ডার্ক ওয়েব মার্কেট ‘জেনেসিস’ জব্দ, গ্রেপ্তার শতাধিক

জেনেসিসে বিভিন্ন ডিজিটাল পণ্য বিক্রি হতো। বিশেষ করে, বিভিন্ন ক্ষতিকারক সফটওয়্যারের মাধ্যমে আক্রান্ত কম্পিউটার থেকে চুরি করা ‘ব্রাউজার ফিঙ্গারপ্রিন্ট’।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 April 2023, 08:50 AM
Updated : 6 April 2023, 08:50 AM

সাইবার অপরাধীদের কাছে জনপ্রিয় এক বিস্তৃত ডার্ক ওয়েব মার্কেটপ্লেস  জব্দ করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। একাধিক দেশের সহায়তায় চালানো এই ক্র্যাকডাউনকে ডাকা হচ্ছে ‘অপারেশন কুকি মনস্টার’ নামে।

মঙ্গলবার দিনশেষে ‘জেনেসিস মার্কেট’ নামের ওই সাইটে এক প্লাস্টার করা ব্যানারে উল্লেখ করা হয়, এই সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন ডোমেইন এফবিআই জব্দ করেছে। এমনকি গোটা সাইটে সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানি ‘কুইন্টেল’সহ ইউরোপীয়, কানাডীয় ও অস্ট্রেলীয় আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার লোগোও দেখা যায়।

গেল বুধবার এই আন্তর্জাতিক কর্মযজ্ঞ পরিচালনার কথা জানায় যুক্তরাজ্যের ‘ব্রিটিশ ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)’।

“আমাদের মূল্যায়ন বলছে, জেনেসিস বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটপ্লেস।” --বলেন এনসিএ’র ‘থ্রেট লিডারশিপ’ বিভাগের মহাপরিচালক রব জোন্স।

এনসিএ’র অনুমান বলছে, ২০ লাখের বেশি ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় আট কোটি পরিচয়পত্র ও ডিজিটাল আঙ্গুলের ছাপ চুরি করেছে এই পরিষেবা।

মার্কিন বিচার বিভাগের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল লিসা মোনাকো এক বিবৃতিতে বলেন, মঙ্গলবার ওই ফোরামের অনেক ব্যবহারকারীই গ্রেপ্তার হয়েছে।

এফবিআই’র এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রে এই গ্রেপ্তার কার্যক্রম পরিচালনার কথা নিশ্চিত করলেও এই সম্পর্কে আর কোনো তথ্য দিতে রাজী হননি। জেনেসিসের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম এখনও চলমান।

এক বিবৃতিতে এই মার্কেটপ্লেসের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়ে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ একে ‘পরিচয়পত্র ও অন্যান্য স্পর্শকাতর তথ্য চুরির সবচেয়ে পরিচিত দালাল’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ বলেছে, এই অপারেশনে জড়িত ছিল ১৭টি দেশ। এর নেতৃত্ব দিয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই ও ‘ডাচ ন্যাশনাল পুলিশ’। এর ফলাফল হিসেবে প্রায় একশ ২টি গ্রেপ্তার, দুইশ’র বেশি তল্লাশী ও প্রায় একশটির বেশি ‘প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম’ পরিচালিত হওয়ার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।

এই প্রসঙ্গে রয়টার্স কিন্টেলের মন্তব্য জানতে চেয়েও পায়নি। এ ছাড়া, জেনেসিস মার্কেটের অ্যাডমিনিস্ট্রেটরদের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্যও পায়নি রয়টার্স, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের অনুমান এটি সম্ভবত রাশিয়া থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করছিল।

ব্রিটিশ সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানি ‘সার্চলাইট সাইবার’-এর বিশ্লেষক লুইজ ফেরেট বলেন, জেনেসিসের বিশেষত্ব হলো বিভিন্ন ডিজিটাল পণ্য বিক্রি করা। বিশেষ করে, বিভিন্ন ক্ষতিকারক সফটওয়্যারের মাধ্যমে আক্রান্ত কম্পিউটার থেকে ‘ব্রাউজার ফিঙ্গারপ্রিন্ট’ চুরি করা।

তিনি আরও বলেন, এইসব ফিঙ্গারপ্রিন্টে প্রায়ই বিভিন্ন পরিচয়পত্র, কুকি, ইন্টারনেট প্রোটোকল ঠিকানা ও অন্যান্য ব্রাউজার বা অপারেটিং সিস্টেমের বিস্তারিত তথ্য থাকায় অপরাধীরা একাধিক স্তরের প্রমাণীকরণ বা ডিভাইস ফিঙ্গারপ্রিন্টিং এড়ানোর মতো বিভিন্ন জালিয়াতি বিরোধী সমাধানের জন্য এগুলো ব্যবহার করতে পারে।

সাইটটি ২০১৮ সাল থেকেই সক্রিয় ছিল।

এনসিএ বলেছে, চুরি করা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে জেনেসিস ৭০ সেন্ট থেকে শুরু করে হাজারের বেশি ডলার পর্যন্ত দামে বিভিন্ন পরিচয়পত্র বিক্রি করতো।

সংস্থাটি বলেছে, এই তদন্তে জড়িত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, আইসল্যান্ড, ইতালি, নিউ জিল্যান্ড, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, স্পেন, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ড।