দিন দিন বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে যে, এমন ‘সুপারম্যাসিভ’ ব্ল্যাক হোল গোটা মহাবিশ্বেই ছড়িয়ে আছে।
Published : 08 Mar 2024, 01:29 PM
আকাশে দেখতে পাওয়া লাল রঙের বিন্ধুগুলো আসলে ছোট আকৃতির ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর --এমনই দাবি বিজ্ঞানীদের।
গবেষকরা বলছেন, দূরের মহাবিশ্বে থাকা এইসব ক্ষুদ্র বিন্দু বিশালাকারের কৃষ্ণগহ্বরের গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে মানুষের প্রচলিত ধারণা বদলে দেওয়ার পাশাপাশি এর বিভিন্ন রহস্যও উদ্ঘাটন করতে পারে।
এই ক্ষুদ্র লাল বিন্দুগুলো দেখতে শুরুর দিকে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করেছেন বিজ্ঞানীরা। ওই ছবিতে এদেরকে সাধারণ ছায়াপথের মতোই দেখা গেছে।
ধারণা পাল্টে গেছে নাসার নতুন জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের সহায়তা নেওয়ার পর। অনেক বেশি ক্ষমতার এই টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া নতুন সব ছবি দেখে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এগুলো আদতে বিভিন্ন বিশালাকার ব্ল্যাক হোলের ‘শিশু সংস্করণ’।
“জেমস ওয়েব এ নির্দিষ্ট কাজের জন্য তৈরি করা না হলেও এটি আমাদেরকে সেইসব ছোট লাল বিন্দুর পরিচয় জানাতে সাহায্য করেছে, যেগুলোর অবস্থান দূর অতীতের কোনও মহাবিশ্বে। আর এগুলো বিশালাকারের ব্ল্যাক হোলের ছোট সংস্করণ। আর এই বিশেষ বস্তুগুলো ব্ল্যাক হোলের উৎপত্তি নিয়ে প্রচলিত ধারণা বদলে দিতে পারে,” বলেছেন ‘ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অস্ট্রিয়া’র গবেষক জরিট ম্যাথি।
“এ অনুসন্ধান আমাদেরকে জোতির্বিদ্যার অন্যতম ধাঁধার জবাব দেওয়ার এক ধাপ কাছে নিয়ে যাবে: বর্তমান মডেলের তথ্য অনুসারে, মহাবিশ্বের আদিকালে কয়েকটি সুবিশাল ব্ল্যাক হোল ‘খুব দ্রুতই’ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে প্রশ্ন হল, এগুলো গঠন হল কী করে?”
এ রহস্যের জট খুলতে গিয়ে কেউ কেউ এদের অস্ত্বিত্ব নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তবে দিন দিন বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে যে, এমন ‘সুপারম্যাসিভ’ ব্ল্যাক হোল গোটা মহাবিশ্বেই ছড়িয়ে আছে।
প্রচলিত ধারণা হল, প্রতিটি বড় ছায়াপথের কেন্দ্রেই একটি কৃষ্ণগহ্বর থাকে, যা পৃথিবী যে ছায়াপথে অবস্থিত অর্থাৎ মিল্কিওয়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আর এদের ভর সূর্যের ভরের চেয়েও কয়েকশ কোটি গুণ বেশি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
তবে, কিছু কিছু কৃষ্ণগহ্বর মিল্কিওয়ের ‘স্লিপিং জায়ান্ট ব্ল্যাক হোল’ বা ঘুমন্ত কৃষ্ণগহ্বরের চেয়ে বেশি সক্রিয়। আর এরা মহাবিশ্বের বড় বড় বস্তু গিলে খেয়ে খুবই উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে, যা মহাকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু অর্থাৎ ‘কোয়াসার’ নামে পরিচিত।
এর মধ্যে কিছু কোয়াসার এতটাই বড় যে, এদের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিজ্ঞানীরা এদের আখ্যা দিয়েছেন ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলে কারণ এরা ধারণার চেয়েও দ্রুতগতিতে বেড়ে উঠেছে।
ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন অনুসন্ধানে পাওয়া বস্তুগুলো সে ত্রুটির বিশ্লেষণে সাহায্য করতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এরা দেখতে ‘বেবি কোয়াসারের মতো’, যাদের ভর অনেক কম ও ত্রুটিপূর্ণ কোয়াসারের চেয়ে এদের রংও আলাদা।
ত্রুটিপূর্ণ কোয়াসারের রং নীল, যেগুলো একটু বেশিই উজ্জ্বল ও আকারে সূর্যের চেয়ে কয়েকশ কোটি গুণ বড় হতে পারে। অন্যদিকে, লাল রঙের বিন্দুগুলো হয়ত ১০টি সূর্যের সমান ও এদের লাল রঙের কারণ হতে পারে আশপাশে থাকা ধূলিকণা।
তবে গবেষকরা হয়ত এখন ট্র্যাক করতে পারবেন, এগুলো কীভাবে ত্রুটিপূর্ণ উজ্জ্বল নীল রঙের কোয়াসারে পরিণত হয়ে থাকে।
“বিশাল কৃষ্ণগহ্বরের শিশু সংস্করণগুলোর ওপর গবেষণা চালালে আমরা এইসব ত্রুটিপূর্ণ কোয়াসারের অস্তিত্ব সম্পর্কে আরও বিস্তারিত ধারণা পেতে পারি,” বলেন ম্যাথি।
অনুসন্ধানগুলো উঠে এসেছে ‘লিটল রেড ডটস: অ্যান অ্যাবান্ডান্ট পপুলেশন অফ ফেইন্ট অ্যাক্টিভ গ্যালাক্টিক নিউক্লেই (এজিএন) অ্যাট জি ~ ফাইভ রিভিলড বাই দ্য এল্গার অ্যান্ড ফ্রেস্কো জেডব্লিউএসটি সার্ভেইস’ শীর্ষক নতুন এক গবেষণাপত্রে, যা প্রকাশ পেয়েছে ‘অ্যাস্ট্রোফিসিকাল জার্নাল’-এ।