“প্রবালদ্বীপগুলো চমৎকার কোলাহলপূর্ণ জায়গা। তবে, যেসব জায়গায় এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা অতিরিক্ত মাছ ধরা পড়ে, সেইসব জায়গাগুলো প্রাণের অভাবে শান্ত হয়ে যায়।”
Published : 19 Apr 2023, 04:57 PM
প্রবালদ্বীপ পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে আগ্রহী ব্যক্তিদের কাছে সহায়তা চেয়েছে সার্চ জায়ান্ট গুগল। নতুন এই প্রকল্পকে ডাকা হচ্ছে ‘কলিং ইন আওয়ার কোরালস’ নামে।
অভিনব এক প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন এই প্রকল্পের উদ্যোক্তরা- নিজের ঘরে বসে অডিও রেকর্ড শুনেই নষ্ট হয়ে যাওয়া বা ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাল নতুন করে ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখতে পারবেন যে কেউ।
নতুন এই প্রকল্পের যৌথ উদ্যোক্তা সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী স্টিভ সিম্পসন ও পরিবেশবিদ ম্যারি শদিপো। এর লক্ষ্য হলো, এআই’কে জলজ প্রাণির শব্দ চেনার প্রশিক্ষণ দিতে মানুষের সহায়তা নেওয়া। এর মাধ্যমে সমুদ্রে থাকা বিভিন্ন ত্রুটিপূর্ণ আবাসস্থল নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সেগুলো পূরণের লক্ষ্যও রয়েছে তাদের।
জলবায়ু পরিবর্তন, অতিরিক্ত মাছ ধরা ও দূষণের মতো সমস্যাগুলোর কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রবাল দ্বীপ দ্রুতই কমে যাচ্ছে।
বিশ্বের দ্রুত পরিবর্তনশীল বায়ুমণ্ডলে পানির তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন প্রবাল তাদের সঙ্গে থাকা মিথোজীবী (যারা পরস্পরের উপকার করে) শৈবাল ছেড়ে দিতে পারে।
ফলে এরা রোগপ্রবণ হয়ে যেতে পারে এমনকি মৃত্যুর মতো ঝুঁকিতেও পড়তে পারে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা বেড়ে গেলে তা সমুদ্রের পানিকে ‘অম্লীয়’ বা অ্যাসিডিক করে তুলতে পারে। আর এতেও প্রবালের ক্ষতি হয়।
গুগলের নতুন ‘আর্টস অ্যান্ড কালচার’ নামের পরীক্ষায় একটি সহজ জিজ্ঞাসা রয়েছে। তা হলো উচ্চস্বরে চিংড়ির খাওয়ার শব্দ ও নিম্নস্বরে মাছের কুরকুর করে খাওয়ার আওয়াজের পার্থক্য নির্ধারণে কয়েক মিনিট সময় নেওয়া। আর প্রবালদ্বীপ সংরক্ষণের প্রচেষ্টায় পরবর্তীতে ওই নতুন করে পাওয়া জ্ঞান এআই মডেলে ব্যবহার করা।
এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যবহারকারীকে নিজের উইন্ডোজ ব্রাউজার খুলে পানির নীচে রেকর্ড করা বিভিন্ন আওয়াজ শুনতে হবে। আর যখনই মনে হবে যে তিনি কোনো মাছের শব্দ শুনতে পাচ্ছেন, তখন স্ক্রিনের ওপরে থাকা বাটনে চাপ দিতে হবে। এভাবে অনেক মানুষ অডিও রেকর্ডে মাছের আওয়াজ শনাক্ত করতে সহায়তা করতে পারেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে এনগ্যাজেট।
“প্রবালদ্বীপগুলো চমৎকার কোলাহলপূর্ণ জায়গা। তবে, যেসব জায়গায় এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা অতিরিক্ত মাছ ধরা পড়ে, সামুদ্রিক প্রাণির অভাবে সেইসব জায়গা শান্ত হয়ে যায়।” --বলেন সিম্পসন।
“কয়েকটি জায়গায় আমাদের গবেষণার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন সামুদ্রিক সুরক্ষিত এলাকা যেখানে মাছ ধরার সুযোগ নেই ও এর কাছাকাছি বিভিন্ন মাছ ধরার জায়গা তুলনা করার জন্য উভয় স্থানে সাউন্ড রেকর্ডার স্থাপন করা।
আমরা সেইসব সাইট তুলনা করছি, যেগুলো অতিরিক্ত মাছ ধরা ও নিম্নমানের পানির কারণে হারিয়ে গেছে। আর এর সঙ্গে তুলনা করছি যেসব স্থানে আমরা সক্রিয়ভাবে প্রবাল প্রতিস্থাপন ও আবাসস্থল পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে প্রবালদ্বীপ পুনরুদ্ধার করছি, সে জায়গাগুলো।”
“আমাদের এতো অডিও রেকর্ড আছে যে একজন ব্যক্তি শুনে শেষ করতে পারবেন না। আর এখানেই আসে আপনার ভূমিকা রাখার প্রসঙ্গ।” --ব্যাখ্যা করেন সিম্পসন।
“পরবর্তীতে আপনার ডেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাছের শব্দ শোনা ও কম্পিউটারের প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে।”
দলটির ধারণ করা অডিও রেকর্ডগুলো তৈরি হয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, যুক্তরাষ্ট্র, পানামা ও সুইডেনের মতো দেশগুলোর ১০টি প্রবাল রিফ থেকে।
গবেষকদের আশা, এই প্রকল্প সামুদ্রিক জীবনের কার্যক্রম নিরীক্ষণের সক্ষমতা উন্নত করার পাশাপাশি সেগুলো পুনরুদ্ধারেও সহায়ক হতে পারে।
“নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, ‘আন্ডারওয়াটার স্পিকার’ ব্যবহার করে এগুলো যখন ক্ষতিগ্রস্ত আবাসস্থলে বাজানো হয়, তখন ওই শব্দ সেখানে নতুন করে বিভিন্ন প্রাণিকে ডেকে নিয়ে আসে। এই কারণেই আমরা এই প্রকল্প ও এর সহায়ক অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে ‘কলিং ইন আওয়ার কোরালস’ নামে ডাকা হয়।” --বলেন সিম্পসন।
অন্য কথায়, স্বাস্থকর প্রবালদ্বীপের আওয়াজ বাজালে তা নতুন মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণিকে বিভিন্ন এমন সংরক্ষিত প্রবালের দিকে আকৃষ্ট করতে পারে, যেগুলো মানব শিল্পের ধ্বংসাত্মক পরিবেশগত প্রভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে।
এই উদ্যোগে অবদান রাখতে কেবল কয়েক মিনিট লাগে। এনগ্যাজেট বলছে, এটি হয়তো বিনোদনের শীর্ষ উপায় নয়, তবে ব্রাউজার গেইমের পেছনেও তো আমরা সময় দেই।
এই প্রকল্পের উদ্যোক্তারা জোর দিয়ে বলছেন, এমনকি একটি তিন মিনিটের সেশনে যোগ দিলেও সেটি তাদের প্রচেষ্টার জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। আর ব্যবহারকারী এতে যত বেশি সময় দেবেন (বা অন্যদের এই প্রকল্প সম্পর্কে বলবেন), তিনি ততটাই ভালো কাজে অবদান রাখছেন।