প্রচেষ্টা বলে প্রতিবেদনে লিখেছে রয়টার্স। এসব কোম্পানির মধ্যে রয়েছে, গুগলের মালিক অ্যালফাবেট, জেফ বেজোসের অ্যামাজন, আইফোন নির্মাতা অ্যাপল, টিকটকের মালিক বাইটড্যান্স, মেটা প্ল্যাটফর্মস ও মাইক্রোসফট।
কঠোর এ আইনের ফলে বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী শীর্ষ কোম্পানি গ্রাহকদের ইচ্ছেমতো পরিষেবা বাছাই করার সুযোগ দিতে বাধ্য হবে।
“এখানে জয়টা হবে ইউরোপীয় ছোট ছোট ব্যবসার যারা বড় কোম্পানিগুলোর চেয়ে বেশি বিকল্প পাবে ও দৃশ্যমান হবে।” – বলেন উপদেষ্টা কোম্পানি ডিজিটাল কম্পিটিশনের ক্রিস্টফ কারুগাতি।
উদাহরণ হিসাবে, মেটা’র ‘মেসেঞ্জার’ ও ‘হোয়াটসঅ্যাপ’ মেসেজিং পরিষেবা ‘ইন্টারঅপারেবল’ করতে হবে বা যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে একত্রে চালাতে হবে, যতক্ষণ কোম্পানিগুলো মেটার প্রযুক্তিগত ও নিরাপত্তা মান বজায় রাখছে।
বাস্তবে, এর অর্থ হল, অন্যান্য মেসেজিং পরিষেবা যেমন ‘সিগন্যাল’ ও ‘টেলিগ্রাম’ এর মতো অ্যাপের ব্যবহারকারীরা অ্যাপ না বদলেই মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে পরিচিত মানুষদের সঙ্গে চ্যাট করতে পারবেন।
এ আইনের ‘কমপ্লায়েনস’ বা সম্মতি প্রতিবেদনে মেটা লিখেছে, ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা ও প্রাইভেসিকে গুরুত্ব দিয়ে মেটার সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী থার্ড-পার্টি পরিষেবা কোম্পানিগুলোর জন্য একটি কার্যকর পদ্ধতি তৈরির মাধ্যমে ভারসাম্য বজায় রাখছেন তারা।
একইভাবে, গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারকারীরা ডিভাইস সেট আপ করার সময় ‘ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন’ বাছাই করার সুযোগ পাবেন, যা প্রাইভেসিভিত্তিক সার্চ ইঞ্জিন ‘ডাকডাকগো’ ও জার্মানির পরিবেশ সচেতন সার্চ ইঞ্জিন ‘ইকোসিয়ার’ মতো বিকল্পগুলোর জন্য বড় সুযোগ তৈরি করবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে রয়টার্স।
“নতুন নিয়মের বাস্তবায়ন সঠিক পদক্ষেপ। তবে, এর কাজের মাধ্যমে ও আমরা বাজারের শেয়ারে কোনও অর্থবহ পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি কিনা তার ওপরে নির্ভর করছে এর সাফল্য” বলেছেন ইকোসিয়ার পাবলিক পলিসি প্রধান সোফি ডেমবিনস্কি৷
পাশাপাশি, এর মাধ্যমে ইইউ’র ভোক্তারাও নতুন প্রাইভেসি সুরক্ষা পেয়েছেন। এ কোম্পানিগুলো কীভাবে ব্যবহারকারীদের তথ্য ব্যবহার করবে তার ওপরেও ডিএমএ নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
অ্যাপ স্টোর যুদ্ধ
ডিএমএ কেবল ছোট স্টার্ট আপ কোম্পানিগুলোকেই সুবিধা দিচ্ছে না, বরং এর ফলে শীর্ষ টেক জায়ান্টরাও একে অন্যের শেয়ারে ভাগ বসাতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে রয়টার্স।
অ্যাপল সম্ভবত ডিএমএ আইনের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝামেলায় পড়েছে। কারণ, এ আইনের ফলে নিজস্ব লাভজনক অ্যাপ স্টোর উন্মুক্ত করতে বাধ্য হচ্ছে আইফোন নির্মাতা কোম্পানিটি। আর এমন সুযোগ বড় বড় টেক কোম্পানি থেকে শুরু করে ছোট স্টার্ট-আপ কোম্পানিগুলোও লুফে নিতে চাইবে বলে উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।
ডিএমএর অধীনে, নিজস্ব অ্যাপ স্টোরের বাইরে গিয়ে সফটওয়্যার নির্মাতাদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের ব্যবহারকারীদের কাছে অ্যাপ বিতরণ করার অনুমতি দিতে হবে অ্যাপলকে।
অ্যাপল সতর্ক করেছে আইওএস মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম, সাফারি ওয়েব ব্রাউজার ও অ্যাপ স্টোরের এসব পরিবর্তন ব্যবহারকারী ও নির্মাতাদের জন্য ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে কারণ, এ পদ্ধতিতে আইফোনে অ্যাপ ডাউনলোড করলে ম্যালওয়্যার, অবৈধ ও ক্ষতিকর কনটেন্টসহ অন্যান্য সুরক্ষা লঙ্ঘনের নতুন উপায় তৈরি হতে পারে।
তবে, অ্যাপলের সমালোচকরা বলছেন কোম্পানিটি কেবল নিজের লাভ রক্ষা করতে চায় কারণ অ্যাপ স্টোরের কেনাকাটায় অন্তত ৩০ শতাংশ কমিশন পায় তারা।