এর আকার ইংল্যান্ডের ‘লন্ডন আই’-এর অর্ধেক, যা লাখ লাখ বছর ধরে এমন এক মহাকাশ কক্ষপথ পরিক্রমণ করছে, যার মিল রয়েছে পৃথিবীর কক্ষপথের সঙ্গে।
Published : 09 May 2024, 04:38 PM
বিশেষ একটি গ্রহাণু যে চাঁদ থেকেই ছিটকে গিয়েছে সেটি শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত হয়েছেন গবেষকরা। একে দেখা হচ্ছে যুগান্তকারী বিজ্ঞানভিত্তিক অগ্রগতি হিসাবে।
চাঁদ থেকেই কোনো গ্রহাণু তৈরি হয়েছে এমন আবিষ্কারের প্রথম ঘটনা এটি। আর গ্রহাণুটিকে ডাকা হচ্ছে ‘কামো'ওলেওয়া’ নামে, যেটি যেখান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে সেখানে একটি গর্ত রয়েছে।
গ্রহাণুটির আকার ইংল্যান্ডের ‘লন্ডন আই’-এর অর্ধেক। এটি লাখ লাখ বছর ধরে এমন এক মহাকাশ কক্ষপথ পরিক্রমণ করছে, যেটির মিল রয়েছে পৃথিবীর কক্ষপথের সঙ্গে।
বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার অ্যাস্ট্রোনমি’-তে প্রকাশিত এ গবেষণায় দেখা যায়, গ্রহাণুটি সম্ভবত চাঁদের দূরবর্তী দিকে অবস্থিত ‘জিওর্দানো ব্রুনো’ নামের গর্ত বা জ্বালামুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে।
প্রায় ৪০ লাখ বছর পুরোনো এ গর্তটির প্রস্থ ২২ কিলোমিটারের বেশি। এর আকার ও বয়স বিবেচনায় নিয়ে গবেষকরা বলছেন, গ্রহাণুটি ওই গর্ত থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়েছে এমন সিদ্ধান্তে আসার প্রয়োজনীয় সব শর্তই নিখুঁতভাবে মিলে যায় এখানে।
কীভাবে চাঁদে আঘাত হানা প্রভাবক ‘কামো'ওলেওয়া’কে মহাকাশে পাঠাতে পারে, সেটি বুঝতে এ গবেষণায় বিভিন্ন আধুনিক মডেল ব্যবহার করেছেন বিজ্ঞানীরা।
তাদের ফলাফল বলছে, এমনটি ঘটতে এমন বড় আকারের সংঘর্ষ প্রয়োজন ছিল, যা চাঁদের পৃষ্ঠের গভীর থেকে মহাকাশে শিলা বিস্ফোরণে সক্ষম।
এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, ‘কামো'ওলেওয়া’ কীভাবে পৃথিবীর পাশাপাশি সূর্যের চারপাশেও আবর্তন করতে পেরেছিল।
এর আগের বিভিন্ন গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, ‘কামো'ওলেওয়া’র উৎপত্তি চাঁদে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ, এর মূল উপাদানের গঠনপ্রক্রিয়ায় মহাকাশের গতানুগতিক গ্রহাণুর চেয়ে চাঁদের সঙ্গে বেশি মিল পাওয়া যায়।
তবে, নতুন এ গবেষণা সেইসব সন্দেহ দূর করে নিশ্চিত করেছে, ‘কামো'ওলেওয়া’ আসলে চাঁদেরই একটি খণ্ড।
এ আবিষ্কারটি শুধু একটি বিজ্ঞানভিত্তিক কৌতূহল মেটানোই নয়, বরং এর বিস্তৃত প্রভাব থাকতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ। যেমন– কীভাবে চাঁদ থেকে বিভিন্ন গ্রহাণু বের হয়ে অক্ষত থাকতে পারে, তা বোঝা। বিজ্ঞানীদেরকে গ্রহগুলোর মধ্যে প্রাণের ভ্রমণের সম্ভাবনা গবেষণায় সাহায্য করতে পারে। আর এ তত্ত্বটি ‘প্যানস্পারমিয়া’ নামে পরিচিত।
এ ছাড়াও, এ গবেষণার বিভিন্ন ফলাফল পৃথিবীতে গ্রহাণু আঘাত হানার পুর্ব প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। আর এ ধরনের সংঘর্ষ আমাদের গ্রহে কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে, সে সম্পর্কেও নতুন ধারণা মেলে এতে।
এদিকে চীনের আসন্ন ‘তিয়ানওয়েন-২’ মিশনের লক্ষ্য হল, ‘কামো'ওলেওয়া’ থেকে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করা যাতে এর উৎস শনাক্ত করার পাশাপাশি চাঁদে ‘স্পেস ওয়েদারিং’-এর প্রভাব নিয়ে গবেষণা করা যায়। একইভাবে, চাঁদ থেকে আসা বিভিন্ন গ্রহাণু সন্ধানে ‘নিও সারভেয়ার’ নামে এক মিশন পরিচালনা করবে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।
গ্রহাণুর উৎস খুঁজে পাওয়া এই যুগান্তকারী গবেষণা দলে কাজ করেছেন ‘সিনহুয়া ইউনিভার্সিটি’, ‘ইউনিভার্সিটি অফ অ্যারিজোনা’ ও বিশ্বের অন্যান্য ইউনিভার্সিটি’র বিশেষজ্ঞরা, যা থেকে মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্ব ফুটে ওঠে।
গবেষণাটি শুধু পৃথিবীর কাছাকাছি থাকা বিভিন্ন গ্রহাণু বোঝার ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ই শুরু করেনি, বরং চাঁদের ইতিহাস ও পৃথিবীর সঙ্গে এর মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে প্রচলিত জ্ঞান বাড়িয়ে তোলার সম্ভাবনা দেখায় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।